নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা;১৫আগস্ট: — আজ ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস। সেই উপলক্ষ্যে চারিদিকে চলছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। প্রত্যেকটা বিদ্যালয়ে উত্তোলিত হচ্ছে জাতীয় পতাকা। সাথে হচ্ছে পদযাত্রা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান। কিন্তু এই আজকের মত গুরুত্বপূর্ণ দিনেও সময় মত এলেন না শিক্ষকরা। সেই নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ অভিভাবক এবং এলাকাবাসী। পরে দেরি করে শিক্ষকরা পৌঁছালেও তাদেরকে দেওয়া হলো না পতাকা উত্তোলন করতে। পতাকা উত্তোলন করল গ্রামবাসীরা। শিক্ষক এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে ঘিরে দেখানো হলো বিক্ষোভ। যদিও সময়ে এসেছে বলে সাফাই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের। সমগ্র ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায়। ঘটনাটি ঘটেছে মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত
চকসাদন জুনিয়র হাই স্কুলে। দীর্ঘদিন ধরেই বেনিয়মের অভিযোগ উঠছে বিদ্যালয়ে। স্কুলে রয়েছে ২৫৯ জন ছাত্র-ছাত্রী। কিন্তু শিক্ষক মাত্র দুইজন। অভিযোগ তারপরেও সেই দুই জন শিক্ষক সময় মত আসেন না। সঠিক ভাবে হয় না লেখাপড়া দেওয়া হয় না মিড ডে মিল। কিন্তু তারপরেও সব মুখ বুঝে সহ্য করছিল এলাকাবাসী। সহ্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায় সোমবার। সকাল থেকেই বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা ভিড় জমিয়ে ছিল। স্বাধীনতা দিবসের জন্য প্রত্যেকের মধ্যে ছিল উৎসাহ। তারা ভেবেছিল প্রত্যেক বিদ্যালয়ের মত তাদের বিদ্যালয়তেও পদযাত্রা বেরোবে। হয়তো ছোট-খাটো অনুষ্ঠান হবে। কিন্তু খুদে ছাত্র-ছাত্রীরা অপেক্ষা করতে থাকলেও দেখা মেলেনি শিক্ষকদের। গ্রামবাসীরা নিজেরা ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে পদযাত্রা করায়। তারপর নিজেরাই পতাকা উত্তোলনের ব্যবস্থা করে। সেই সময় ঘড়ির কাটায় যখন ৯.৩৪ তখন স্কুলে এসে হাজির হয় শিক্ষকরা। তারপরে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। শিক্ষকদের পতাকা উত্তোলন করতে দেওয়া হয় নি। যদিও স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের মতে সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী সময় মত তারা স্কুলে এসেছেন। তাদের নিয়ে যে বিভিন্ন অভিযোগ তা সম্পূর্ণ সত্য নয়।
স্থানীয় বাসিন্দা নয়ন দাস বলেন,” দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে সময় মত আসেন না শিক্ষকরা। মানা হয় না কোন নিয়ম কানুন। কিন্তু তারপরেও আমরা কিছু বলিনি। আজ স্বাধীনতা দিবসের দিনেও সময় মত আসলেন না তারা। আমরা স্কুলের বাচ্চাদেরকে নিয়ে পদযাত্রা করালাম। তাই ওরা যখন দেরি করে এসেছে আমরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছি।”
স্থানীয় বাসিন্দা ওম কুমার সিং বলেন, স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে চলছে অনিয়ম। কোন দিন সময় মত আসে না শিক্ষকরা। আজকেও হলো না সময় মতো। তাই আমরা ক্ষুব্ধ। একই স্কুলে শিক্ষক কম। তারপরেও আসে না সময় মত। এমন আবর্জনা জমেছে স্কুলের বাইরে দরজা খুললে ঘরে ঢুকে যাবে। প্রচন্ড খারাপ অবস্থা।”
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন,” গ্রামবাসীদের ব্যাপার তারা বিক্ষোভ করছে। কিন্তু আমরা সময় মতই এসেছি। একজন শিক্ষক আটটায় এসে সবাই আয়োজন করেছিলেন। আমি ৯ঃ০৫ মিনিটে স্কুলে উপস্থিত হই। কিন্তু গ্রামবাসীরা পতাকা তুলতে দেয়নি। স্কুলে অনিয়ম করা হয় এই অভিযোগ সত্যি নয়। আর সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী আমরা কাজ করেছি। নির্দেশিকা অমান্য হয়নি।”
আজাদী কি অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে স্বাধীনতা দিবসের দিন সারা দেশ জুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হচ্ছে নানা অনুষ্ঠান। বিভিন্ন স্কুলেও পতাকা উত্তোলনের সাথে হচ্ছে পদযাত্রা এবং অনুষ্ঠান। আর খুব স্বাভাবিক ভাবে বর্তমান সমাজে ছাত্র-ছাত্রীদের বোঝাতে হবে এই স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য। সেই কাজ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। সেখানে এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ দিনে যদি শিক্ষকরা দেরি করে স্কুলে আসে। স্বাভাবিক অভিভাবক এবং এলাকাবাসীরা ক্ষুব্ধ হবেই। এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়।