আবদুল হাই,বাঁকুড়াঃ- বালুচরী নামের মধ্যেই রয়েছে আভিজাত্য,প্রতিটি শাড়ি যেন কথা বলে৷প্রতিটি সুতোর টানে যেন নিজস্ব একটা কথন আছে,কোথাও ফুটে উঠেছে টেরাকোটার কারুকাজ তো কোথাও মহাভারতের গল্প কোথাও আবার আদিবাসী নৃত্য ৷
বাঙালির শাড়ির সম্ভারে বছরের পর বছর ধরে স্বমহিমায় বিরাজমান বালুচরী ৷ নবাবী এই শাড়িগুলি কোনওটি তৈরি করতে সময় লাগে এক মাস কোনওটি আবার পনেরো দিন । এক একটা শাড়ির দাম 6 হাজার টাকা থেকে শুরু করে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আছে ৷বালুচরীর ইতিহাস বলতে, এটি শুরু হয়েছিল মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ সংলগ্ন বালুচর নামে কোনও এক এলাকায় ৷ অনেক নথি আবার বলছে, জিয়াগঞ্জেরই পূর্বনাম ছিল বালুচর সেই বালুচর নাম থেকেই এসেছে বালুচরী নাম ৷ শিল্পীদের কাছে বালুচরীর বয়ন এক সাধনার মতো ছিল ৷ সেই সময় নবাবরা তাঁদের বেগমদের জন্য শাড়ি বানাতেন বালুচরের শিল্পীদের দিয়ে,কালক্রমে গঙ্গাগর্ভে হারিয়ে যায় এই বালুচর প্রদেশ ৷ এরপর কালের নিয়মে হারিয়ে যায় বালুচরী শাড়ি, মাঝে পেরিয়ে যায় অনেকটা সময়।দীর্ঘদিন পর এর কিছু নকশা শুভ ঠাকুরের হাত ধরে বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত কারুকার্য শিল্পী অক্ষয়দাস পাঠরাঙার হাতে আসে ৷ তার পর বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের পৃষ্টপোষকতায় বালুচরী শিল্পের নবজাগরণ ঘটে।
সেই আভিজাত্যকে বজায় রেখে পূজোর সম্ভারে আবারো সেজে উঠেছে বালুচরী।প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও অভিনবত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন বর্তমান প্রজন্মের বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত বালুচরী শিল্পী অমিতাভ পাল। এবারে তার নতুন ডিসাইনের শাড়ির নাম রেখেছেন *অরুনিমা*। এই শাড়িতে সুতোর কাজ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অবক্ষয় বন্ধ করার আবেদন করা হয়েছে। পাখিকে খাঁচায় বন্দী,সাপ খেলা দেখানো,গাছ কাটা,বাঁদর খেলা দেখানো এই চারটি সামাজিক কালিমাকে দূর করতে আবেদন জানিয়েন শিল্পী।এর পাশাপাশি এই *অরুনিমা* তে সুন্দর করে সুতোর বয়নে বিভিন্ন প্রাকৃতিক জীব যা অবলুপ্তির পথে যেমন বাজপাখি,বার্তা প্রেরক পায়রা,বনের হরিণ এগুলির কোথাও সুন্দরভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে।শাড়িটির বর্তমান বাজার মূল্য ২০ হাজার টাকা নির্ধারন করা হয়েছে। সুতোর কাজ যেন সত্যিই কথা বলেছে, একবার সামনে থেকে না দেখলে বিশ্বাস করা যেন দায়। শিল্পীর নিপুন হাতের স্পর্শে বালুচরী যেন প্রাণ পেয়েছে।
ইতিমধ্যেই মল্লগড়ের এই বালুচরী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়িয়ে বিদেশেও পাড়ি দিয়েছে, চাহিদাও আছে বর্তমান বাজারে। এই নবাবী শাড়ির ব্যাপ্তি যদি যাতে আরো সুদীর্ঘ হয় এই আশায় বুক বাঁধছেন শিল্পীরা।
বাইট- অমিতাভ পাল(বালুচরী শিল্পী)