ফিনল্যাণ্ড , উত্তরের তারা ও পৃথিবীর শেষ পথ(প্রথম পর্ব): রাজাদিত্য ব্যানার্জি।

0
2076

হিমেল হাওয়া । এত দিনে অভ্যস্ত হবার কথা । কিন্তু প্রায় ২৫ বছর উত্তর মেরুর কাছে ছোট্ট ফিনল্যান্ডে থেকে শীতে অভ্যস্ত হওয়া যায়না ।
শীত আসছে এই  আতঙ্কটা অনেকের কাটেনা । আমিও কি তাদেরই দলে পরি ? মাঝে মধ্যে অবশ্য মনে হয় পুরোটাই একটা ডিপ স্পেস জার্নি । একটা  এক্সট্রা -টেরেস্ট্রিয়ালদের সন্ধানে আমি কোথাও এসে পড়েছি হঠাৎ করে ।ফিনল্যাণ্ড তো তাই- ই । রাশিয়া আর  সুইডেনের মাঝে লুকিয়ে আছে বিশ্বের বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট । শীতকাল এখানে একটা এন্ডলেস জার্নি । 

সুনীলজ্যেঠু ( গঙ্গোপাধ্যায় ) বাবাকে ফোন করে বলেছিলেন বুবাইকে বলিস ওর জন্যে একটা ব্যাংকক থেকে টাই এনেছি । সেই টাইটা আমার খুব প্রিয় । কারণটা নীল রং । অদ্ভুত একটা নীল রং যে রং ভূমধ্য সাগরের জলে দেখেছি ।হঠাৎ মুঠো ফোন বেজে উঠলো ফিন এয়ারের ১১তোলার অফিসে । কয়েক ঘন্টার মধ্যেই যেতে হবে রোভানিয়েমি , উত্তর ফিনল্যান্ডে ।স্যান্টার দেশে । স্যান্টার গ্রামে । স্যান্টার পোস্ট অফিসে । যীশুদিনে । 
রোভানিয়েমি বুক চিরে সুমেরুবৃত্ত চলে গেছে আলাস্কা অবধি । অর্থাৎ আর কিছুটা গেলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ।ফিন এয়ার ফ্লাইট এ আই -৫৩৫ ধরে এক ঘন্টায় যখন রোভানিয়েমি  পৌছালাম তখন দুপুর দেড়টা হবে ।মনে হচ্ছিলো রাত ৩-৩.৩০ । ভয়ঙ্কর অন্ধকার । চারিদিক নিস্তব্ধ সুনসান ।একটি অন্য গ্রহে পৌঁছে গেছি মনে হলো ।সে সময় ফিন এয়ারে  চাকরি করি । ওদের ইনফ্লাইট / ইন্টারনাল ম্যাগাজিনে রিপোর্টিং করি । তাই এখানে আসা ।কিন্তু শুধু স্যান্টা পার্ক নিয়ে লিখবোনা । কাজ সেরে কোথাও একটা হারিয়ে যাবো । হিল্টনে চেক ইন গাঢ় নিকষ অন্ধকারকে হার মানিয়ে নিন আলো মেখে bmw ট্যাক্সি চেপে চলে এলাম স্যান্টা পার্কে । চার্টার্ড বিমানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বাচ্ছারা এসেছে স্যান্টার সঙ্গে দেখা করতে ।  কিন্তু স্যান্টা আসলে কাদের ? 
স্যান্টা ফিন ? না সুইডিশ ?  একজন ফিনিশ বললেন ইটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই , কোনোদিনই নাকি ছিলোনা যে উনি ফিনল্যান্ডের নাগরিক ।
ইটা দুনিয়ায় নাকি সবাই সবাই জানেন আর আপনি কলকাতার মানুষ এটা জানেন না ? ভদ্রলোককে আমার বন্ধু অঞ্জনের মতন শোনালো ।
অঞ্জন মোহনবাগানের কথা জানে । আর্সেনালের কথা জানেনা , জানতে চাইনা । তাই মোহনবাগান ছাড়া এই বিশ্বে আর কোনো টিম ফুটবল খেলতে পারে সেটা ওকে বিশ্বাস করানো বেশ কঠিন ।স্যান্টার সঙ্গে ছবি তোলা হলো ।  অনেকের ছবিও তুলে দিলাম । অনেক ভারতীয় টুরিস্ট এসেছেন । বাঙালি কম ।ফিনল্যাণ্ড বরাবরই বড্ডো এক্সপেন্সিভ । নরওয়ের তুলনায় কম হলেও  এখানে ঘুরতে আসতে গেলে ভালো বাজেট দরকার । চমৎকার লাগলো স্যান্টার পোস্ট অফিস । কতজন স্যানটাকে সাহায্য করছেন । যখন গেছি তখন কিন্তু হোয়াটস্যাপ ছিলোনা , ফেবু ছিলোনা ।মা-বাবাকে একটা পোস্ট কার্ড লিখে পাঠালাম সঙ্গে সঙ্গে । 

ভয়ঙ্কর ঠান্ডা মাইনাস  ৩৯-৪১ হবে ! উত্তর মেরু থেকে ধেয়ে আসা হাড় কাঁপানো ঠান্ডা হাওয়া । হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা বললেও কম বলা হয়। ফিনিশরা যথারীতি শান্ত , স্নিগ্ধ । জিজ্ঞেস করলেই যেন বলে উঠবে ” খুব তো ঠান্ডা পড়েনি ? পড়েছে কি ? ”  

ফিনিশ ভাষায় শয়তানকে  বলে পের্কেলে । আমার কলিগ আমায় হেলসিংকিতে জানিয়েছিলেন মাইনাস ২৫৭ ডিগ্রি হলেই নাকি ফিনিশরা বলে ওঠেন  পের্কেলে কুলমা ( কুলমা মানে ফিনিশ ভাষায় ঠান্ডা ) — তাহলেই বোঝো এরা  কোন গ্রহের জীব ? 

Ⓒ রাজাদিত্য ব্যানার্জি 
চলবে