নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ডিউটি করতে এসে এবারে পুলিশের জালে ভুয়ো সিভিক ভলেন্টিয়ার। দেড় লক্ষ টাকার বিনিময়ে এক সক্রিয় প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার মাধ্যমে মঙ্গলবার ব্যাংকে ডিউটি করতে এসে পুলিশের জালে ধরা পড়ল এক ভুয়ো মহিলা সিভিক ভলেন্টিয়ার। ঘটনাটি ঘটেছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার করিয়ালি বাজার এলাকায়। ভালুকা ফাঁড়ির ইনচার্জ ঝোটন প্রসাদের কানে খবর পৌছাতেই চক্ষু চরক গাছ পুলিশের। সঙ্গে সঙ্গে তদন্তে নামে ভালুকা ফাঁড়ি ও হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ। পুলিশের তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে সামনে। পুলিশ জানিয়েছে ধৃত ওই মহিলার নাম মাঞ্জেরা খাতুন(২৫)। বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার দৌলতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মতিলাল এলাকায়। ওই মহিলাকে ব্যাংক থেকে হাতে নাতে পাকড়াও করে ভালুকা ফাঁড়ির পুলিশ। আপাতত এই মহিলাকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। গোটা ঘটনা জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকায় জুড়ে। আর এই য়ো সিভিক পুলিশ চক্রে শাসকদলের এক প্রভাবশালী নেতার নাম জড়িয়ে যাওয়ায় চরম অস্বস্তিতে শাসকদল। যদিও দলের কেউ জড়িত থাকলে আইন আইনের পথেই চলবে বলে জানিয়েছে তৃণমূল ব্লক নেতৃত্ব। অন্যদিকে তৃণমূলকে খোঁচা দিয়েছে বিজেপি। আর যা নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক চাপানোতোর।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে মঙ্গলবার সকাল বেলায় হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার করিয়ালী বাজার এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে সিভিক পুলিশের পোশাক পড়ে ডিউটি করতে দেখা যায় মাঞ্জেরা খাতুন নামে ওই মহিলাকে।সেখানে আগে থেকে থাকা ভালুকা ফাঁড়ির সিভিক ভলেন্টিয়ারদের ওই মহিলাকে সিভিক ভলেন্টিয়ার এর ড্রেস পরে ঘোরাঘুরি করতে দেখে সন্দেহ হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে এলাকারই এক সক্রিয় তৃণমূল নেতা মহিদুর রহমান ওরফে (মতিবুল) মহিলার কাছ থেকে দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে তাকে আজ করিয়ালি বাজার এলাকায় এই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সিভিক পুলিশের ডিউটি করতে বলে। সেই মোতাবেক মাঞ্জেরা খাতুন নামে ওই মহিলা আজ সিভিক পুলিশের ড্রেস পড়ে ওই ব্যাংকের ডিউটি করতে আসে। সেখানে অন্যান্য সিভিক ভলেন্টিয়াররা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সমস্ত ঘটনা জানতে পারে। খবর পেয়ে ছুটে আসে ভালুকা ফাঁড়ির পুলিশ আধিকারিকরা। ভুয়ো সিভিক ভলেন্টিয়ার ওই মহিলাকে গ্রেফতার করে ভালুকা ফাঁড়ির পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় এলাকারই এক তৃণমূল নেতা মহিদুর রহমান ওরফে (মতিবুল) এই ভুয়ো সিভিক ভলেন্টিয়ার চক্রের পিছনে রয়েছে। তারপরেই এলাকায় তল্লাশিতে নামে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন যদিও অভিযুক্ত ওই তৃণমূল নেতা এলাকা ছাড়া হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ওই ভুয়ো মহিলা সিভিক ভলেন্টিয়ার জানিয়েছে তার স্বামী শাহজাহান ওরফে লাল মোহাম্মদ ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করে। সেখান থেকে ধার দেনা করে স্ত্রীর চাকরির জন্য টাকা পাঠিয়েছিল। এলাকারই এক তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা মহিদুর রহমান জানিয়েছিল দেড় লক্ষ টাকা দিলে মাঞ্জেরা কে সিভিক পুলিশের চাকরিতে ঢুকিয়ে দেবে। এই মাসেই মাঞ্জেরা ওই তৃণমূল নেতার হাতে দেড় লক্ষ টাকা তুলে দেয়। চলতি সপ্তাহে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা মহিদুর রহমান মঞ্জেরা কে জানায় মঙ্গলবার কাজে যোগদান করতে হবে। সেই মোতাবেক মাঞ্জেরা ব্যাংকে এসেছিল কাজের যোগদান করতে।
এদিকে ধৃত ওই মহিলা জানায় এলাকারই এক তৃণমূল নেতা সিভিক পুলিশের চাকরিতে ঢুকিয়ে দেবে বলে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল সেই জন্য তারা ওই তৃণমূল নেতা মহিদুর রহমান ওরফে মতিবুলের হাতে দেড় লক্ষ টাকা নগদ দিয়েছিলেন। ওই নেতার নির্দেশেই তিনি সিভিক ভলেন্টিয়ার এর ইউনিফর্ম বানিয়েছিলেন এবং আজ কাজে যোগ দিতে এসেছিলেন।
এদিকে অভিযুক্ত ওই তৃণমূল নেতা মহিদুর রহমান ওরফে মতিবুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ঘটনার পর থেকেই তার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। মহিদুরের স্ত্রী তহসীমা জানায় সে এ ব্যাপারে কিছু জানে না তার স্বামী কোথায় সে ব্যাপারেও বলতে পারছে না।
এদিকে এই ঘটনাতে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল যুব সভাপতি মনিরুল ইসলাম জানিয়েছে এই ঘটনায় দলের কেউ জড়িত থাকলে দল সেটাকে প্রশ্রয় দেবে না। আইন আইনের পথেই চলবে।
অন্যদিকে গোটা ঘটনাকে তীব্র কটাক্ষ করেছে এলাকার বিজেপি হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের কনভেনার দেবাশীষ পাসওয়ান বলেন রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের একের পর এক দুর্নীতি কথা সামনে আসছে। এর আগেও প্রশাসনিক অধিকর্তা এবং পুলিশ আধিকারিকদের খবর আমরা দেখেছি এরপরে দেখলাম এক তৃণমূল নেতারই মদদে ভুয়ো সিভিক ভলেন্টিয়ার নিয়োগ হচ্ছে, দিনে দুপুরে। এই ঘটনার পিছনে তৃণমূলের বড় মাথা আছে।
এ প্রসঙ্গে ভালুকা ফাঁড়ির ইনচার্জ ঝোটন প্রসাদ জানান আপাতত ওই ধৃত ভুয়ো সিভিক ভলেন্টিয়ার কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির খোঁজও এলাকায় তল্লাশি চলছে।