আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ ‘বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ?’ এই বিতর্ক দীর্ঘদিনের। একই সঙ্গে এই মাধ্যমিক স্তরের কতো শত ছাত্র ছাত্রী শুধুমাত্র এই বিষয়টার পিছনে কতো কতো সময় করেছে। খরচ করেছে দিস্তা দিস্তা খাতা-তার ইয়ত্বা নেই। কিন্তু বিজ্ঞান শুধু ‘আশীর্বাদ’ নয়, চরম ‘অভিশাপ’ও যে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন মূলতঃ কৃষিপ্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত বাঁকুড়ার একটা বড় অংশের মানুষ।
গত কয়েক বছর আগেও গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে ছিল গোয়াল ভরা গোরু। ধান রোপনের আগে লাঙ্গল, মই দিয়ে জমি তৈরী, ধান পাকার পর তা কেটে জমি থেকে বাড়িতে আনার ক্ষেত্রে গাড়ি টানার জন্য সবেতেই প্রয়োজন পড়তো গোরুর। কিন্তু সময়ের দাবি মেনে এখন সেসব অতিত। তার জায়গা নিয়েছে ট্রাক্টর, রোটার সহ অন্যান্য আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি।
অন্যদিকে বিজ্ঞানের সৌজন্যে কৃষিক্ষেত্রে কমেছে কর্ম সংস্থানের সুযোগও। গোরুর লাঙ্গলে জমি তৈরীর পর সেই জমিতে ধান রোপনের কাজ করতেন কৃষি শ্রমিকরা। এমনকি ধান কাটা, বাঁধা ও সবশেষে ঝাড়ার কাজেও ডাক পড়তো তাদেরই। কিন্তু এখন সেই পথও বন্ধ। ধান রোপন থেকে ঝাড়া এমনকি বাড়ির গোলায় তোলার কাজ পর্যন্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক সব যন্ত্রের সাহায্যে। একই সঙ্গে শাক সব্জী সহ অন্যান্য চাষাবাদেও এক ছবি। কম সময়ে ও সামান্য খরচে প্রয়োজনীয় কাজ হয়ে যাওয়ায় কাজ হারিয়ে এখন 'বেকার' জীবন কাটাচ্ছেন একটা বড় অংশের কৃষি শ্রমিক।
এই জেলারই বাসিন্দা সুব্রত পাল আক্ষেপের সূরে বলেন, আগে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে একাধিক গোরুর হাল (লাঙ্গল) থাকতো, এখন তার জায়গা নিয়েছে ট্রাক্টর বা পাওয়ার ট্রিলার। আগামী প্রজন্ম হয়তো গোরুর হাল কি জিনিস জানবেই না। এসম্পর্কে তাদের ধারণা দিতে হলে ছুটতে হবে মিউজিয়ামে। একই সঙ্গে লাঙ্গলে চাষ করলে যেভাবে কৃষি জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়, ট্রাক্টর বা পাওয়ার ট্রিলারে তা হয়না। ফলে স্বাভাবিকভাবে ফসল উৎপাদনও কম হচ্ছে বলে তিনি জানান।
বাইট: সুব্রত পাল (কৃষক)