আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ অত্যাধুনিক সভ্যতায় অনেক লোকগান, লোক নৃত্য হারিয়ে যেতে বসেছে। সেই রকমই একটি জনপ্রিয় লোকগান ও লোক নৃত্য হল ভাদু গান। এই ভাদু গান প্রেম ও রাজনীতি বর্জিত। গৃহ নারীদের জীবন কাহিনী নিয়ে এই গান রচিত হয়। গানের সাথে বাদ্য সহকারে বাচ্চা মেয়েদের আবার কখনো বাচ্চা ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে নৃত্য পরিবেশন করানো হয়। এই গান পাঁচালীর সুরে গীত হয়। এই লোকগান প্রচলন হয় রাজ পরিবারের হাত ধরে। ভাদু গান শুরু হয় পহেলা ভাদ্র থেকে ভাদু পূজার মধ্য দিয়ে। মাটির ভাদু মূর্তি তৈরি করে গ্রাম গঞ্জে, শহরের এক শ্রেণীর গরিব মানুষ সদল বলে রোজগারের আশায় ঘুরে বেড়ান। যৎসামানো রোজগার। এই প্রাচীন সংস্কৃতির জনপ্রিয়তা দিন দিন কমছে। বর্তমান যান্ত্রিক, হৃদয়হীনতার যুগে ভাদু গানের আর মূল্য নেই। কিন্তু একদিন এই গান বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমান, বীরভূম জেলার বিভিন্ন অংশে এবং ঝাড়খন্ড রাজ্যের হাজারীবাগ, রাঁচিতে বিশাল জনপ্রিয় ছিল। একশ্রেণীর গরীব মানুষের লক্ষীলাভ ভালই হতো। এখন সেই সুদিন নেই। এই প্রাচীন সংস্কৃতি এখন অবলুপ্তির পথে। আধুনিক যুগের কেতা দুরস্ত অনেক মানুষ জানেনই না এ প্রাচীন লোক সংস্কৃতি টিকে, আবার অনেকে জানলেও এই সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন। আমরা বাঙালিরা যে বিস্মৃত জাতি। আমরা সহজেই ভুলে যাই ওল্ড ইজ গোল্ড। কিন্তু বৃথা আশা মরতে মরতে মরে না। তাই আজও ভাদু শিল্পীরা অপেক্ষায় আছেন। তাদের সুদিন একদিন ফিরবে। জানিনা, রাত শেষ হয়ে সূর্য উঠবে কবে??