সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং – প্রথা অনুযায়ী ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশরাম দাসের উদ্যোগে বৃহষ্পতিবার ক্যানিং পালিত হল রাখিবন্ধন উৎসব। এদিন ক্যানিং বাসষ্ট্যান্ডে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রাখিবন্ধন উৎসব পালিত হয়। উপস্থিত ছিলেন ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশরাম দাস,ক্যানিং ১ ব্লক তৃণমূল যুব সভাপতি অরিত্র বোস,জেলা পরিষদ সদস্য সুশীল সরদার,ক্যানিং ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অনিমা মিস্ত্রী,ক্যানিং মহকুমা শাসক প্রতিক সিং,ক্যানিং মহকুমা পুলিশ আধিকারীক দিবাকর দাস,ক্যানিং থানার আইসি সৌগত ঘোষ,ক্যানিং মহিলা থানার ওসি তনুশ্রী মন্ডল,ক্যানিং ট্রাফিক ওসি দেবপ্রসাদ সরদার সহ অন্যান্য সরকারী আধিকারী গণ।
উল্লেখ্য ‘রাখিবন্ধন’ বা ‘রাখিপূর্ণিমা’ দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। প্রধানত এই দিনে ভাই-বোনের সম্পর্ক আজীবন রক্ষার উদ্দেশ্যে দাদা বা ভাইয়ের ডান হাতে দিদি বা বোনেরা পবিত্র রাখি পরিয়ে দেয়। এর মাধ্যমে দিদি বা বোনেরা, দাদা কিংবা ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করে থাকে।হিন্দু শাস্ত্রের পঞ্জিকা মতে শ্রাবন মাসের শুক্লা পক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। রাখিবন্ধন উৎসব টি দেশের সকল জাতি,ধর্ম ও বর্ণের মানুষের মধ্যে প্রচলিত।
রাখিবন্ধন উৎসবের উৎপত্তি সম্পর্কে বিধায়ক পরেশরাম দাস বলেন ‘পবিত্র মহাভারতের কাহিনী আমরা সকলেই জানি। মহাভারতে বর্ণিত রয়েছে,যুদ্ধের সময় শ্রীকৃষ্ণের কবজিতে আঘাত লেগে রক্তপাত শুরু হয়েছিল।সেই সময় পঞ্চপাণ্ডবের স্ত্রী দ্রৌপদী তাঁর শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে শ্রীকৃষ্ণের হাতে বেঁধে দিয়েছিলেন। দ্রৌপদী তাঁর আত্মীয়া না হলেও, তিনি দ্রৌপদীকে নিজের বোনের মর্যাদা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে কৌরবরা যখন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করে,তখনই শ্রীকৃষ্ণ দৌপদী সম্মান রক্ষা করে ভাই-বোনের সম্পর্ককে দৃষ্টান্ত স্বরূপ গড়ে তোলেন।এছাড়াও ১৯০৫ সালে ভারতবর্ষে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন চরম পর্যায়ে পৌঁছালে ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাকে দুটি প্রদেশে বিভক্ত করবে। তৎকালীন সময় দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা চরম আকার ধারন করে। ব্রিটিশ সরকারের এই বিরূপ সিদ্ধান্ত বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ করার জন্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তৎকালীন সময়ে হিন্দু ও মুসলিম ভাই ও বোনকে একতা হওয়ার আহ্বান করেছিলেন।
১৯০৫ সালের জুন মাসে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে ওই বছরেরই আগস্ট মাসে বঙ্গভঙ্গ জন্য আইন পাশ হয় এবং আইনটি ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর কার্যকর ।কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বোধ জাগিয়ে তুলতে এবং ব্রিটিশদের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সকল কে রাখী বন্ধন উৎসব পালন করার জন্য আহ্বান করেছিলেন।অতীতের সেই রাখীবন্ধন উৎসবের মধ্য দিয়ে আমারাও ভ্রাতৃত্ববোধ অক্ষুন্ন রেখে আগামী দিনের চলার পথ আরো প্রশস্ত এবং দৃঢ় করতে আমাদের এই রাখীবন্ধন উৎসব।’
এদিন বিধায়ক থেকে শুরু করে সরকারী আধিকারীক গণ রাজপথে নেমে সাধারণের হাতে সম্প্রীতির রাখি পরিয়ে দেন।