শতাব্দী প্রাচীন হেতমপুরের মুন্সী বাড়ির দুর্গাপুজো।

0
536

বীরভূম, সেখ ওলি মহম্মদঃ-হাতে গোনা মাত্র আর কয়েকটা দিন। তারপর শুরু হয়ে বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব। দুর্গা পুজো হচ্ছে বাঙালির সবচেয়ে বড় উত্‍সব। ষষ্ঠী থেকে দশমী, শারদীয়া দুর্গোত্‍সবের এই পাঁচটি দিনে মেতে ওঠেন ধনী, দরিদ্র নির্বিশেষে আপামর বাঙালি। কিন্তু এবারের দুর্গা পুজো অন্যান্য বারের চেয়ে একেবারে আলাদা। এবারের পুজোর গুরুত্বও অনেক বেশি। এর পিছনে রয়েছে দু’টি কারণ। প্রথমত, করোনার কারণে গত দু’বছরে একেবারে মনখুলে পুজোর আয়োজন করা যায়নি। মানুষ আনন্দে মেতেছেন ঠিকই, কিন্তু তার পরেও ভয় ছিল করোনা সংক্রমণের। এবারেও করোনা সংক্রমণ হচ্ছে। কিন্তু বেশির ভাগেরই টিকার দু’টি ডোজ সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়াও সংক্রমণের ভয় কিছুটা কমেছে। দ্বিতীয়ত, এবার কলকাতার দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে এবারে পুজো নিয়ে উদ্যোক্তা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা চরমে। তাই বীরভূম জেলার দুবরাজপুর ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় দুর্গা পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। দুর্গোৎসবের ক্ষেত্রে প্রাচীন দুর্গাপুজোগুলিতে রীতিনীতি অনুযায়ী নানান ফারাক লক্ষ্য করা যায়। ঠিক সেইরকম ফারাক রেখে অন্যান্য পুজোর থেকে আলাদা হয়েছে বীরভূম জেলার দুবরাজপুর ব্লকের হেতমপুরের মুন্সী বাড়ির দুর্গাপুজো। মুন্সী বাড়ির দুর্গাপুজো সেন বাড়ির দুর্গাপুজো নামে পরিচিত। আনুমানিক ৩৫০ বছর ধরে বংশপরস্পরায় হয়ে আসছে এই পুজো। এখানে মহাষ্টমীর দিন হলুদ মুড়ি, ৮ রকম কলাই ভাজা এবং আদা কুচি দিয়ে মায়ের ভোগ করা হয়। এর পাশাপাশি এই পুজোর বিশেষত্ব হল এখানে মহাষ্টমীর দিনেই করা হয় কুমারী পুজো। এই পুজোর ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, ঈশান মুন্সী ওরফে কুচিল চন্দ্র সেন রাজনগরের রাজার মুন্সেফ ছিলেন এবং তিনি এই পূজার প্রচলন করেছিলেন। স্বপ্নাদেশে এই পূজার প্রচলন হয়েছিল। তবে প্রথম দিকে তিনি আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য পুজোর ক্ষেত্রে রাজি হননি। কিন্তু সাধ্যমত পুজোর পুনরায় স্বপ্নাদেশ দেন দেবী। তারপরই ভেদিয়া-গুসকরা নামে কোন এক গ্রামে সেন বাড়ির দুর্গাপুজো প্রতিষ্ঠিত হয়। যদিও পরে এই দুর্গাপুজো হেতমপুরের সেন বাড়িতেই হয়ে আসছে। প্রথমদিকে এই দুর্গা প্রতিমা পটের দুর্গা ছিল। পরবর্তীকালে নিম কাঠ দিয়ে দুর্গা তৈরি করা হয়। সেন পরিবারের সদস্যা লক্ষ্মী সেন জানান, এই দুর্গাপুজো সেন বাড়ির পুজো। কিন্তু এটা আসলে এটা মুন্সী বাড়ির পুজো। মুন্সী হচ্ছে খেতাব পাওয়া। রাজনগরের নবাব এই খেতাব দিয়েছিলেন। তাই এটা মুন্সী বাড়ির পুজো নামেই খ্যাত। পুরোনো রীতি মেনে আচার অনুষ্ঠান করে পুজো সম্পন্ন হয়। এখানে ১০ টি সেন পরিবারের সদস্যরা মিলে এই পুজো করে থাকি। যাঁরা বাইরে থাকেন তাঁরা সবাই পুজোয় আসেন এবং মিলিত হয়ে পুজোর আনন্দে মেতে ওঠেন। এই পুজোয় যে পরিমান অর্থ ব্যয় হয় সেটা সেন পরিবারের সদস্যরা মিলেই করেন।