কলমে; তন্ময় সিংহ রায়:- সালটা ছিল ১৮৯৪ , ১লা জানুয়ারি।
উত্তর কলকাতার গোয়াবাগান অঞ্চলে ঈশ্বর মিত্র লেন-এর পৈত্রিক বাড়িতে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে , আর পাঁচজন সাধারণের মতই খুশি আর আনন্দকে যত্ন করে সাথে নিয়ে এসে
ভূমিষ্ঠ হল এক শিশুপুত্র।
কেই বা আর জানতো?
বা উপায়ও ছিল না কোনপ্রকারে জানার যে , এই সদ্যজাত চারাগাছই মহীরুহরূপে একদিন স্পর্শ করবে আকাশকে!
তিনি আর কেউ নন , ভবিষ্যতের ভুবনজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী , কোয়ান্টাম স্ট্যাটিসটিক্সের উদ্ভাবক ও বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার
পথিকৃৎ , বিশ্ববন্দিত ও কিংবদন্তি বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু।
বাবা সুরেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন তৎকালীন
ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি’র একজন হিসাবরক্ষক ও মা গৃহবধূ আমোদিনী দেবী।
মায়ের সাত সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ একমাত্র পুত্র-সন্তান সত্যেন শৈশব থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী!
গণিতের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি তাঁকে আকর্ষণও করতো অসম্ভব , এবং গণিতের প্রতি সেই শিশুর দক্ষতা বাড়াবার জন্যে প্রধান ভূমিকা পালন করেন কিন্তু তাঁর বাবাই।
প্রতিদিন কাজে যাবার সময় বাবা সুরেন্দ্রনাথ তাঁর ঘরের মেঝেতে সৃষ্টি করে যেতেন বিভিন্ন গাণিতিক জটিল সমস্যার , যা সত্যেন তাঁর প্রাথমিক গণিত গুরু ওরফে বাবা বাড়ি ফেরার পূর্বেই করে রাখতেন সমাধান।
আর এভাবেই আগুনে ঘি পড়ার মতন ধীরে ধীরে আরও বাড়তে থাকে গণিতের প্রতি তাঁর আগ্রহ এবং দক্ষতা।
অঙ্কের প্রতি এ হেন অসম্ভব দক্ষতায় বিমুগ্ধ তাঁর গণিতের শিক্ষক এক সময় চিন্তা করতে শুরু করেন যে , এ ছেলে একদিন নিশ্চিত ‘পিয়ের সিমোঁ লাপ্লাস’-এর মতন বড় গণিতবিদ হবেন।
কলকাতার হিন্দু স্কুল থেকে ১৯০৯ সালে এন্ট্রান্স-এ পঞ্চম এবং প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে ১৯১১ সালে প্রথম স্থান অধিকার করে তিনি উত্তীর্ণ হন এফ.এ পরীক্ষায়।
একই কলেজ থেকে ১৯১৩ সালে তিনি গণিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থানসহ স্নাতক ডিগ্রী এবং ১৯১৫ সালে মিশ্র গণিতে প্রথম স্থানসহ প্রথম শ্রেণিতে অর্জন করেন মাস্টার্স ডিগ্রী।
এম-এস-সি’তে রেকর্ড পরিমাণ নম্বর পাওয়ার পর তাঁর শিক্ষক প্রফেসর ডি এন মল্লিক অবাক হয়ে সস্নেহে তাঁকে ডেকে তো বলেই বসলেন , ‘এত বেশি নম্বর পেয়েছো পরীক্ষায় , বড় বেমানান লাগছে হে!’
অতঃপর নবপ্রতিষ্ঠিত ‘কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ’-এ সত্যেন্দ্রনাথ বসু ১৯১৫ সাল থেকে মিশ্র গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণায় গভীর মনোনিবেশ করেন ড. মেঘনাদ সাহার সাহচর্যে।
পরবর্তীতে ১৯১৯ সালে মেঘনাদ সাহার সাথেই মিলিতভাবে তিনি অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার বিশেষ এবং সাধারণ তত্ত্বের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন এবং এটাই ছিল ‘আপেক্ষিকতা তত্ত্ব’-এর প্রথম ইংরেজি অনুবাদ।
বিজ্ঞান ও মেধার আকাশে এক সু-উজ্বল নক্ষত্রের নাম সত্যেন্দ্রনাথ বোস!
প্রখর প্রতিভাবান এই মানুষটা যেন জন্মেইছিলেন সৃষ্টি-জ্ঞানকে একেবারে সঙ্গে নিয়েই।
তরুণ সত্যেন্দ্রনাথ যে সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স-এর শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হলেন , সে সময়ে উন্নত টেলিফোন ও ইন্টারনেট ব্যবস্থার যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ,
এ সবকিছু থেকেই তিনি ছিলেন বঞ্চিত!
কিন্তু বিশেষত বিজ্ঞানের জ্ঞানকে সর্বদা পাকস্থলীবদ্ধ করায় যে মানুষটার নিবৃত্তি হত ক্ষুধা-তৃষ্ণার , নিতান্তই ফিকে ছিল এসব তাঁর কাছে!
এই অবস্থার বুকে দাঁড়িয়ে ঢাকা’য় থেকেও সে সময়ে তাঁর দৃষ্টি গিয়ে পৌঁছেছিল হাইজেনবার্গ , আইনস্টাইন ও ম্যাক্স কার্ল আর্নেস্ট লুডভিগ প্লাঙ্ক-এর মতন বিশ্বের নামী-দামী সব বিজ্ঞানীদের গবেষণার উপরে গিয়ে।
প্রথমত ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হওয়ার পর থেকে পশ্চিমা বিশ্বে প্রকাশিত বিজ্ঞানের গবেষণাপত্রগুলো ভারতীয় উপমহাদেশে খুব একটা আসতো না বললেই চলে , এদিকে অপর সমস্যাটা ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পি.এইচ.ডি’ ডিগ্রী একেবারেই ছিল সে মুহূর্তে নতুন , ফলে সেখানে সুযোগ সুবিধাও ছিল না যথেষ্ট!
অতএব আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ডক্টর অব ফিলোসফি’ অথবা ইউরোপ-আমেরিকার গবেষণা দীক্ষায় বিলেত ফেরৎ কোন পুঁথিগত ডিগ্রী তাঁর ছিলনা ঠিকই , কিন্তু শিক্ষক হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন স্যর জগদীশচন্দ্র বসু ও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রমুখের মতন প্রসিদ্ধ সব উদ্ভিদবিদ , পদার্থবিদ , জীববিজ্ঞানী এবং রসায়নবিদের সান্নিধ্য।
বিরামহীন চিন্তাকে একমাত্র সঙ্গী করে তিনি তখন গবেষণা করছেন প্লাঙ্ক-এর ‘বিকিরণ তত্ত্ব’ বা ‘রেডিয়েশন ফর্মুলা’ নিয়ে।
হঠাৎই একসময় ইচ্ছেপ্রকাশ করলেন যে ,
তিনি তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তুকে প্রকাশ করবেন আর্টিকেলরূপে।
গুরুমস্তিষ্কের নির্দেশ অনুযায়ী যেমন ভাবনা , কাজও যেন হয়ে বসলো ঠিক তেমনই।
তিনি সৃষ্টি করলেন তাঁর গবেষণার সেই বিষয়বস্তুকে আর্টিকেলরূপে।
এবারে পালা প্রকাশের , কিন্তু সমগ্র বিশ্বের এ প্রান্তের সত্যেন্দ্রনাথ বসু’কে তো বড় বড়
কোনও বিজ্ঞানীই চেনেন না , তাহলে এবারে উপায়?
অদম্য এই মানুষটা কিন্তু থেমে থাকেননি এমতবস্থাতেও।
দুঃসাহসিক অভিযানের মত হলেও , কোনপ্রকার জড়তাকে বিশেষ গুরুত্ব না দিয়েই অত্যন্ত বিনয়ী ভাষার যথার্থ প্রয়োগে তিনি একেবারে সরাসরি চিঠি লিখে বসলেন খোদ আইনস্টাইনকে।
চিঠিতে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করলেন তাঁর গাণিতিক পদার্থবিদ্যার গবেষণার বিষয়বস্তুকে।
জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা ‘আপেক্ষিকতার তত্ত্ব’ ও তা থেকে উদ্ভুত ‘ভর-শক্তি সমতুল্যতার সূত্র’-এর জনক , ‘অ্যালবার্ট আইনস্টাইন’ তখন
পদার্থ বিজ্ঞানের মধ্যগগনে তেজোদীপ্ত ও বর্ণময় আলোকছটার বিকিরণ প্রদানকারী এক সূর্যের নাম।
কিন্তু তরুন বোস সে সব তোয়াক্কা না করেই অনুরোধ করলেন যে , তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তু যদি প্রকাশযোগ্য হয় তবে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে যেন তা প্রকাশ করা হয় যথাযথভাবে।
সত্যেন-এর এই আত্মবিশ্বাস , নির্ভীকতা ও
এ ধরণের প্রতিভার প্রতিফলনে বিষ্ময়ে হতবাক আইনস্টাইন চিঠির প্রত্যুত্তরে সম্মতি জানিয়ে বসলেন ইতিবাচক!
সাময়িক বাধার প্রাচীর পেরিয়ে অবশেষে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের সহায়তায় তাঁর ‘Planck’s law and the hypothesis of light quanta’ নামক প্রবন্ধটা ‘Zeitschrift für Physik'(English: Journal for physics) প্রকাশিত হয়েছিল জার্মানির বিখ্যাত একটা জার্নালে যা ‘বোস-আইনস্টাইন তত্ত্ব’ নামে সমগ্র বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞান জগতে সৃষ্টি করে
এক তুমুল আলোড়ন!
ফলস্বরূপ মাত্র তিরিশ বছর বয়েসেই দেশ বিদেশের তাবড় তাবড় বিজ্ঞানী ও মেধাবীদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করতে শুরু করেন তিনি!
পরবর্তীকালে তাঁর নাম অনুসারেই পরমাণুর একধরনের কণা’র নাম রাখা হয় ‘বোসন কণা।’
শুধু তাই নয় , আপেক্ষিকতা তত্ত্বের কয়েকটা জটিল গাণিতিক সমীকরণের সমাধান করে বিজ্ঞানের দীর্ঘ ইতিহাসে তিনি স্থাপন করেন আরও এক মহান কীর্তি!
অধ্যাপক বসু ১৯২৯ সালে নির্বাচিত হন
ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের পদার্থবিজ্ঞান শাখার সভাপতি এবং ১৯৪৪ সালে উন্নিত হন মূল সভাপতিতে।
১৯৪৫ সালে তিনি নিযুক্ত হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে।
১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত সত্যেন্দ্রনাথ বসু বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং সে বছরেই অর্থাৎ ১৮৫৮ সালে তিনি নির্বাচিত হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘এমিরিটাস প্রফেসর’ পদে।
বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি’র ‘ফেলো’ নির্বাচিত হনও সেই বছরেই , অর্থাৎ ১৯৫৮ সালে।
১৯৫৯ সালে ভারত সরকার তাঁকে নিযুক্ত করে ‘জাতীয় অধ্যাপক’ হিসেবে।
১৯৫২ সাল থেকে কিছুকাল পর্যন্ত এমনকি তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য হিসেবেও পালন করেন দায়িত্ব।
বাংলাভাষায় বিজ্ঞান চর্চার ব্যাপারে অধ্যাপক বসু যে ঠিক কতটা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন , তা আর বোধহয় বলে বোঝাবার কোনও অপেক্ষাই রাখেনা।
এ উদ্দ্যেশ্যেই তিনি কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ’ , এবং ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে ‘জ্ঞান ও বিজ্ঞান’-এ কেবলমাত্র মৌলিক গবেষণা নিবন্ধ নিয়ে ‘রাজশেখর বসু সংখ্যা’ প্রকাশ করে তিনি দেখিয়ে দেন যে , বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের মৌল নিবন্ধ রচনা সম্ভব। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ও বিশ্ববরেণ্য এই বিজ্ঞানীকে ‘বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়’ কর্তৃপক্ষ ‘দেশিকোত্তম’ এবং ভারত সরকার ভূষিত করেন ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে।
বলাবাহুল্য , বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকেও তিনি বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের বই লিখিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন।
আর সত্যেন বসুর প্রত্যক্ষ উৎসাহেই তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বিজ্ঞান বিষয়ক বই
‘বিশ্ব পরিচয়’ লেখেন ১৯৩৭ সালে।
এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই সত্যেন্দ্রনাথ বসুকেই উৎসর্গ করেছিলেন এই
‘বিশ্ব পরিচয়’।
এই প্রসঙ্গে বসু অবশ্য বলেন , ‘নোবেল পুরস্কার লাভ করলেও আমি এতটা কৃতার্থ বোধ করতাম না!’
ভাবা যায় এই মহান মানুষটার চিন্তাভাবনার আদর্শ?
অর্থাৎ এই মন্তব্য নিশ্চিতভাবে বহন করে সত্যেন বসুর অত্যন্ত বিনয়ী ধর্মের ইঙ্গিত!
প্রকৃত গুণী মানুষরা সাধারণত বিনয়ী ও নিরহংকারীই হয়।
সত্যেন বসুকে নোবেল পুরস্কার না দেওয়াটা নোবেল কমিটির’ই অনেক সদস্যের কাছে বিস্ময় এবং হতাশার কারণ!
আর হবে নাই বা কেন?
সত্যেন বসুর আবিষ্কারের উপর গবেষণা করে পরবর্তীতে বেশ কয়েকজন তো লাভ করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পদক ‘নোবেল!’
বসু জার্মানি আর ফ্রান্সে কাটিয়েছিলেন দু’বছর , এর মধ্যে তিনি সান্নিধ্য পেয়েছিলেন পদার্থবিজ্ঞানে সু-বিখ্যাত ও নোবেলজয়ী জার্মান তাত্ত্বিক পদার্থবিদ এবং কোয়ান্টাম বলবিদ্যার উদ্ভাবক ‘ওয়ার্নার কার্ল হাইজেনবার্গ’-এর।
কাজ করেছেন নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী খ্যাতনামা ফরাসী পদার্থবিজ্ঞানী ‘দ্য ব্রগলি’র ‘রঞ্জন রশ্মি’ গবেষণা কেন্দ্রে।
বিজ্ঞানেরই ভিন্ন দুটি ক্ষেত্রে যথা ‘পদার্থবিজ্ঞান’ ও ‘রসায়নবিজ্ঞান’-এ নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত প্রথম সু-প্রসিদ্ধ মহিলা বিজ্ঞানী
‘মাদাম কুরি’র রেডিয়াম ইনস্টিটিউটেও কাজ করেন এই সত্যেন্দ্রনাথ বসু , আর হয়তো সেই সুযোগেই জার্মান ও ফ্রেঞ্চ ভাষায় তিনি অর্জন করেন দক্ষতা।
বিদেশে গিয়ে পড়ালেখা করার ইচ্ছে সত্যেন বসুর ছিল সেই ছেলেবেলা থেকেই!
অত্যন্ত সহজ সাধারণ ছিলেন মাত্রাতিরিক্ত গুণী এই মানুষটা।
সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার , তিনি সর্বদা সন্তুষ্ট ছিলেন তাঁর এই আবিষ্কারগুলো নিয়েই। পুরস্কারের জন্য কখনই আক্ষেপ ছিল না এই মহৎ মানুষটা’র।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ উইলার্ড গিবস , ফ্রেড হোয়েল এনাদের মতন খ্যাতনামা বিজ্ঞানীদের পাশে নাম লেখান বসু , যাঁরা বিজ্ঞানের জন্য অনন্য ও অকল্পনীয় সব কাজের মাধ্যমে দেশ তথা বিশ্ববাসীকে বহুমূল্যবান সব উপহার দিয়েও বঞ্চিত নোবেল পুরস্কার সম্মান থেকে!
এ প্রসঙ্গে এ কথাগুলো না বললে হৃদয় থেকে যায় অপূর্ণ , তাই বলা ,
‘অ্যালবার্ট আইনস্টাইন’ নামটা আমাদের কাছে যতটুকু লাভ করেছে পরিচিতি , ‘সত্যেন্দ্রনাথ বসু’ ততটা বোধ করি নন , কারণ
বসু প্রচার মাধ্যমের সুযোগ পেয়েছিলেন কম , তাছাড়াও স্বদেশী বিজ্ঞানীদের অবদানে পুষ্ট
এই আমাদের কিন্তু তাঁদের প্রতি উৎসাহ
বরাবরই অপেক্ষাকৃত কম , আর এ আমাদের চরম লজ্জা!
‘বোস-আইনস্টাইন’ তত্ত্বে সত্যেন বসুর নামের ঠিক পরেই উচ্চারিত হয় আইনস্টাইনের নাম , কিন্তু বিশ্বখ্যাত ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই তত্ত্বের প্রায় সম্পূর্ণ কৃতিত্বই কিন্তু সত্যেন্দ্রনাথ বসু’র।
আইনস্টাইন সত্যেন্দ্রনাথ বসু’র মূল গবেষণাপত্রটা শুধু ইংরেজি থেকে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন মাত্র , কিন্তু প্রকাশের সময় সত্যেন বসুর সাথে নিজের নামটাও তিনি যোগ করে দিয়েছিলেন।
অবশ্য এটা ঠিক যে , বসু’র নামের সাথে নোবেল বিজয়ী আইনস্টাইনের নাম যুক্ত না হলে হয়তো সত্যেন বসুকে যতটুকু সম্মান আজ দেওয়া হয় , তাও বোধ করি হত না দেওয়া!
‘যাঁরা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা হয় না , তাঁরা হয় বাংলা জানেন না , নচেৎ বিজ্ঞান বোঝেন না।’
মৃত্যুহীন ও যুক্তিপূর্ণ এই বিখ্যাত উক্তিটা করেছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু ৷
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে তাঁর অমূল্য অবদান বিশেষত বাঙালী হৃদয়ে আ-মৃত্যু থাকবে অক্ষত ও জীবন্ত!
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ব্রঙ্কিয়াল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এই মহান পদার্থবিদ চিরকালের মতন এক অজানা দেশে পাড়ি জমান ১৯৭৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ৮০ বছর বয়সে!
বিনম্র শ্রদ্ধাচিত্তে স্মরণ করে আজও অত্যাধিক গর্বিত এবং বিজ্ঞান চর্চায় অনুপ্রাণিত হন বিশেষত দুই বাংলার কোটি কোটি মানুষ!
ধন্য হে মহা-মানব , ধন্য আপনার অমূল্য ও মৃত্যুহীন সৃষ্টি!