নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা:-এবার চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠল চাঁচল মহকুমা আদালতের এক সরকারি আইনজীবীর বিরুদ্ধে। এমনকি ১৮ লক্ষ টাকা নিয়ে ভুয়ো নিয়োগপত্রও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ পেয়েই প্রতারণার মামলা করেছে পুলিশ। এদিকে ওই প্রতারণার অভিযোগের খবর করতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হলো সংবাদমাধ্যমকে। জুনিয়র কয়েকজন আইনজীবী তিন সাংবাদিকদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে মারধর করে বলে অভিযোগ। রাতে আক্রান্ত তিন সাংবাদিকও পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চাঁচল মহকুমা আদালতের এক সরকারি আইনজীবী মোতাসির আলম চাকরি দেওয়ার নামে ১৮ লক্ষ টাকা নেন। এমনই অভিযোগ করেছেন চাঁচলেরই শীতলপুর এলাকার আসিরুদ্দিন। পিপি মোতাসির আলমকে তিন দফায় নগদ ১৮ লক্ষ টাকা দেন বলে তার অভিযোগ। আসিরুদ্দিনের অভিযোগ, চাঁচলে কোর্টে তার পরিবারের তিনজন সদস্যকে চাকরি দেবেন বলে ওই টাকা নেওয়া হয়। সরকারি আইনজীবী হওয়ায় আদালতে তার চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে ও সেই ফাঁদে পা দিয়েই তাকে টাকা দেন বলে দাবি আসিরুদ্দিনের। সম্প্রতি মতাসির ভুয়ো সিল, সই করা তিনটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারও তাদের হাতে দেন। কিন্তু কয়েকজনকে দেখানোর পর ওই এপয়েন্টমেন্ট লেটারগুলি দেখে সন্দেহ হয়। অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারগুলি জাল বলে নিশ্চিত হওয়ার পর টাকা ফেরত চেয়ে মোতাসির আলম কে ফোন করেন আসির উদ্দিন। ফোনে না পেয়ে তার বাড়িতে যান। কিন্তু তিনি বাড়িতে নেই জানানোর পর পুলিশের দ্বারস্থ হন আসির উদ্দিন। অভিযোগ পেয়েই নির্দিষ্ট ধারায় মামলা শুরু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। চাকরি দেওয়ার নামে সরকারি আইনজীবীর বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার বিষয়টি সামনে আসতেই ক্ষুব্দ আদালতের আইনজীবীদের অনেকেই। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে বৃহস্পতিবার সকালে আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা কামালের কাছে যান তিন সাংবাদিক। সভাপতির প্রতিক্রিয়া নেওয়ার পর ছবি তুলতে গেলে কয়েকজন জুনিয়র আইনজীবী তিন সাংবাদিককে হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ। তিন সাংবাদিককেই মারধরের পাশাপাশি একজনের ফোনও কেড়ে নেওয়া হয়। কোনওমতে প্রাণ হাতে কোর্ট চত্বর থেকে বেরিয়ে আসেন সাংবাদিকেরা। আহত অবস্থায় চাচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। এরপর মহকুমার সমস্ত সাংবাদিকেরা মিলে চাঁচলের কেন্দ্রবিন্দু নেতাজি মূর্তির সামনে ৮১ নম্বার জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে চাঁচলের আইসি পূর্ণেন্দু কুন্ডু তদন্তের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। রাতে বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ জানান আক্রান্ত সাংবাদিকরা। তবে ঘটনার জেরে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, আইনের দরবারে গিয়ে আইনের রক্ষকদের হাতে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভকে কেনো আক্রমণের শিকার হতে হল। ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষেরা। পাশাপাশি সাংবাদিকদের উপর আক্রমনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে রাজ্যের ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী তজমুল হোসেন এবং উত্তর মালদহের সাংসদ খগেন মুর্মুও। যদিও গোটা ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত প্রতারক আইনজীবীর কোনরকম প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।