পূর্ব বর্ধমান, ১৬ই অগাস্ট, ২০২২: সর্বভারতীয় কৃষক ও খেত-মজুর সংগঠন জয় কিষান আন্দোলন তার সংযুক্ত পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি ব্লকের আলু চাষীদের ‘কৃষক সংহতি মঞ্চ রসুলপুর’-এর পাশে দাঁড়িয়ে চাষিদের ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য মাননীয় কোলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানালো (WPA 12441 of 2022 | তিরুপতি কোল্ড স্টোরেজ প্রাইভেট লিমিটেড – বনাম- পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য)। ১২ই আগস্ট, ২০২২ তারিখের একটি আদেশের মাধ্যমে মাননীয় আদালত তিরুপতি কোল্ড স্টোরেজ প্রাইভেট লিমিটেড [যে বেসরকারি সংস্থাটি কৃষকদের ১১কোটি টাকারও বেশি এই বিশাল ক্ষতি করেছে] কে নির্দেশ দিয়েছে যে ৩ কোটি টাকা অন্তর্বর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং সেই টাকা জেলা শাসকের মাধ্যমে কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। কোল্ড স্টোরেজ মালিককে ১৯শে আগস্ট, ২০২২ তারিখের মধ্যে এই অর্থ জমা করতে হবে এবং জেলা শাসক ২রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ তারিখের মধ্যে কৃষকদের মধ্যে এই অর্থ বণ্টন করে দেবেন। মাননীয় হাইকোর্টের আদেশের অনুলিপি সংযুক্ত করা হয়েছে।
জয় কিষান আন্দোলন আজ ১৬ই আগস্ট, ২০২২ তারিখে পূর্ব বর্ধমান জেলা শাসককে চিঠি দিয়ে আবেদন জানিয়েছে মাননীয় হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে। জেলা শাসককে অনুরোধ করা হয়েছে তিনি যেন সর্বশেষ ১৯শে আগস্ট, ২০২২ তারিখের মধ্যে ৩ কোটি টাকা তিরুপতি কোল্ড স্টোরেজ প্রাইভেট লিমিটেডের থেকে উদ্ধার করেন এবং সর্বশেষ ২রা সেপ্টেম্বর, ২০২২ তারিখের মধ্যে তা কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করেন, ঠিক যেমন মাননীয় আদালতের নির্দেশ দিয়েছেন। জয় কিষান আন্দোলন প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। জেলা শাসকের চিঠির অনুলিপি সংযুক্ত করা হয়েছে।
এটি মনে রাখতে হবে যে প্রায় ৩৫০০ কৃষক তিরুপতি কোল্ড স্টোরেজ প্রাইভেট লিমিটেডে ৫,৪০০ টনেরও বেশি আলু রেখেছিলেন এবং তা ওরিয়েন্টাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মাধ্যমে বীমা করিয়েছিলেন। ২০২২ সালের মে মাসে কোল্ড স্টোরেজ মালিকের অবহেলায় সব আলু পচে নষ্ট হয়ে যায় এবং তারপর থেকে কৃষকরা তাদের ফসলের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য হন্য হয়ে ঘুরছে। মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে পদস্থ আধিকারিকরা কৃষকদের বারবার আশ্বাস দিয়েছে যে তারা সম্পূর্ণ এবং ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাবেন কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আজ পর্যন্ত তারা এক টাকাও পাননি। কোল্ড স্টোরেজের মালিক আইনের কৌশলের আশ্রয় নিয়ে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছেনা এবং প্রশাসন মালিকের বা বীমা কোম্পানির কাছে কৃষকদের ক্ষতির ক্ষতিপূরণ আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে।
কৃষক সংহতি মঞ্চ রসুলপুরের প্রতিনিধি সুমিত রায় বলেন: “কোল্ড স্টোরেজে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাওয়া আলুগুলির ক্ষতিপূরণ পেতে আমরা পাগলের মত দৌরে বেড়াচ্ছি। কলকাতা হাইকোর্ট অবশেষে আমাদের কিছুটা আশা দিয়েছেন। আইন আদালতের ওপর আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে। শীঘ্রই ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী।”
জয় কিষান আন্দোলনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি প্রবীর মিশ্র বলেন: “পূর্ব বর্ধমানের মেমারি এলাকার কৃষকরা তাদের আলু একটি হিমঘরে রেখেছিলেন যাতে যখন দাম ভাল পাওয়া যাবে, তারা বিক্রি করতে পারবেন। তাদের মজুদ করা সমস্ত আলু পচে গিয়েছে মালিকের অবহেলায়। ৩ মাস ধরে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়নি হিমঘরের মালিক বা প্রশাসন। জয় কিষান আন্দোলন কৃষকদের প্রতি এই অবিচারের নীরব দর্শক হয়ে থাকবে না। আমরা আদালতে কৃষকদের পক্ষ দাঁড়িয়েছি এবং কৃষকদের জন্য একটি অনুকূল আদেশ পেয়েছি। আমাদের প্রবীণ আইনজীবীরা সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণের জন্য আবার আদালতে যাবেন। আমরা স্থানীয় পর্যায় প্রতিবাদ সভাও করব কৃষকদের জাগিয়ে তুলতে। এই মামলাটি পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত কৃষকদের জন্য একটি উদাহরণ সৃষ্টি করবে: আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ এবং সংগঠিত হই, কেউ আমাদের অধিকার কেড়ে নিতে এবং বঞ্চিত করতে পারবে না।”
মিডিয়া সেল | জয় কিষান আন্দোলন, পশ্চিমবঙ্গ
যোগাযোগ: ৮৩৩৬ ৯৩৯৯৩৯৩