সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং – ক্যানিংয়ের তালদি এলাকায় এক শিশু বিক্রি চক্রের হদিশ পেলো ক্যানিং থানার পুলিশ। ঘটনার তদন্তে নেমে সদ্যজাত এক শিশুকন্যা কে উদ্ধার করেছে ক্যানিং থানার পুলিশ। অন্যদিকে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চিকিৎসক দম্পতি রমেন্দ্র নাথ নস্কর, নিলীমা নস্কর,ক্রেতা গৌতম সাহা ও তার স্ত্রী মুক্ত সাহা সহ মাখন রায় ও কল্পনা রায় মন্ডল নামে ৬ জন কে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের কে বৃহষ্পতিবার আদালতে তোলা হয়েছে। অন্যদিকে সদ্যজাত শিশুকন্যা ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।ধৃত চিকিৎসক দম্পতি ও ক্রেতা দম্পতির বাড়ি ক্যানিং থানার অন্তর্গত তালদি গ্রাম পঞ্চায়েতের জনকল্যাণ মোড় এলাকায়।ধৃত অপর দুজনের বাড়ি জীবনতলা থানার নাগোরতলা এলাকায়।
স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে তালদির জনকল্যাণ মোড়ের বাসিন্দা রমেন্দ্র নাথ নস্কর আগে চিটফান্ডের এজেন্ট ছিলেন। চিটফান্ড পর্ব চুকে যাওয়া বছর চার আগে আরএইচসিপি ডিগ্রী নিয়ে জনকল্যাণ মোড়ে একটি চেম্বার খুলে চিকিৎসকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়।এলাকাবাসীদের অভিযোগ চেম্বারের আড়ালে মদের রমরমা আসর বসায় ওই চিকিৎসক।সেই ঘটনা নিয়ে এলাকার মানুষজন অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল। এমন কি কয়েকবার ওই হাতুড়ে চিকিৎসকের চেম্বারে তালা মেরে দিয়েছিল এলাকাবাসীরা এমনটাই দাবী।
বুধবার দুপুর নাগাদ এক গর্ভবতী মহিলা হাজীর হয় ওই চিকিৎসকের চেম্বারে। সেখানে একটি কন্যা শিশুর জন্ম দেয় ওই মহিলা। এবপর ওই চিকিৎসক শিশুটিকে বিক্রির জন্য বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর শুরু করে।চিকিৎসকের চেম্বার থেকে ঢিল ছোড়া দুরত্বে গৌতম সাহার স্ত্রী মুক্ত সাহার সাথে যোগাযোগ হয়।মুক্ত সাহা নামে ওই গৃহবধুর দীর্ঘ ১১ বছর আগে বিয়ে হয়। তার কোন সন্তান না হওয়ায় তিনি ওই শিশু কন্যা কে কিনতে রাজী হয়ে যায়।সেই মতো তিনি ওই হাতুড়ে চিকিৎসক কে কুড়ি হাজার টাকা দেবেন বলে শিশু টিকে বাড়িতে নিয়ে চলে যায় অভিযোগ গ্রামের বাসিন্দাদের।
বুধবার রাতে এমন খবর প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসে স্থানীয় তালদি অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের মহিলা সংগঠনের নেত্রীরা।তাঁরা ঘটনার কথা ক্যানিং থানার পুলিশ কে জানায়।ঘটনাস্থলে ক্যানিং থানার পুলিশ হাজীর হয়।সেখান থেকে অভিযুক্ত ৬ জন কে গ্রেফতার করে। উদ্ধার হয় সদ্যজাত কন্যশিশু।
স্থানীয় তালদি অঞ্চল মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী বর্ণালী নাইয়া বলেন ‘হাতুড়ে ডাক্তারের নামে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এদিন আমরা হাতেনাতে ধরতে পেরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। ’
মহিলা সমিতির অপর এক সদস্যা সঙ্গীতা ভান্ডারী বলেন ‘কন্যা শিশু কে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ দর কষাকষি হচ্ছিল। কেউ দু হাজার,আবার কেউ বা কুড়ি হাজার টাকা দিয়ে কিনতে চাইছিলো। সেই সময় মুক্ত সাহা নামে জনকল্যাণ মোড়ের এক গৃহবধু কুড়ি হাজার টাকা দিতে রাজী হয়।কন্যা শিশু কে নিয়ে বাড়িতে চলেও যায়। তার স্বামী গৌতম সাহা কলকাতা থেকে ফিরলে টাকা দেবে বলে হাতুড়ে চিকিৎসক কে জানায়।পরে টাকা লেনদেন হয়েছেরকি না জানা যায়নি। আমরা ব্যাপারটার গুরুত্ব বুঝে পলিশ কে খবর দিই। ’
স্থানীয় তথা ক্যানিং ১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদক অঞ্জন ঘটক বলেন ‘ওই হাতুড়ে চিকিৎসকের নামে এর আগে বহুবার অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি চেম্বারে মদের আসর বসাতো। বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই আসল ঘটনা জানা যায়। আমরা পুলিশকে ঘটনার কথা জানিয়েছি।পুলিশ উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে।’
অন্যদিকে ক্যানিং ১ ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষা অসীমা নস্কর জানিয়েছেন ‘একজন হাতুড়ে ডাক্তার কি ভাবে গর্ভপাত করায়!যেখানে বড় বড় সরকারী হাসপাতাল রয়েছে। তারপর ওই ডাক্তার চেম্বারের মধ্যে মদের আসর বসায়,অবৈধ কর্মে লিপ্ত।আমরা পলিশ কে জানিয়েছি। পুলিশ আইনত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
ক্যানিং থানার পুলিশ ঘটনায় অভিযুক্তদের কে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়ে রহস্য উন্মোচন করতে তদন্ত শুরু করেছে।
Home রাজ্য দক্ষিণ বাংলা তালদিতে শিশু বিক্রি চক্রের হদিশ,গ্রেফতার চিকিৎসক ৬,উদ্ধার সদ্যজাত শিশুকন্যা।