“মা, কোথায় তুমি? “
“এই তো কিচেনে। “
“দূর, কিচেন বা রান্নাঘর বলে ওকে ডি-ক্যাটিগোরাইজড কোরো না। ও তো তোমার আরাধনা স্থল। “
“এতদিনে তোর সত্য উপলব্ধি ঘটলো তিতির। এ আমার আরাধনা স্হলই বটে। এখানকার উপাচারে তোদের পেট পুজো করি যে। শুধু উপাচারের পার্থক্য- ফুল ধুপধুনোর বদলে আনাজপত্তর, লঙ্কা হলুদ , ধনে, জিরে অরগ্যানিক চিনি, নানান সস; গঙ্গার জলের বদলে আতর- গোলাপ জল। বেলপাতা বা তুলসী পাতার বদলে তেজপাতা, ধনেপাতা, পুদিনা পাতা, আর পেঁয়াজ শাক কে অনায়াসে দুর্বল দুব্বো ঘাস বলাই যেতে পারে, তাই নয় কি? “
“দূর এসো না ডাইনিং টেবিলে, একটা জরুরি আলোচনা আছে। “রোস বাপু একটু, লুচিকটা ভেজে আসছি। ঘি জ্বলছে। আলুর ছেঁচকি করে রেখেছি। “
“দূর, গ্যাস অফ করো। লুচি লাগবে না আমার। “
“ওমা সে কি! কলেজ থেকে ফিরে কিছু খাবি না? কণিষ্কের সাথে রেস্তোরাঁ থেকে গিলে কেটে এসেছিল বুঝি? “
“ওহো তুমি না! খালি কৈফিয়ত তলব। “
“তা তো দিতেই হবে মাকে তিতির। “
“কিন্তু আজ তিতির যে মায়ের কাছে কিছু জানতে চায়। “
“বেশ তো, লুচি ক’খান করে এক্ষুনি আসছি। রোস না বাপু একটু। “
“না বেরোও রান্নাঘর থেকে। না হলে কিন্তু দক্ষযজ্ঞ বাঁধাবো। “
“বলিহারি যাই মেয়ের! কি এমন কথা, দু মিনিট বাদে বললে চলছিল না? “
“মা জানো, কলেজে ফিজিক্সের একজন প্রোফেসর এসেছেন কয়েক দিন হলো। কি হ্যান্ডসাম মা, ভাবতে পারবে না। তা’ আজ কলেজে স্টুডেন্ট ভার্সেস প্রোফেসর ক্রিকেট খেলা ছিল। কি দুর্দান্ত যে ফিজিক্সের স্যার ব্যাট করলেন, জাস্ট ভাবতে পারবে না! একা কুম্ভই, প্রায় বৃদ্ধ প্রোফেসর টিমকে জিতিয়ে দিলেন। কি এনার্জি! স্টুডেন্ট টিম খাবি খাচ্ছে। হিহিহি। স্যার যেনো লগনের আমীর খান। “
“তা’ সেই স্যারের প্রেমে পড়লি না কি? “
“আমার একা প্রেমে পড়লে চলবে? একতরফা প্রেম কবে সফল হতে দেখেছ? “
“তা বয়েস কত তোর ফিজিক্সের স্যারের? “
“আমার থেকে বেশ খানিকটা বড়ো। তবে তাতে কিছু যায় আসে না। স্যারের বিয়ে হয়েছে কি না জানতে হবে। যদি বিয়ে হয়ে থাকে, তবে ব্যাকফুটে খেলতে হবে। কারুর ঘর ভাঙা ঠিক নয়। “
“নাঃ আমার মেয়ে টা ইয়ারকি মারতে ওস্তাদ একেবারে।
তিতির তোর সাথে খোলাখুলি সব আলোচনা করি বলে এমন ইয়র্কার বল তুই আমাকে দিতে পারিস না। দ্যাখ আমার বুক ধড়ফড় করছে। “
“ওমা, , তুমি আমাকে খোলামেলা ভাবে বেড়ে উঠতে দিয়েছ। স্বাধীনতার মর্মার্থ বুঝিয়েছ। বয়েস বা অন্যান্য যে কিছু
যে ভালোবাসার পথে বাধা হতে পারে না, এ বিশ্বাস তুমি আমার মনে গড়ে দিয়েছ।তবে আজ কেন আঁতকে উঠছে মা? সে কি আমি তোমার মেয়ে বলে? অসম বয়েসের বিয়ে মেনে নিতে পারছ না, সে কি শুধু আমি তোমার মেয়ে বলে? “
“না, তা কেনো? আমি তো তোকে স্বাধীনতা যেমন দিয়েছি, তেমনি বারবার বলেছি, স্বাধীনতার সীমানা ছাড়ানোও স্বৈরাচার। “
“আমি তো স্বেচ্ছাচারিতা করব বলিনি। বলেছি খবর নেব স্যার বিবাহিত কিনা। আমি কারুর সংসার যেমন ভাঙব না, তেমনি বিবাহ বহির্ভূত পরকীয়া সম্পর্কও রাখব না কারুর সাথে। ভালবাসা নিজের বুকে জমিয়ে রেখে নিজের জন্য একটা আলাদা জীবনবৃত্ত গড়ে তুলব। ভয় পেয়ো না মা”।
“ভয় পাবো না কি রে? তোর বাবা শুনলে রাগারাগি করবে। “
“মা, বাবার ব্যাপার আমি বুঝে নেব। “
“তিতির তোর স্যারের বয়েস কত? বিবাহিত না হলে যে বিয়ে করবি বলছিস, তা মানানসই হবে তো? “
“একদম না, বরং স্যারের সাথে তোমার বয়েস ম্যাচিং। বেশ মানাতো তোমাদের দুজনকে। “
“তিতির, ছিঃ ছিঃ একি কথা! থাপ্পড় খাবি কিন্তু। তা সেই অসভ্য পুরুষের নাম কি? “
“মা, তুমি তাকে অসভ্য বলছো কেন? স্যার কে আমি প্রপোজ করব ভাবছি। স্যার কি বলবেন জানা নেই। তবে মনে হয় পছন্দ করেন আমাকে, গাঁইগুঁই করলেও শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে যাবেন। কথায় কথায় বলছিলেন, একা জীবন দুর্বিষহ”।
“ও এটাও জানা হয়ে গেছে। জল তো তাহলে বহুদূর গড়িয়েছে”।
“তা একটু গড়িয়েছে মা। ওনার বাড়িতে কয়েক বন্ধু মিলে কাল গিয়েছিলাম”।
“সে কি!!!! শেষপর্যন্ত বাড়িতে। মিথ্যে বলছিস তুই তিতির। বন্ধু দের সাথে নয়, একাই গিয়েছিলি। ও বাবা! কি সর্বনাশী মেয়ে আমি পেটে ধরেছি। তা’ তার নাম কি”?
“এই নাও মা, এই চিরকুটে তিনি নাম- ঠিকানা আর ফোন নম্বর লিখে দিয়েছিলেন আমাকে। তোমার কাছে রাখো, যদি দরকার হয় তোমার”।
“প্রনব মুখোপাধ্যায়! এই তিতির, বাড়ি তো তোর মামার বাড়ির পাড়ায়”।
“ঠিক তাই মা”।
( তিতির উঠে চলে যায় নিজের ঘরে। মা বসে থাকে ডাইনিং টেবিলে, কতক্ষণ? তার হিসাব মা- মেয়ে রাখে না। অন্য কাউকে কৈফিয়ত দেয়ার দায় আপাতত নেই, কারণ তিতিরের বাবা তখন অফিস ট্যুরে।)
গভীর রাতে এক নারী ফোনে কথা বলে তার প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে,” প্রনব তিতির আমার মেয়ে। ও তোমাকে বিয়ের প্রপোজাল দেবে, প্লিজ তুমি ওকে ফিরিয়ে দিও।”
“সুষমা, তিতির আমার মেয়ের মত। তার সাথে বিয়ে কি সম্ভব? তারপর সে তোমার মেয়ে। তুমি আমাকে নিজের জীবনে ঠাঁই দিলে না তোমার বাবার ভয়ে। তোমার বাবা বললেন, ব্যাট-বল পেটানো ছেলেকে জামাই করব না। তখন আমি নামকরা টিমের ওপেনিং ব্যাটসম্যান। চোখ ছিল আরো উঁচুতে। তাই খেলার সাথে লেখা পড়াটা অবহেলা করি নি। তোমার বাবার অপমান ভুলতে পারলাম না। ময়দান ছেড়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অলিন্দে ঘুরপাক। তার ফলশ্রুতিতে অনায়াসে কলেজ সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় পাশ করে আজ অধ্যাপক। প্রথমে নিয়োগ রাজ্যের বাইরে।সম্প্রতি তোমার মেয়েদের কলেজে মিউচুয়াল ট্রান্সফার।তোমার মেয়ে আর আমাদের পাড়ার সুবলের মেয়ে ক্লাশ মেট। সুবলের মেয়ে তার চিরকালের পেট পাতলা বাপের কাছে তোমার-আমার লাভ স্টোরি শুনেছে। আর তোমার মেয়ে শুনেছে সুবলের মেয়ের কাছে।সরাসরি তোমাকে বলতে পারে নি। আমাকে বলেছিল একটা প্ল্যান বাতলে দিতে। আর তুমি জানোই তো, আমি চিরকালের রগুড়ে। তাইতো ফ্রন্ট ফুটে একটা কভার ড্রাইভ মেরে দিলাম। প্লিজ, রাগ করো না। আর আমার নাম্বার ডিলিট করে দিও। তোমার মেয়ের সাথে আমার গুরু- শিষ্যার সম্পর্ক। তুমি বা তোমার মেয়ে পরকীয়া সম্পর্ক পছন্দ করো না। আমিও নই। তাই একাংশ নাটকের আজই হোক যবনিকাপাত।”
24/2/2022. 6pm