সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং – চাষে ভালো উৎপাদন পেতে অন্যান্য বছরের ন্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সুন্দরবনর বিভিন্ন এলাকার গোরু দৌড় (মই ছাড়া)প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। শনিবার সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার কুলতলি থানার মেরীগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয় ২৯ তম এক গোরু দৌড় প্রতিযোগিতা। স্থানীয় ভাষায় একে ‘মইছাড়া’ বলা হয়ে থাকে। প্রতিবছর এই মইছাড়া প্রতিযোগিতায় স্থানীয় চাষী সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু চাষী তাদের নিজস্ব গোরু নিয়ে অংশ গ্রহণ করেন প্রতিযোগিতায়। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা ও থাকে।
শনিবার কুলতলির মেরীগঞ্জের টাটপাড়া তরুন সংঘ আয়োজিত ২৯ তম বর্ষের দুই দিনের মইছাড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন তরুন সংঘের কর্মকর্তা সিরাজ মোল্লা। এদিন এই খেলায় সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তের ৪০ জোড়া গরু অংশ গ্রহন করে।
সুন্দরবনের চাষিরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন এই গোরুদৌড় প্রতিযোগিতা করলে চাষ ভালো হয়। তাই প্রতিবছর বর্ষার শুরুতে মাঠে জল জমলেই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন স্থানীয় চাষিরা। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করার জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বাসন্তী, ক্যানিং, কুলতলি,জীবনতলা, মগরাহাট,জয়নগর সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষজন উৎসাহিত হয়ে আসেন। একদিকে চাষের আশায় অন্যদিকে চাষের আগে নিজেদের গরুগুলো সুস্থ ও তরতাজা আছে কিনা তা দেখে নেওয়ার জন্য এই আয়োজন বলে জানালেন উদ্যোক্তারা। প্রতিবছর বর্ষার শুরুতে মাঠে জল জমলেই এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।মাঠে হাঁটুখানেক জলের মধ্যে দুই’জোড়া গোরুকে একসাথে একটি মই’য়ের সাথে বেঁধে তাদের ছোটানো হয়। যে জোড়া গোরু অন্য জোড়াকে হারিয়ে নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারবে সেই গোরু জোড়াকেই বিজয়ী বলে ঘোষণা করা হয়। প্রতিযোগিতায় জয়ীদের জন্য নগদ অর্থ সহ স্টিলের আলমারি, বালতি, কলসি, সুটকেস, ফ্যান সহ বিভিন্ন ধরনের পুরস্কার থাকে। এছাড়া ও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য থাকে বিভিন্ন ধরনের শান্তনা পুরস্কার। এই গোরুদৌড় দেখার জন্য সাধারণ মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। এই ‘মইছাড়া’ প্রতিযোগিতার অন্যতম উদ্যোক্তা মেরীগঞ্জ টাটপাড়া তরুণ সংঘের সম্পাদক সিরাজুল মোল্লা বলেন, “ আমাদের এই প্রত্যন্ত গ্রামে সেভাবে কোন সাধারণ মানুষের মনোরঞ্জন নেই। তাছাড়া আমাদের চাষীরা মনে করেন এই মইছাড়া করলে চাষ হয়। চাষের গরুগুলি ঠিক আছে কিনা সেগুলি ও দেখে নেওয়া যায়। তাই আমরা প্রতিবছর এই গরুদৌড় প্রতিযোগিতা করে থাকি। বিগত দুবছর করোনা তান্ডবে প্রতিযোগিতা বন্ধ ছিলো। সাধারণ মানুষ হতাশগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলে।প্রতিযোগীতা চলবে রবিবার পর্যন্ত।’