নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা;২২সেপ্টেম্বর: সম্প্রতি ২০১৭ সালের বন্যা ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের বরুই গ্রাম পঞ্চায়েত। রাজ্যের শিরোনামে উঠে এসেছিল এই পঞ্চায়েতের নাম। আবার খবরের শিরোনামে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক এলাকার বরুই গ্রাম পঞ্চায়েত। এবার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত শাসকদলের প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেন তৃণমূলেরই ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান। অভিযোগ ৫০ লক্ষ টাকার টেন্ডার দুর্নীতি করা হয়েছে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে। অভিযোগকারী বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তথা ২০১৭ সালের বন্যা ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে জামিনে ছাড়া পাওয়া সোনামনি সাহা। সোনামনির অভিযোগ সম্প্রতি চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে বেশ কয়েকটি কাজের টেন্ডারের নোটিশ হয়। সেখানে দেখা গেছে, শাসকদলের বেশ কয়েকটি বুথে কোন কাজই ধরা হয়নি। বাদ দেওয়া হয়েছে সোনামনির বুথও। পাশাপাশি তার আরো অভিযোগ এই টেন্ডার প্রক্রিয়াতে আনুমানিক ৫০ লক্ষ টাকার দুর্নীতি করা হয়েছে। ব্যাপক হারে দলবাজি করা হয়েছে এই টেন্ডারে। আইনি জটিলতার কারণে তিনি বর্তমানে প্রধান পদে নেই কিন্তু এখনো পর্যন্ত সদস্যা আছেন। কিন্তু তবুও বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান তাকে এই টেন্ডার প্রক্রিয়ার মিটিংয়ে ডাকেন নি। টেন্ডারের দেখা গিয়েছে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের মোবারকপুর গ্রামে ইতিমধ্যে একটি হাইমাস্ট ল্যাম্প আছে সেখানে আবার হাইমাস্ট ল্যাম্প লাগানোর টেন্ডার করা হয়েছে। এই ভাবে একাধিক বেনিয়ম করা হয়েছে টেন্ডার প্রক্রিয়াতে। এই বিষয়ে তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান কে জিজ্ঞেস করলে তিনি কোন রকম সদুত্তর দিতে পারেন নি। তাই বাধ্য হয়ে তিনি এই টেন্ডার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ব্লক প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জমা করেছেন।
এদিন সোনামনির পাশাপাশি একই অভিযোগ তুলেছেন ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিআইএমের সদস্য ফিরোজ আলম। তিনিও দাবি করেছেন এই ৫০ লক্ষ টাকার টেন্ডারে একাধিক বেনিয়ম হয়েছে।সঠিক তদন্ত করলে সমস্ত কিছু সামনে আসবে। যদিও বড়ই গ্রাম পঞ্চায়েতের ভারপ্রাপ্ত প্রধান মোস্তাক হোসেন সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং জানিয়েছেন টেন্ডার প্রক্রিয়া অনলাইনে হয়েছে দুর্নীতির কোন প্রশ্নই নেই। এদিকে শাসকদলের গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে শাসক দলেরই প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের অভিযোগ কে ঘিরে সরগরম হরিশ্চন্দ্রপুরের রাজনৈতিক মহল। তীব্র কটাক্ষ করেছে হরিশ্চন্দ্রপুরের বিরোধী রাজনৈতিক শিবির। যদিও তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বে সাফাই সমস্ত ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে। যা নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে শাসক ও বিরোধীদের রাজনৈতিক তরজা।
বরুই গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূল প্রাক্তন প্রধান তথা বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্য সোনামণি সাহা বলেন, টেন্ডার নিয়ে বেনিয়ম হয়েছে। ৫০ লক্ষ টাকার টেন্ডার পাস হয়েছে। কোন বুথে অধিক কাজ হচ্ছে তো কোন বুথে কাজ নেই। তিনটে বুথকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে।এমনকি যে জায়গায় উচ্চ বাতাস স্তম্ভ লাগানো হয়ে গেছে আগে সেই জায়গাতে উচ্চবাতি স্তম্ভ লাগানোর টেন্ডার পাস হয়েছে।
বরুই গ্রাম পঞ্চায়েত সিপিআইএমের পঞ্চায়েত সদস্য ফিরোজ আলম বলেন, আমাদের সঙ্গে বঞ্চনা হচ্ছে। বিরোধীদের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সেই টাকা আত্মসাৎ করা হবে। শেষ সময় যতটা পারছে চুরি করে নিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে বিডিওর কাছে অভিযোগ জানিয়েছি।
বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শেখ মোস্তাক হোসেন বলেন, ই-টেন্ডার পাস করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীরর নির্দেশ অনুযায়ী। সকলে সেটা দেখতে পাচ্ছ কোন ভুল থাকলে বাতিল হবে। আমি যবে থেকে দায়িত্বে আছি কোন রকম দুর্নীতি হয়নি। দলে থেকে দলের বিরুদ্ধে যারা কথা বলছে দল সেটার ব্যবস্থা নেবে।
উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সম্পাদক রুপেশ আগরওয়াল বলেন, বেনিয়াম করাটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি। উচু স্তর থেকে নিচু স্তর পর্যন্ত। শুধুমাত্র বরুই গ্রাম পঞ্চায়েত নয় প্রত্যেকটা গ্রাম পঞ্চায়েতে বেলাগাম দুর্নীতি হচ্ছে। দুর্নীতিতে এরা ডবল পিএইচডি করেছে। যারা বাস্তবে পিএইচডি করেছে এদের দুর্নীতি দেখে তারাও লজ্জা পাবে। ওদেরই সদস্য যিনি আগে প্রধান ছিলেন বন্যা ত্রাণ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হওয়াই বর্তমানে প্রধান নেই তিনিও অভিযোগ করছেন।
সিপিআইএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, এর আগেও এই গ্রাম পঞ্চায়েতে বিভিন্ন অভিযোগ এসেছে। আসলে আর কয়েক মাস পর পঞ্চায়েত ভোট একদম শেষ সময় চলে এসেছে এদের। তাই যতটা পারছে চুরি করে নিচ্ছে। এদের নিজেদের লোকরাই অভিযোগ জানাচ্ছে। আমরা চাইবো যেটা অভিযোগ এসেছে সেটার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক।
জেলা তৃণমূল প্রাক্তন সভাপতি দুলাল সরকার বলেন, কিছু কিছু জন-প্রতিনিধির অভিজ্ঞতার অভাব থাকাই টেন্ডার নিয়ে অভিযোগ আসছে। তবে আমাদের দলের নেত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং নেতা অভিষেক ব্যানার্জি নির্দেশ দিয়েছে কোন রকম দুর্নীতি বরদাস্ত হবে না। কেউ যদি করে থাকে অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক বিডিও অনির্বাণ বসু জানান অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে এনকোয়ারি করে দেখা হচ্ছে।
শুধুমাত্র বরুই গ্রাম পঞ্চায়েত নয় এই এলাকায় শাসকদল পরিচালিত বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতে একাধিকবার দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসছে। দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে আসছে শাসকদলের অন্তরের সংঘাত। পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে স্বাভাবিক ভাবে এই ধরনের ঘটনা তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়াচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।