পাচেটগড় রাজবাড়ির পুজোকে ঘিরে প্রস্তুতি তুঙ্গে।

0
398

পূর্ব মেদিনীপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা:-  হাতেগোনা আর কয়েক দিন বাকি বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব,ইতিমধ্যেই পুজো তড়ঝোড়ে ব্যস্ত মহানগর। রাজপথ সেজেছে আলোর রোশনায়। এক অন্য রকম মুগদ্ধতা ছড়িয়ে আছে আকাশে বাতাসে। শহরের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলাতেও পূজোর প্রস্তুতি তুঙ্গে। পূর্ব মেদিনীপুরে পাশের ঘরে রাজবাড়ীর দুর্গাদালানে এখন তুমুল ব্যস্ততা। অনেকে নাম না শুনলেও এই রাজবাড়ীর পুজোর বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে মেদিনীপুরের মানুষের মধ্যে। ইতিহাসের পাতা উল্টালে সন্ধান মিলবে প্রায় ৪৫০ বছর আগে পঁচেটগড় রাজবাড়িতে শুরু হয় দুর্গাপুজো। যদিও সেই সময়কাল নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। ওড়িশার কটক জেলার আটঘর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন বাড়ির আদি পুরুষ কালুমুরারি মোহন দাস মহাপাত্র। এই দুঃসাহসিক যুবক আকবর বাদশাহের রাজ কর্মচারী ছিলেন। ওড়িশার রাজা মুকুন্দদেব আকবর বাদশাহের সঙ্গে সঙ্গবদ্ধ হয়ে উভয়ের সাধারণ শত্রু গৌড়ের রাজা গৌড়েশ্বর সুলেমন কররানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়। এখানে কালুমুরারির অসামান্য কৃতত্ব প্রকাশ পায়। সম্ভবত, সেই সময় কালুমুরারি পটাশপুর পরগনায় এসে বাদশাহ প্রদত্ত নানকর (বিনা করে) ভূমি লাভ করে জমিদারি সূচনা করেন। প্রথমে কল্যানপুরে বাস করেন। পরে পঁচেট গ্রামে খাঁড়ে বিশাল গড় নির্মাণ করেন তিনি। পরবর্তীকালে সেখান থেকে উদ্ধার হয় এক শিবলিঙ্গ। সেই শিবলিঙ্গ দিয়েই কালুমুরারি মোহন দাস মহাপাত্র তৈরি করেন পঞ্চেশ্বর মন্দির। এখানে বেনারস থেকে আরো চারটি শিব লিঙ্গ এনে স্থাপন করা হয়। ধীরে ধীরে পঞ্চেশ্বর নামটির প্রচার হতে থাকে। সে সময় রাজ বাড়িতে শক্তি সাধনা হতো। সেই শক্তি সাধনা করতে গিয়ে শুরু হয় দুর্গাপুজো। রাজাদের সেকেলে রাজত্ব আজ আর না থাকলেও রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় আজও রয়ে গেছে সেকালের পুজোর প্রাচীন নিয়ম কানুন সমূহ। প্রতিবছর ষষ্ঠি থেকে রাজবাড়ির পুজো ঢাক, ঢোল, কাঁসর ঘন্টা ধ্বনি সহযোগে পঁচেটগড় রাজবাড়ির প্রাচীন পুকুর থেকে দুর্গাপুজোর ঘট স্থাপন করা হয়। মূলত ষষ্ঠি থেকে দশমী পর্যন্ত চলে রাজবাড়ির পুজো।
হারিয়েছে রাজত্ব। তবে রাজবাড়ীর এই পুজোয় রয়ে গিয়েছে প্রাচীন নিয়ম কানুন সমূহ। প্রতিবছর ষষ্ঠী থেকে ঢাক ঢোল কাঁসর ঘন্টা সহযোগে পঁচেটগড় রাজবাড়ির প্রাচীন পুকুর থেকে দুর্গাপুজোর ঘট স্থাপন করা হয়। মূলত ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত চলে এই পুজো।
তবে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে এই বাড়ির পূজোয়। কয়েক বছর পর রাজপরিবার শৈব থেকে বৈষ্ণব হয়ে যান। ফলে এক অলৌকিক কারনে বন্ধ হয়ে যায় মুর্তি পূজো। জমিদার বাড়িতে শোলা ও পটে আঁকা দুর্গাপূজার শুরু তখন থেকেই। এখনো অবশ্য শোলা বাদ পড়েছে। বছরের অন্যান্য দিনগুলো রাজবাড়ির বর্তমান সদস্যরা বাইরে থাকলেও পুজোর কয়েকটা দিন বাড়িতেই ফিরে আসেন। ষষ্ঠী থেকে দশমী এলাকাবাসীর ভিড়ে গমগম করে রাজবাড়ী। তবে রাজবাড়ীর সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় এই পুজো, বহু দূর-দূরান্ত থেকে এই প্রাচীনতম পুজো দেখতে ভিড় জমায় বহু মানুষ।