আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ প্রায় ১২৫ বছরেরও অধিক সময় আগের কথা। আকাশে বাতাসে মা জানান দিচ্ছেন তিনি আসছেন বাপের বাড়ি। পাশের পল্লী পাড়ার বেশ কিছু মহিলা গান করতে করতে গন্ধেশ্বরী নদীতে ভাদু বিসর্জন দিতে যাবার দৃশ্য চোখে পড়ে বাঁকুড়া শহরের পাঠক পাড়ার তত্কালীন বেশ কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিদের।
সেখানে বসেই তারা ঠিক করলেন পাঠক পাড়াতেও মায়ের পুজো শুরু করলে কেমন হয়। যদিও পাঠক পাড়ার মানুষরা দুর্গা পুজোয় ঘটক পাড়াতে অংশগ্রহন করত। অবশেষে নিজেদের পাঠকপাড়ার বিষ্ণু মন্দিরের আটচালায় শুরু হল মাতৃ আরাধনা।
শহরের পাঠক পাড়ার দুর্গা পুজোর সন্ধান করতে গিয়ে জানা যায় বাঁকুড়া শহরের আদি এলাকা এই পাঠক পাড়া। অনেকের মতে আনুমানিক ৬০০ বছরের পুরনো এই পাড়া। এখানকার আদি বাসিন্দা অধূর্য্যরা। পরে বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা-বিক্রমপুর থেকে চট্টোপাধ্যায়রা এখানে আসেন। পরে ভট্টাচার্য, তেওয়ারী, দুবে, মিশ্র, ত্রিবেদী, মুখোপাধ্যায়, বন্দ্যোপাধ্যায় ও নবদ্বীপ থেকে আরও চট্টোপাধ্যায় পদবিধারীরাও এখানে বসতি স্থাপন করেন। অধূর্য্য ও চট্টোপাধ্যায় এই পাড়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও ঘটনাচক্রে অধূর্য্যদের জনৈক ‘সমাজসেবী জামাই’য়ের সৌজন্যে এই এলাকার নামকরণ হয়ে যায় ‘পাঠক পাড়া’।
১৯০৫ সালের আগে সেইভাবে দুর্গাপূজার চল না থাকলেও বাঁকুড়া শহরের ঘটক পাড়া ও বটুকগঞ্জ বর্তমানে মোলডুবকা এই দুই জায়গায় দুর্গা পূজা হতো। সেই বছর পাশের পল্লীপাড়া, ঘটক পাড়া ও বটুকগঞ্জ থেকে মাটি এনে মূর্তি তৈরি করে পাঠক পাড়াতেও শুরু করা হয় দেবীর আরাধণা।
পাঠকপাড়া দুর্গাপূজা কমিটির সদস্যরা জানান বাঁকুড়ার আদি জায়গা পাঠকপাড়া। আনুমানিক ৬০০ বছরের পুরনো। বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজারা পাঠক পাড়ায় বিষ্ণুমন্দির করার জন্য অধুর্য্যদের এই জায়গাটি দান করেন।অধুর্য্যরা হলেন গোপালজীর সেবক। প্রাচীণ ধারাবাহিকতা মেনে এখনও বিষ্ণু মন্দিরের সামনে আট চালায় পুজো হয় দেবী দুর্গার। এক চালা সাবেকি প্রতিমা, কালী পূরাণ মতে, পি.এম বাগচীর পঞ্জিকার নির্ঘন্ট মেনে এখানে পুজো হয়। এখানে বলিদান সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। বলির সময়ে স্তবপাঠ করা হয়। একই সঙ্গে দীর্ঘ ধারাবাহিকতা মেনে নবমীর দিন শহরের ঘটক পাড়ার ব্রাহ্মণদের নিমন্ত্রণ করে প্রসাদ খাওয়ানো হয়। এই বছর পাঠকপাড়া দুর্গোৎসব কমিটির ১২৫ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সাড়ম্বরে মায়ের আরাধনার প্রস্তুতি তুঙ্গে।