নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা:-দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থা রাস্তার। বর্ষাকালে দেখলে বোঝা যাবে না রাস্তা না কোন ছোট-খাটো জলাশয়। বারবার বলার পরেও হয়নি সংস্কার। বিক্ষোভ এলাকাবাসীর। বেহাল রাস্তা নিয়েও তুঙ্গে তৃণমূল- বিজেপির রাজনৈতিক তরজা। মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত সুলতান নগর গ্রাম পঞ্চায়েতের নানারাই গ্রামের নানারাই থেকে হাজীপুর, রাধিকাপুর হয়ে বিহার যাওয়ার রাস্তার অবস্থার বেহাল দশা। এতটাই খারাপ রাস্তার অবস্থা প্রায় হাঁটু সমান কাদা জল জমে থাকছে সব সময়। চলাচলের অযোগ্য রাস্তা। বাইক বা সাইকেল নিয়ে যেতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছে মানুষজন। ওই রাস্তা দিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে সমস্যার মুখে পড়ছে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। এলাকার কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে আরো বিপাকে পড়তে হচ্ছে। কারণ ওই রাস্তা দিয়ে আসতে চাইছে না এম্বুলেন্স। ফলে অসুস্থ রোগীকে খাটে করে নিয়ে রাস্তা পার করতে হচ্ছে। এমনকি এলাকার মেয়েদের বিয়ে ঠিকের ব্যাপার থাকলে বাইরে থেকে পাত্র পক্ষ আসতে চাইছে না রাস্তার অবস্থা দেখে। বহু বছর ধরে এরকম অবস্থা রাস্তার। এদিকে ২০১৮ সাল থেকে সুলতান নগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় রয়েছে শাসকদল। স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে ব্লক বারবার অভিযোগ জানিয়েছে গ্রামবাসীরা। ভোটের আগে রাস্তা মেরামতি করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও ভোট পেরিয়ে গেলে আর দেখা পাওয়া যায়নি জন-প্রতিনিধিদের। এমনকি গ্রামবাসীদের অভিযোগ স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানকে ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয় না, বলে তিনি রাস্তা ঠিক করার ব্যাপারে কর্ণপাত করছেন না। এক কথায় বেহাল রাস্তা নিয়ে নাজেহাল এলাকাবাসী। তাই এবার কর্দমাক্ত রাস্তায় ধানের চারা রোপণ করে দেখানো হল অভিনব প্রতিবাদ। এদিন ধানের চারা লাগিয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে গ্রামবাসীরা। সঙ্গে অতি দ্রুত রাস্তা ঠিক না করলে পঞ্চায়েত ভোট বয়কট করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। এদিকে রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে আঙুল তুলেছে শাসক দল। পাল্টা দুর্নীতি নিয়ে শাসকদলকে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপি।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। ছেলে মেয়েরা স্কুল যেতে গিয়ে পড়ে যায়। গাড়ি চলাচলের একদম অযোগ্য। এলাকার কেউ হঠাৎ অসুস্থ হলে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। ব্লক থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত সব জায়গায় বলেছি কোন কাজ হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা তফিজুল বলেন, বহু বছর ধরে রাস্তার এরকম অবস্থা। এখান থেকে হরিশচন্দ্রপুর হাসপাতাল প্রায় ৮ কিলোমিটার। কারোর প্রসব যন্ত্রণা উঠলে খাটে করে রাস্তা পার করতে হয়। পঞ্চায়েত প্রধান বলছে এই রাস্তা ঠিক করার দরকার নেই তাই করছে না। আমরা বিক্ষোভ করছি রাস্তা সংস্কার না হলে ভোট বয়কট করব।
মালদা জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল খান বলেন, এর আগে দীর্ঘ সময় ধরে কংগ্রেস ওই পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় ছিল কিন্তু কোন রাস্তার কাজ হয়নি। আমরা আসার পর বহু কাজ হয়েছে। কিছু বাকি আছে। কেন্দ্র সরকার এনআরজিএস প্রকল্পের টাকা আটকে দেওয়াই সেই কাজ গুলো হচ্ছে না। আসলে বিজেপি কংগ্রেস সিপিআইএম মিলে আমাদের বদনাম করার চেষ্টা করছে।
পাল্টা উত্তর মালদা জেলা বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুপেশ আগরওয়াল তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, রাস্তার এত বেহাল দশা কিন্তু সংস্কার করেনি। চারিদিকে এরা দুর্নীতি করছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নিয়ে নয় ছয় করেছে তাই কেন্দ্র সরকার টাকা দেওয়া বন্ধ করেছে। কিছুদিন পর কেন্দ্রের তদন্তকারী দলে আসলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
হরিশ্চন্দ্রপুর ২ বিডিও বিজয় গিরি বলেন আমরা শুনেছি। আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। খোঁজখবর নিয়ে সেই রাস্তার কাজ দ্রুত করা হবে।
যুগ এগোচ্ছে প্রযুক্তিগত উন্নতি হচ্ছে। ঝুড়িঝুড়ি উন্নয়নের কথা বলছে সরকার। কিন্তু দেখা যাচ্ছে একটি গ্রামের রাস্তা এতটাই বেহাল সেখান দিয়ে মানুষজন চলাচল করতে পারছে না। অর্থাৎ এলাকাবাসী প্রাথমিক পরিসেবা টুকুও পাচ্ছে না। যা অনভিপ্রেতো।