সুন্দরবনে দশভূজার আগমনের আগেই অরন্ধন পালন করে অকাল বোধনী মনসা পুজোয় মেতে ওঠেন গ্রামের মানুষ।

0
555

সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং: —সালটা বাংলা ১৩৭৭। দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার প্রত্যন্ত সুন্দরবনের ক্যানিং ১ ব্লকের ইটখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের মাতলা নদীর তীরে অবস্থিত গোলাবাড়ির দক্ষিণ বুধোখালি ও মধুখালি গ্রামে ব্যাপক হারে সাপের উপদ্রপ দেখা দেয়। সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীর। সেই সময়ের কুসংস্কার রীতিনীতি অনুযায়ী কলার ভেলায়(মান্দাস) করে মৃতদেহ গুলো নদী বক্ষে ভাসিয়ে দেওয়া হতো। যদি মৃতদেহের শরীরে পুনরায় জীবনের সঞ্চার ঘটে। সাপের কামড়ে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় আতঙ্কে গ্রামবাসীরা পালিয়ে অন্য গ্রামে চলেও যায়।তা স্বত্বেও আতঙ্কের পরিবেশ কমেনি বরং বেড়েছিল সাপের কামড়ে মৃতের সংখ্যা।বছরের পর বছর সাপের কামড়ে মড়ক লাগায় অবশেষে আজ থেকে প্রায় ৫২ বছর আগে পাড়ার মোড়লরা-মাতব্বর সাপের উপদ্রব নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় “অকাল বোধনী মনসা পূজো” দিয়ে এবং কলার ভেলা(মান্দাস)তৈরী করে মাতলা নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে মা কে সন্তুষ্টী করে গ্রামে বসবাস করা হবে।পাশাপাশি পুজোর দিনে গ্রামের সমস্ত পরিবারে অরন্ধন পালিত হবে।আশ্চর্য্যের বিষয় গ্রামের মধ্যে মহা ধূমধাম করে অকাল বোধনী মনসা পুজো শুরু হতেই বন্ধ হয় সাপের উপদ্রপ।এরপরই গ্রামের মানুষজন গ্রামেই ফিরেই বসবাস শুরু করেন। সেই ৫২ বছর আগের নিয়মনীতি অনুযায়ী ইটখোলার দক্ষিণ বুধোখালি ও মধুখালি গ্রামের সকল পরিবার গুলি ভ্রাদ্র মাসের শুরুতেই দেবী দশভূজার আগমনের আগেই অকাল বোধনী মনসা পূজোয় মেতে ওঠেন।
বিগত দিনের সেই নিয়ম রীতি অনুযায়ী সমগ্র গ্রামে অরন্ধন পালন করে মঙ্গলবার আয়োজিত হয়েছিল মা মনসা’র পুজো।সুন্দরবন ভাবে সুসজ্জিত করে সাজিয়ে তৈরী করা হয়েছিল কলার ভেলা(মান্দাস)। পুজোর শেষে কলার ভেলা(মান্দাস) মাতলা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।

এদিন অকাল বোধনী মনসা পুজো উপলক্ষে বিশ্বজিৎ সরদার,নারান সরদার,গণেশ চন্দ্র নস্কর,প্রণব হালদার,চন্দনা সরদার,সরলা সরদার সহ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ মাতলা তীরে অকাল বোধনী মনসা পুজোয় মেতে উঠে মাতলা নদীতে নেমে কলার ভেলা ভাসিয়েছিলেন।
স্থানীয় যুবক তথা সমাজসেবী ইন্দ্রজিত সরদার জানিয়েছেন ‘গ্রামের মোড়ল মাতব্বর সহ পরিবারের বাপ-ঠাকুর্দা’রা দীর্ঘদিন ধরেই এমন অকাল বোধনী মনসা পুজোর আয়োজন করে পুজো দিয়ে আসছেন গ্রামের মঙ্গল কামনায়।বিগত দিনের সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আজও গোলাবাড়ির প্রত্যন্ত এই গ্রামে নিষ্ঠা সহকারে মনসা পুজো হয়ে আসছে। যা দেখতে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন ভীড় করেন।’