মনিরুল হক, কোচবিহার: আবহাওয়ার তারতম্যে আমন ধানে রোগ পোকার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। কোচবিহার জেলা জুড়ে বিক্ষিপ্ত ভাবে ধ্বসা ও ঝলসা রোগ দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে শতাধিক হেক্টর ধান খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে চিন্তিত আমন ধান চাষিরা। জেলা উপকৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) গোপালচন্দ্র মান বলেন, এই রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে জেলা কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে সচেতনতা মূলক শিবির, লিফলেট বিলি, প্রচারাভিযান এবং চাষিদের সতর্ক করা হচ্ছে।
অনাবৃষ্টিতে শুরুতে আমন ধান চাষে হোঁচট খেতে হয়েছে চাষিদের। পরে বৃষ্টি নামলে দেরিতে হলেও ধান রোপন করেছেন চাষিরা। ভারী বর্ষনে বিস্তৃর্ন এলাকা জলমগ্ন হয়। বর্তমানে উচ্চ তাপমাত্রা ও বাতাশে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় এই রোগের আক্রমণ ও প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। সময়মতো রোগ নিয়ন্ত্রণ করা না হলে ফলন এক ধাক্কায় অনেকটাই কমার আশঙ্কা রয়েছে। গোটা জেলার পাশাপাশি মাথাভাঙ্গা মহকুমা শীতলকুচি, নিশিগঞ্জ, নয়ারহাট, পচা গড়, ঘোকসাডাঙ্গা, মাথাভাঙ্গাতে বহু খেত আক্রান্ত হয়েছে। মাথাভাঙ্গার আমন চাষি হামিদার মিয়া, বলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ধান রোপন বিলম্ব হয়েছে। ধ্বসা রোগের প্রকোপ দেখা দেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। শীতলকুচির চাষি বীরেন বর্মনের কথায়, কীটনাশক স্প্রে করেও রোগ সাড়ছে না। এমন চলতে থাকলে আশানুরূপ ফলন নিয়ে সংশয়ে রয়েছি।
জেলা কৃষি দপ্তরের সূত্রে খবর, চলতি মরশুমে জেলায় ২ লক্ষ ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। বছরে গড়ে ২ লক্ষ ১১ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়। গড়ে ৯.৬৮৬২৫ লক্ষ মেট্রিক টন ধান উৎপন্ন হয় প্রতি বছরে। জেলা কৃষি দপ্তরের সহ অধিকর্তা (প্রশিক্ষণ) রজত চট্টোপাধ্যায় বলেন, এটি একটি ছত্রাকঘটিত রোগ। চাষিদের সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে অসাম্যতা সহ অন্যান্য কারণে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে হেক্সাকোনাজেল ৫% ইসি, টেবুকোনাজল ২৫.৯%, ভ্যালিডামাইসিন ৩%এল, ট্রাইসাইক্লাজল ৭৫% ডব্লিউপি, ট্রাইফল্কসিস্ট্র্যাবিন ৫০% ডব্লিউডিজি নির্দিষ্ট পরিমাণে স্প্রে করলে প্রতিকার পাওয়া যাবে।
চাষিদের উদ্দেশ্যে তার পরামর্শ, বাইরে থেকে অনেক সময় রোগাক্রান্ত ফসল তেমন বোঝা যায় না। ধানের জমির ভেতরে ঢুকে পর্যবেক্ষণ করলে বিষয়টি উপলব্ধি করা যায়। সমস্যা দেখা দিলেও কখন কি প্রয়োগ করতে লাগবে সে সমন্ধে অনেক চাষি ওয়াকিবহাল নন। যে কোন সমস্যায় কৃষি দপ্তরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এই মরশুমে আমন চাষে যদি এ ধরনের ধসা, মাজরা পোকা ইত্যাদি যেভাবে উপদ্রব বেড়ে যাচ্ছে তাহলে ভবিষ্যতে চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি হবে এমনটাই আশা করছেন মাথাভাঙ্গা মহাকুমার কৃষকরা।