কঙ্কাবতীর দুঃসাহস (ধারাবাহিক উপন্যাস, একাদশ পর্ব) : দিলীপ রায় (+৯১ ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

0
352
   কঙ্কাবতীর দুশ্চিন্তা বিপাশাকে নিয়ে । চড়ুইডাঙা গাঁয়ের  ছেলেপুলে যেমন বিপাশাকে উত্ত্যক্ত করে, তেমনি রাস্তায় বের হলে বে-পাড়ার ছেলেপুলে ছোটটার পেছন ধাওয়া করে । বিপাশা নিজের মতো চললে কী হবে, তারা বিপাশার সঙ্গে কথা বলার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে ।  বিপাশা একটু অন্য প্রকৃতির । অল্প ও মিষ্টি কথাতে সহজে  ভুলে যাওয়া তার স্বভাব । কঙ্কাবতীর  অন্য মেয়েগুলি যেমন ছেলেদের ছল-চাতুরী সহজে  ধরে ফেলে বা  বুঝতে পারে, কিন্তু বিপাশা ছেলেপুলেদের ফন্দি ধরতে দিদিদের ঠিক  উল্টো । কিছুতেই তার বোধগোম্য হয় না, ছেলেগুলি ধান্দাবাজ  । ধান্দাবাজ ছেলেদের মিষ্টি কথায় ভুলে  মাঝে মাঝে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাদের সাথে নানান ছলচাতুরীর কথায় জড়িয়ে পড়ে । বিপাশাকে শত বোঝালেও  কিছুতেই নিজেকে শুধরে নেয় না । এই কারণে বিপাশাকে নিয়ে কঙ্কাবতীর দুশ্চিন্তা অহরহ ।
       ছোট মেয়েটা আবার কাজকর্মে ঢিলা । বলা চলে কাজকর্মে একেবারে মন নেই ।  বাড়িতে সংসারের কুটোটিও নাড়ে না । বাইরে কাজ না থাকলে বিছানায়  উপুড় হয়ে  পা দুটি দোলাবে । কলেজ থেকে বি-এ  পাশ করার পর বাইরে বেরোনো তার খুব কম ।  তবে ইদানীং সপ্তাহখানেক খুব বাইরে বের হচ্ছে । ঠিক তিনটের সময় দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষে  সেজেগুজে বিপাশা বেরিয়ে যাচ্ছে । আর ফিরতে সেই সন্ধ্যা ! 
     বড় বৌদি কৌতুহলবশত একদিন  জিজ্ঞাসা করলো, “রোজ বিকেলবেলায় তুই কোথায় যাচ্ছিস ? বাড়িতে বলেও যাস না । যার জন্য চিন্তায় থাকি !”
      বৌদি, আমি চাকরির পরীক্ষার কোচিং নিচ্ছি । কোচিং ক্লাস বিকেল চারটে থেকে ছ’টা ।
        “এটা ভাল খবর । বাড়িতে জানিয়ে গেলে আমরা নিশ্চিন্ত থাকি ।“ আবার বিপাশার দিকে তাকিয়ে বড় বৌদি  জিজ্ঞাসা করলো, “কোচিং সেন্টারটি কোথায় ?”
        সালার স্টেশনে নেমে দুকদম হাঁটলেই কলেজ যাওয়ার পথে পড়ে । 
       বড় বৌদি আর কথা বাড়ালো না । মেয়েটা চাকরির ব্যাপারে সজাগ হয়েছে, এটা জেনেই বড় বৌদি খুশী । কেননা সবাই ব্যবসা নিয়ে রুটি-রোজগারের ধান্ধায় ব্যস্ত । তার মধ্যে বিপাশা ব্যতিক্রমি কিছু একটা  করতে পারলে আখেরে তারই লাভ । জীবনে পরমুখাপেক্ষী হতে হবে না ।  
      প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সালারের এই কোচিং সেন্টারটি বেশী দিন আগে প্রতিষ্ঠিত হয়নি  । সেখানের কর্ণ মাস্টার, তার কলেজের প্রাক্তন  ছাত্র । বিপাশার অনেক সিনিওর । যেবার বিপাশা কলেজে ভর্তি হল, সেবছর কর্ণ পাশ করে কলেজ থেকে বেরিয়ে গেলো । কর্ণের সাথে ভর্তি হওয়ার সময় আলাপ । কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় নানান ঝামেলার সম্মুখীন হয়েছিল বিপাশা ।  সেই বাধাগুলির সবগুলি ধাপ উতরে দিয়েছিল তার কর্ণ স্যার । সেই  থেকে বিপাশার সাথে কর্ণের সম্পর্ক । 
     প্রথমদিকে কর্ণকে বিপাশার ভাল লাগত না । তার গাঁয়ের দিকে বাড়ি । বেশভূষায় গাঁয়ের ছাপ স্পষ্ট । কথাবার্তায়  কোনো স্মার্টনেস  নেই । বি-এ পাশ ঠিক । কিন্তু উপায়ের পথ অনিশ্চয়তায় ভরা । শুধুমাত্র  কর্ণের জীবনে একটাই প্লাস পয়েন্ট, তার চেহারাটা ভীষণ মিষ্টি । শারীরিক গঠন আর দশটা ছেলেদের থেকে অনেক বেশী আকর্ষণীয় । অভাব-অনটন থাকলেও তার আচার আচরণে সেটা বোঝা দুঃসাধ্য । মার্জিত স্বভাব ।  বিপাশা কর্ণের সাথে মিশতে না চাইলেও, কর্ণ বিপাশার পেছন ছাড়ত না ।  প্রায় প্রত্যেকদিন কর্ণ তার সঙ্গে দেখা করত । বিপাশার সঙ্গে দেখা করার জন্য অনেকদিন সালার স্টেশনের প্লাটফর্মে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকত । বিপাশাকে কয়েকবার কলেজ ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল । কিন্তু বিপাশা ভয়ে সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি । কর্ণের সাথে ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারটা কোনোকারণে  ছোড়দার কানে গেলে আর রক্ষে নেই । তা ছাড়া কর্ণের সহনশীলতা যথেষ্ট । বিপাশা বিভিন্ন সময়ে তাকে অনেক কটু কথা শুনিয়েছে । অথচ তাতে কর্ণ এতটুকু রাগ করেনি । 
 কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় হঠাৎ করে নিপুনের খপ্পরে পড়ে বিপাশা । নিপুনের তাগড়াই চেহারা । বিপাশাকে খুব তোয়াজ করে কথা বলে । মিষ্টি ভাষায় তার কথোপকথন । চালচলণে স্মার্ট । সে তখন ফাইনাল ইয়ারে পড়ত । ক্যান্টিনে আলাপ । আলাপ থেকে দুজনের সম্পর্ক অনেক দূর গড়ায় । বলিষ্ঠ চেহারা, স্মার্টনেস, মিষ্টভাষী,  ইত্যাদি দেখে  নিপুনকে বিপাশার খুব ভাল লেগেছিল । বড়লোক বাড়ির ছেলে । মোটর বাইকে চলাফেরা । সালারের বড় রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া-দাওয়া । কলেজ  ছুটি হলে বিপাশা বেশ কিছুক্ষণ নিপুনের সঙ্গে সময় কাটাত । 
   যখন কর্ণ জানতে পারলো নিপুনের সাথে বিপাশার ভাব-ভালবাসা, সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এসে বিপাশাকে বোঝালো, “নিপুনের চরিত্র খারাপ । কিছুদিন আগে একজন মুসলমানদের মেয়ে রেবেকা খাতুনের সাথে তার প্রেম-প্রীতির ঘটনা সকলের জানা । লোকের মুখে শোনা, নিপুনের সাথে রেবেকা খাতুনের শারীরিক সম্পর্ক তৈরী হয়েছিল । সালার কলেজের ছাত্র-ছাত্রী এমনকি সালারের অধিকাংশ মানুষ জানতেন, তাদের মধ্যে গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছে । কিন্তু রেবেকার কোনো এক অসতর্ক মুহূর্তে নিপুন রেবেকাকে তার  জীবন থেকে ঝেরে মুছে ফেলে । সুতরাং বিপাশার সাথে নিপুনের সম্পর্কের ফলে বিপাশার নিজের ক্ষতির সম্ভাবনা বেশী । বিপাশারও একদিন রেবেকা খাতুনের মতো অবস্থা হতে বাধ্য । নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে ওদের চরিত্র হচ্ছে,  নিত্যনতুন মেয়েদের সংস্পর্শে আসা ।  তাই কর্ণ বিপাশাকে নিপুনের সাথে মেলামেশা করতে নিষেধ করলো । তার কথা না শুনলে পরে পস্তাতে হবে ।  
    ঠিক তার পরেরদিন বিপাশাকে একরকম জোর করে নিপুন বাইকের পেছনে তুলে লং ড্রাইভে ছুটলো । বিপাশার বাধা-বিপত্তি ধোপে টিকলো না । বড় রাস্তা ধরে সোজা বোলপুর । শান্তিকিতনে ঘুরতে ঘুরতে বেলা গড়িয়ে গেলো । সূর্য পশ্চিমাকাশে অবলোকন করে,  বিপাশা নিপুনকে বাড়ি ফেরার জন্য তাগাদা দিলো । তার বক্তব্য,   বাড়ি ফিরতে রাত হলে বিপাশাকে তার দাদা ও মা উভয়ে বকাঝকা করবে । কিন্তু বিপাশার কোনো আর্জি শুনলো না নিপুন । সে নিজের তালে ঘোরাঘুরিতে ব্যস্ত । বাড়ি ফেরার জন্য তার মধ্যে উচ্ছ্বাস নেই ।  ঠিক সন্ধ্যা নামার একটু আগে বোলপুর  থেকে রওনা দিলো । যা হয় রাস্তার মধ্যে অন্ধকার নেমে এলো । অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে নিপুনের আসল কদর্য রূপ ধরা পড়ল । কিন্তু বিপাশা নরম প্রকৃতির মেয়ে হলেও তার মায়ের দেওয়া শিক্ষা সে কখনও ভোলেনি । মা বলেছিল, যখন বিপদে পড়বি তখন কারও ভরসায় না থেকে নিজের মনকে শক্ত করে বিপদের মোকাবিলা করাটা বুদ্ধিমানের পরিচয়  । ক্যারাটের কয়েকটা টিপস তাদের চার বোনকে শিখিয়ে দিয়েছিল । তাই বিপাশা চিৎকার শুরু করলো, “বাচাও ! বাচাও !”
   ভয় পেয়ে নিপুন বাইক থামাতে বাধ্য হল । তারপর বিপাশা পা দিয়ে এমন জোরে নিপুনকে লাথি মারলো, বেচারা লাথির আঘাতে কুপোকাত । রাস্তার উপর চিৎ হয়ে পড়ে গেলো । তারপর সময় নষ্ট না করে রাস্তার চলতি গাড়িকে হাত দেখিয়ে দাঁড় করালো বিপাশা । মুখে আওয়াজ, “হেল্প ! হেল্প !” দাঁড়িয়ে পড়লো একটা জিপ গাড়ি । লিফট চাইতেই দেখে গাড়িতে পুলিশ । পুলিশের বড় সাহেব বিপাশাকে আচ্ছাই করে বকাঝকা । আপনারা লোক না চিনে যার-তার বাইকে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন । নির্লজ্জ বেহায়া দুরভিসন্ধি ছেলেদের টার্গেট থাকে, রাত্রির অন্ধকারে মেয়েদের নিয়ে বাড়ি ফেরা । রাত্রির অন্ধকারে  ধান্দাবাজ ছেলেগুলির মতলব বাস্তাবায়িত করা তখন  খুব সহজ । যেটা হয়েছে আপনার ক্ষেত্রে । ভবিষ্যতে আর কোনোদিন কারও বাইকে রাত্রিতে উঠবেন না । পুলিশ দেখতে পেলে আপনাকে উল্টে জেলে ভরে দেবে । কথাটা মনে রাখবেন । 
   মাথা নেড়ে সায় দিলো বিপাশা । 
   সেই যাত্রায় নিপুনের হাত থেকে নিস্তার পেয়ে বিপাশা প্রমাদ গুণলো, নিপুনের সঙ্গে আর কখনও  মিশবে না । ভাবলে কী হবে  ? পরেরদিন সালারের রাস্তার মাঝখানে নিপুন বিপাশাকে চেপে ধরলো ।  মুখে তার বিশ্রী গন্ধ । বিপাশা বুঝতে পারলো, নিপুন এখন নেশার ঘোরে আছে । রাস্তার মধ্যে বিপাশার হাত চেপে ধরে নিপুন বিশ্রী ভাষায় বলল, “এক্ষুণি আমার বাইকে ওঠ । নতুবা তোর কপালে অনেক অশান্তি আছে ।“  
      “তুই তো আমার ছোড়দার গণধোলাই খাসনি । বাঁচতে চাইলে, আমায় ছেড়ে দে । নতুবা তোর কপালেও অশেষ দুঃখ আছে ।“ বিপাশা শাসালো । 
       ঐসব ভয় দেখিয়ে আমার হাত থেকে তোর নিস্তার নেই । আমি চারিদিকটা  আমার গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে ঘেরাও  করে রেখেছি । কেউ আমার গায়ে হাত ছুঁতেও পারবে না । নিমেষের মধ্যে খবর পৌঁছে যায় ঘোতনের কাছে । ঘোতন খবর পাওয়া মাত্র সালারে এসে উপস্থিত । ততক্ষণে বিপাশাকে নিপুন সালারের একটি পরিত্যক্ত গুদাম ঘরে আটকে রেখেছে । তারপর বিপাশার উদ্দেশে নিপুনের কী চিৎকার, “আজ রাত্রিতে দেখবো কী করে পালাস । পালাবার সব পথ বন্ধ । এখন তুই আমার কব্জায় । আমি যেভাবে বলব, তুই সেভাবে নাচবি । সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয়ে যাবে তোর নাচন ।“ 
       ইতিমধ্যে খবর পেয়ে কর্ণ তার গুটি কয়েক বন্ধু নিয়ে নিপুনের ডেরার পাশ দিয়ে ঘোরাফেরা করছে । কিন্তু নিপুনের গুণ্ডা বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার সাহস পাচ্ছে না । অথচ বিপাশাকে খুব শীঘ্র উদ্ধার করা দরকার । যার জন্য কর্ণ বিপাশার বিপদের কথা  ভেবে রীতিমতো ভীতিতে আতঙ্কিত । কর্ণ ভালভাবে জানে, কাজ উদ্ধার না হলে নিপুন ভয়ংকর রূপ ধারন করতে পারে । সেইক্ষেত্রে বিপাশার বিপদ অনিবার্য । বিপাশার জন্য কর্ণ ভীষণ বিচলিত । তবুও মারমুখী কর্ণ হাল ছাড়বার পাত্র নয় । আক্রমনের ছক কষতে থাকলো । অবশেষে কর্ণ নিপুনের ডেরায় ঢুকে অতর্কিতে হানা দেওয়ার জন্য পেছনের গুপ্ত দরজার পাশে ছদ্মবেশে ওত পেতে রইলো ।     
       ঘোতন স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করে সংঘর্ষের মাঠে নামলো । তার সাথে এসেছে জনা দশেক পালোয়ান জওয়ান । ঘোতন আগেই জানতে পেরেছে বিপাশাকে কোথাকার  গোডাউনে আটকে রাখা হয়েছে । সেই মোতাবেক ঘোতন নিজেদেরকে  তৈরী করলো । দিনের বেলা । সুতরাং ভয়ের কোনো কারণ নেই । এই মুহূর্তে বিপাশাকে তুলে নিয়ে পালাতেও পারবে না । ঘোতন সদলবলে নিপুনের ডেরা আক্রমণ করলো । কিন্তু ডেরার ভেতরে ঢুকতে প্রচণ্ড বাধা । বাধ্য হয়ে ঘোতন অন্য প্রক্রিয়া নিলো । ছাদে উঠে সিড়ির দরজা ভাঙল । অতর্কিতে ঘোতনদের জওয়ানদের  উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো নিপুনের গুণ্ডা বাহিনী । নিপুনের গুণ্ডা বাহিনীর সাথে দশটা লোকের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই । গুণ্ডা বাহিনীর আক্রমণাত্মক পরিস্থিতি দেখে ঘোতন বুঝতে পারলো নিপুন অনেক পরিকল্পনা করে বিপাশাকে কিডন্যাপ করেছে । কিন্তু ঘোতনও তেমনি বুদ্ধিমান ও  শক্তিশালী । সে কিছুতেই দমবার পাত্র না । দশজনকে নিয়ে  ঘোতনের রণংদেহীর সামনে ঐ গুণ্ডাবাহিনী প্রায় কুপোকাত !  সমানে সমানে লড়াই । ততক্ষণে থানা থেকে বড়বাবু এক বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে হাজির । পুলিশের জালে ধরা পড়লো নিপুনের খুব কাছের গুণ্ডাগুলি । বিরাট পুলিশ বাহিনী দেখে নিপুন চোরা পথে পালাতে উশখুঁশ । কিন্তু সুযোগ পাচ্ছে না । একে একে পুলিশের হাতে নিপুনের গুণ্ডাবাহিনী ধরা পড়ার খবরে নিপুন উতলা ।  নিপুনের লড়াই করার শক্তি ক্রমশ নিস্তেজ হওয়ার দিকে । হঠাৎ সোরগোল, নিপুন বিপাশাকে নিয়ে স্পট থেকে চোরা পথে পালিয়েছে ।
    ঐ চোরা পথে ছদ্মবেশে ঘাপটি মেরে বসেছিল কর্ণ । বাইরে বের হওয়া মাত্র কর্ণ পরিষ্কার বুঝতে পারলো, নিপুন বিপাশাকে নিয়ে পালাচ্ছে । সঙ্গে সঙ্গে কর্ণ নিপুনের কানের কাছে গিয়ে বলল, “আপনার পালাবার গাড়ি রেডি । তাড়াতাড়ি সামনের তিন চাকার ভ্যান গাড়িটায় উঠুন ।“ 
    কিছু বোঝার আগেই পুলিশের হাত থেকে বাঁচার তাগিদে কর্ণের পাতা  ফাঁদে পা দিলো নিপুন । কিছুটা যাওয়ার পর কর্ণ আসল রূপ ধারন করলো । তারপর নিপুনকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাস্তার উপর নামিয়ে দিলো । তারপর কর্ণ বিপাশাকে নিয়ে অজানা উদ্দেশে অনেক দূর পাড়ি দিলো ।  কর্ণ চাইলো, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিপাশাকে বাড়ি পৌঁছে দেবে । “ বিপাশা কর্ণের প্রস্তাবে রাজি ।   
 বড়বাবু নিজে নিপুনকে ধরার জন্য ফোর্স নিয়ে  ছুটলেন । 
  কিছুক্ষণ পরে পুলিশ বাহিনী নিয়ে বড়বাবু  ফিরে এসে বেজার মুখে  ঘোতনকে বললেন, “নিপুন তাঁদের জালে ধরা পড়েছে ঠিক, কিন্তু বিপাশাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি ।“  
  বিপাশাকে নিয়ে অন্য আগন্তুকেরা  অনেক দূরে পালিয়ে গেছে । তার হদিস এখনও পর্যন্ত অধরা । 
    ঘোতন বোনকে না পেয়ে ছটফট । 
    কঙ্কাবতী থানার বড়বাবুর পায়ে ধরে বলল, “স্যার, আমার ছোট মেয়েকে আমার কোলে ফিরিয়ে দিন ।“ 
     তিনদিনের মাথায় বিপাশা একাই পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরলো । তারপর থেকে কর্ণের প্রতি বিপাশার শ্রদ্ধা বেড়ে গেলো । প্রায় দুই রাত তারা একসঙ্গে কাটিয়েছে, অথচ বিপাশার গায়ে এক ফোঁটা অশান্তির আঁচ লাগেনি । 
     *************************************
 বিপাশা স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর কর্ণের পরামর্শ মতো কোচিং ক্লাসে ভর্তি হল । কর্ণও চাকরির চেষ্টা সমানে চালিয়ে যাচ্ছে । প্রাইভেট সেক্টরে কর্ণের চেষ্টা বেশী । কেননা সরকারি স্তরে চাকরির বিজ্ঞাপন নেই বললেই চলে । তাই তার প্রাইভেট সেক্টরে চাকরির জন্য ঘোরাঘুরি ।   কর্ণের বিশ্বাস, খুব শীঘ্র সে একটা ব্যক্তি মালিকানা কোম্পানীতে চাকরি পেয়ে যাবে ।  
   কঙ্কাবতী চাইছে তার ছোট মেয়েকে বিয়ে দেবে । মেয়েটা কাজে কর্মে ঢিলা । একবার তাকে নিয়ে অনেক অশান্তি । আবার যদি কোনোকারণে অশান্তি বাধে, সেক্ষেত্রে বিপাশার জন্য পাত্র পাওয়াই দায় হয়ে দাঁড়াবে ! তাই কঙ্কাবতী ঝুঁকি নিতে চাইছে না । মেয়েকে পাত্রস্থ করার জন্য উঠে পড়ে লাগলো ।
    বাড়িতে বিয়ের জন্য তোড়জোড় দেখে বিপাশা কঙ্কাবতীকে সরাসরি বলল, “কর্ণকে সে ভালবাসে । কর্ণকে ছাড়া অন্য কোনো পাত্রকে  বিয়ে করা তার পক্ষে সম্ভব না ।“  
      ঘোতন ও বড় বৌদি বোঝাতে চাইলো, কর্ণ চাকরি করে না । আয়ের কোনো নির্দিষ্ট পথ নেই । কর্ণের সাথে বিয়ে হলে,  বিয়ের পরে তাদের সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে । সুতরাং তার জন্য অন্যত্র পাত্র দেখা হোক । 
     শেষে বিপাশার জেদের কাছে কঙ্কাবতী হার মানলো । অবশেষে মহা ধুমধামে কর্ণের সাথে বিপাশার বিয়ে সুসম্পন্ন হল ।  বিপাশা ও কর্ণ, একে অপরকে জীবন সঙ্গিনী হিসাবে পেয়ে খুব খুশী । 

 ( চলবে )