নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদাঃ- দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে শ্বশুরমশাইয়ের স্মৃতি আগলে রেখেছেন দুই বৌমা।দেবতার পাশে ছবি রেখে সকাল-সন্ধ্যা পূজাও করছে তাঁরা।কে সে ব্যক্তি যার স্মৃতি আগলে রেখেছেন দুই বৌমা।কি সেই স্মৃতি?
জানা গেছে,সেই মহান ব্যক্তির নাম ছিল নবীন চন্দ্র দাস।বাড়ি চাঁচল থানার কলিগ্ৰাম গ্রামে।প্রথমদিকে
হরিশ্চন্দ্রপুরের চন্ডীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের পদে জোগদান করেন।এরপর তৎকালীন হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসীহাটা জুনিয়র বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা লগ্নে প্রধান শিক্ষকের পদে জোগদান করেন।দীর্ঘ বছর চাকরি করার পর অবসর নিলেও স্কুলের মায়া ত্যাগ করতে না পেরে আবার বিনা বেতনে ক্লার্কের কাজে যোগদান করেন।কিছু বছর সেই পদে থাকার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন।তারপর পরলোকগমন করেন বলে খবর।
কথা হচ্ছিলো তার দৌহিত্র সঞ্জয় দাসের সঙ্গে,সে বাবার মুখে শুনেছে তার ঠাকুরদা মাসে মাত্র ৫০ টাকার বেতনে চন্ডীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে জোগদান করেন।এরপর তুলসীহাটা জুনিয়র বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা লগ্নে প্রধান শিক্ষকের পদে জোগদান করেন।বেতন বেড়ে হয় ৯০ টাকা। তবে বেতন ছয় মাস সরকার দিত বাকি ছয় মাস ছাত্র ছাত্রীরা দিয়ে চালাত।তুলসীহাটাতেই ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।নিজ হাতে রান্না করে খেতেন।এছাড়াও তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি জমি জরিপ ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের কাজ করতেন।স্কুলে সঙ্গে নিয়ে যেতেন হোমিওপ্যাথি ওষুধের বাক্স।কোনো ছাত্র অসুস্থ হয়ে পড়লে বিনামূল্যে ওষুধ দিতেন।অবসরের পর পেনশন হিসেবে ৫০ টাকা পেতেন।সেই টাকা পোষ্ট অফিসের পিওন খামে ভরে বাড়িতে দিতে আসত।ঠাকুরদা নিয়মিত মহাভারত পাঠ করতে।তিনি একজন প্রকৃত প্রেমিক ছিলন।নিজ হাতে অনেক গাছ লাগিয়েছেন।তিনি পৃথিবীতে বেঁচে না থাকলেও স্মৃতি হিসেবে রয়েগেছে তার লাগানো আম গাছ,হোমিওপ্যাথি ওষুধের বাক্স ও বই,মহাভারত,বৃদ্ধ বয়সের শেষ সম্বল লাঠি,জমি জরিপের নক্সা,লোহার চেন, স্কুলের হাজিরা ও হিসাবের খাতা প্রভৃতি।সেগুলো আজও জানান দেয় তার কর্মঠ পরিশ্রমের কথা।
যা আজও সেই স্মৃতি যত্নের সহিত আগলে রেখেছেন দুই বৌমা।
তুলসী হাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক পাক্তন ছাত্র আব্দুল রাজ্জাক জানান,তার শিক্ষক নবীন চন্দ্র দাস একজন চাপা স্বভাবের মানুষ ছিলেন। স্কুলের সকলকে নিয়ে চলার চেষ্টা করতেন।যথেষ্ট জ্ঞানী ছিলেন।এই ধরনের শিক্ষক পেয়ে নিজেকে ধন্য বলে মনে করেছেন।তার বাড়িতে গিয়ে পুরনো স্মৃতি ভাগ করে নিলেন সে।