ফুলহার নদীর জল বারতেই চিন্তায় এলাকাবাসী,ব্যাপক হারে জল বাড়তে শুরু করেছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার ফুলহার নদীর।

0
225

নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদাঃ-ফুলহার নদীর জল বারতেই চিন্তায় এলাকাবাসী,ব্যাপক হারে জল বাড়তে শুরু করেছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার ফুলহার নদীর। এলাকায় তেমন বৃষ্টি না হলেও বিহার থেকে আসা গঙ্গার জলে ব্যাপক ভাবে জল বেড়েছে ফুলহার নদীতে। জল বৃদ্ধি শুরু হতেই নদীর দক্ষিণ প্রান্তে থাকা উত্তর এবং দক্ষিণ ভাকুরিয়া এলাকায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলের তলায় চলে গিয়েছে। পুজোর প্রাক্কালে ভাঙ্গনের আতঙ্কে কার্যত দিশেহারা এলাকাবাসী। কয়েকশো বিঘা ধান এবং পাটের জমি নদী গর্ভে চলে গিয়েছে। দ্রুত জল বেড়ে যাওয়ায় সেই পাট বা ধান কাটার সুযোগ মেলেনি স্থানীয় গ্রামবাসীরা। এদিকে ভাকুরিয়া এলাকায় থাকা রিং বাদে ৩-৪ জাগাতে ফাটল ধরে গিয়েছে এবং সেই ফাটল দিয়ে হু হু করে ভেতরে জল ঢুকছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এলাকার বাসিন্দাদের আরো অভিযোগ দীর্ঘ কুড়ি বছরের বেশি সময় ধরে ফুলোহরের জল বাড়লে চরম দুর্দশায় পড়তে হচ্ছে ভাকুরিয়া এলাকার বাসিন্দাদের। নেই পানীয় জল খাবার বিদ্যুৎ এমনকি এলাকায় থাকা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মিলছে না কোন ওষুধ। চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য কোন চিকিৎসক বা আশা কর্মীদেরও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। চারিদিকে জল। বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো এলাকায় দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন ভাকুরিয়া বাসী। সমানে ফুলহর নদী থেকে জল ভাকুড়িয়ায় প্রবেশ করে চলেছে। যে কোনো মুহূর্তে জলের তলায় চলে যাবে বেশ কয়েকটি গ্রাম। কিন্তু এখনো পর্যন্ত প্রশাসনিক কর্তা দূর দেখা মেলেনি কোন জন-প্রতিনিধির। হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের নব-নিযুক্ত মন্ত্রী তাজমুল হোসেন এবং বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর পর্যন্ত দেখা পাননি ভাকুরিয়া এলাকার বাসিন্দারা।

সোমবার তারা এলাকায় বিক্ষোভ পর্যন্ত দেখিয়েছেন।বাসিন্দাদের অভিযোগ দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে এই অঞ্চলের একই অবস্থা হয় প্রতিবার বর্ষাকালে। পানীয় জল,পশু খাদ্য, শিশু খাদ্য এমনকি ওষুধ পর্যন্ত পাওয়া যায় না। জল বাড়লেও প্রশাসনের নৌকার ব্যবস্থা পর্যন্ত করেনি এখনো পর্যন্ত। এতটাই বাজে অবস্থা যে এলাকার কেউ অসুস্থ হলে এমনকি গর্ভবতী নারীদেরকে সদর হরিশচন্দ্রপুর এলাকার কোন হাসপাতালে নিয়ে যেতে গেলে নৌকার অভাবে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বিনা চিকিৎসাতে ভগবানের ভরসায় থাকতে হচ্ছে মরণাপন্ন রোগীদের এমনকি গর্ভবতী মহিলাদের প্রসব বেদনা উঠলেও হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই তাই স্থানীয় ভাবে প্রসব করাতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে মা ও শিশুর বলে দাবি গ্রামবাসীদের। পাশাপাশি আরো অভিযোগ প্রতিবার ভোট আসলে জন-প্রতিনিধিদের দেখা মেলে এলাকায়। প্রতিশ্রুতি ফুলঝুরি ছুটে। এখন মন্ত্রী বিধায়ক থেকে সাংসদ কারো দেখা মিলছে না এই দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে। ভাই বাধ্য হয়ে সোমবার এলাকায় জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন গ্রামবাসীরা। খাওয়ার জল ওষুধ না পেয়ে কার্যত মন্ত্রী এবং সাংসদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন ভাকুরিয়ার বাসিন্দারা। তারা জানিয়েছেন ইতিমধ্যেই নদী পার্শ্ববর্তী রিং বাঁধে তিন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। গতবছর ই এই বাদ মেরামত করার জন্য ৩ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছিল গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে। কিন্তু কোন রকম পাইলিং বা মাটি ভরাট পর্যন্ত করা হয়নি বলে দাবি এলাকার বাসিন্দা দের । তাই এবার জল বাড়তেই আবার ওই ফাটল দিয়ে গ্রামের ভেতরে জল ঢুকতে শুরু করেছে। কিন্তু এখনো অব্দি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ উদ্যোগ দেখা যায়নি প্রশাসনিক মহল থেকে। এদিকে মালদা সেচ দপ্তর জানিয়েছে ফুলহরের জল বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে। এই ফুলহরের জলের উচ্চতা ২৭ দশমিক ৫০ মিটার উপর দিয়ে বইছে।

স্থানীয় বাসিন্দা রূপবতী মন্ডল বলেন, প্রচন্ড সমস্যার মধ্যে দিয়ে দিন কাটছে গ্রামবাসীদের। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন। হাসপাতাল আছে কিন্তু ডাক্তার নার্স আসতে পারছে না। কেও অসুস্থ হলে পর্যাপ্ত ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। এইভাবে থাকা যায় না।

স্থানীয় বাসিন্দা জনার্দন মন্ডল বলেন, প্রায় ৩০-৩৫ বছর ধরে নদী ভাঙ্গনে বিপর্যস্ত উত্তর ভাকুরিয়া। কিন্তু ভোটের সময় ছাড়া নেতা জন-প্রতিনিধিদের দেখা মেলে না। না সংসদ আসে না আসে বিধায়ক। আমাদের কথা কেউ ভাবে না।

স্থানীয় বাসিন্দা বিভূষণ মন্ডল বলেন, নদীর জলে হাজার হাজার বিঘা জমি চলে গেছে। আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে একটা দ্বীপের মধ্যে বসবাস করছি। কিন্তু কোন জন-প্রতিনিধিদের দেখা মিলছে না। কোন গর্ভবতী মহিলাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য নৌকা নেই। কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা করাতে পারছি না।

স্থানীয় বাসিন্দা বিনোদ মন্ডল বলেন, আমরা আমাদের গ্রাম বাঁচানোর জন্য বিক্ষোভ করছি। কুড়ি পঁচিশ বছর ধরে নদী গর্ভে গ্রাম তলিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোন সরকার আমাদের জন্য ভাবছেনা কাজ করছে না। ভোটের সময় আসে ভোট ফুরোলেই ভুল ভুলে যায়।

উত্তর মালদহের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, একমাত্র শুধু আমরাই ঐ গ্রামে গেছি। আমি নৌকো করেও গেছি অন্য সময়তেও গেছি। এই রাজ্যের শাসক দল কাটমানি ছাড়া কোন কাজ করে না। বামুন রোডের জন্য জেলাশাসককে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকতে বলেছি। একমাত্র আমরাই চাই এই সমস্যার সমাধান হোক।

হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তবারক হোসেন বলেন, আমরা এই খবরটি শুনতে পেয়েছি। খুব দ্রুত আমাদের জনপ্রতিনিধিরা ওই গ্রামে যাবে। তাদের সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা হবে। বিডিও অফিসে আপাতত যেটুকু ত্রাণ আছে সেই ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে। যা করার আমরাই করব। বিজেপির সাংসদ পরিযায়ী সাংসদ উনি কিছু করতে পারবেন না।

নদী ভাঙ্গন সমস্যা মালদা জেলার দীর্ঘ দিনের সমস্যা। কিন্তু বারবার কেন্দ্র-রাজ্য তরজার মাঝে পড়ে এই সমস্যার সমাধান হয়নি। নদী ভাঙ্গান সমস্যার জেরে কার্যত বিচ্ছিন্ন একটি গ্রাম। সরকার বা প্রশাসনের কাছ থেকে তারা তাদের ন্যূনতম পরিষেবা টুকু পাচ্ছে না। প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধির রাজনৈতিক তরজা ভুলে কতদিনে টনক নড়ে তাই দেখার বিষয়।