আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ কলকাতার ঐতিহাসিক “ভারতসভা” সভাগৃহে বাংলা সাহিত্যের জগতে এক নতুন সাহিত্য সৃষ্টির সূচনা হয়ে গেল। প্রকাশিত হলো “কবিতা কোরাস”। এই “কবিতা কোরাস” একটিমাত্র কবিতার বই অর্থাৎ এই বইয়ের মধ্যে একটিই কবিতা আছে,সেই কবিতাটির নাম “একটি কবিতার কথা”এবং এই কবিতাটি ৮০ পাতার একটি সম্পূর্ণ কবিতা। এই কবিতা কোরাসের সম্পাদক অরিজিৎ ঘোষ। তাঁর মাথাতেই প্রথমে ভাবনাটি আসে যে যদি একটাই গান একসাথে অনেকে মিলে গাওয়া যায় যেটাকে আমরা কোরাস গান বলে থাকি, তাহলে অনেকে মিলে একটা কবিতা কেন লেখা যাবে না, যদিও গান ও কবিতা সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস এবং কবিতার ক্ষেত্রে এরকম করা সত্যিই এক কঠিন ও দুরূহ কাজ, তবুও এই চিন্তাটি মাথায় আসার পর কুড়িজনকে সঙ্গে নিয়ে মোট ২১ জন মিলে একসাথে তাঁরা একটি কবিতা লেখা শুরু করেন। প্রতিদিন তাঁরা প্রত্যেকে চার লাইন করে লিখতেন এবং পরবর্তী চার লাইন অন্য একজন কবি আগের লাইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তিনিও চার লাইন লিখতেন। এইভাবে প্রত্যেকে প্রতিদিন চার লাইন লিখতে লিখতে ২৯ দিন ধরে এই কবিতা লেখা চলে। তারপরেই একটি বিশাল বড় কবিতার জন্ম হয় যা আশি পাতা জুড়ে আছে এবং কবিতার বিষয়বস্তু বর্তমান সমাজের নানারকম সমস্যা ও তার প্রতিকার,আশা,নিরাশা, প্রতিবাদ,অভিযোগ ইত্যাদি প্রভৃতি, নিয়েই,,, বলা যেতে পারে এই একটি কবিতাই আমাদের বর্তমান সমাজের এক চালচিত্র। এই বইটির যেদিন আত্মপ্রকাশ ঘটে সেদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের নিজ ভাই সৈয়দ কওসর জামাল যিনি নিজেও একজন প্রখ্যাত সাহিত্যিক,কবি এবং ফরাসি ভাষাবিদ এবং অল ইন্ডিয়া রেডিওর একজন অবসরপ্রাপ্ত বড় অফিসার এবং কর্মযোগী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কবি অনীক রুদ্র এবং কবি মেঘ বসু। সৈয়দ কওসার জামাল তাঁর মূল্যবান বক্তব্যে একথা স্বীকার করে নেন যে বাংলা সাহিত্যের জগতে ২১ জন মিলে এত বড় একটি দীর্ঘ কবিতার জন্ম বাংলা সাহিত্যে এই প্রথম। কবি অনীক রুদ্র একই কথা বলেন যে ২১ জন মিলে এত বড় একটি দীর্ঘ কবিতা এর আগে বাংলা সাহিত্যে কখনো রচিত হয়নি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল গুণীজন তাদের মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন এবং এই ধরনের ব্যতিক্রমী সাহিত্য সৃষ্টিতে তাঁরা অন্যদের অনুপ্রাণিত করেন। এই ২১ জন কবির প্রত্যেকের সমান অবদান। উৎকর্ষতার দিক থেকে বইটি অবশ্যই ভালো এবং বিষয়টি অবশ্যই ব্যতিক্রমী এবং সেদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন বিশিষ্ট বক্তার কথায় বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে এই ধরনের নানারকম পরীক্ষামূলক সৃজন আরো যত বেশি হবে বাংলা সাহিত্যের ধারা তত দ্রুত এগিয়ে যাবে এবং নানা রকম অভিনব সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের ধারা প্রবাহমান থাকবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের কবিতা আরো লেখা হবে বলেই আশা করা যায় কবিতার সমস্ত রকম উৎকর্ষতা বজায় রেখে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কবিতা কোরাসের সম্পাদক কবি অরিজিৎ ঘোষ। তিনি তার কুড়ি জন সহযোদ্ধাদের নিয়েই এক নতুন ধরনের সাহিত্য সৃষ্টির প্রথম সূচনা করলেন যা অবশ্যই কৃতিত্বের দাবি রাখে এবং বাংলার সাহিত্য জগতের ক্ষেত্রে এক অভিনব যাত্রাপথ শুরু হল। একথা অনস্বীকার্য যে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই সাহিত্যকর্ম এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেখানে সমালোচনা,তা নিয়ে কাটাছেঁড়া,প্রশংসা সাধুবাদ ইত্যাদি অবশ্যই থাকবে। আমরা একুশের “কবিতা কোরাস” এ রকমই এক অভিনব সৃষ্টি।