কলকাতা, সব খবর নিউজ ডেস্ক:- গল্প নয় সত্যি হ’য়ে কিছু ইচ্ছে পরিপূর্ণতা পায় তার স্বকীয়তায়… ভাষার প্রকাশের ঐশ্বরিক অনুলিখন ফুটে ওঠে ছাপার অক্ষরে পাতায় পাতায়…!
তেমনই এক সুন্দরতম শুদ্ধ সাহিত্যের আয়োজনে,
গত ২৫ শে সেপ্টেম্বর মহালয়ার পূণ্যদিনে কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট হলে অনুষ্ঠিত হলো চোখসাহিত্য পরিবার আয়োজিত কবি সম্মেলন এবং মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান…! চোখ সাহিত্য পরিবার, সাহিত্যের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্বের কথা মাথায় রেখে বরাবর একই ধারায় নির্দিষ্ট ভাবনা ভিত্তিক
অনুষ্ঠান করে এসেছে বিগত বছরগুলোতে যা কিনা সাহিত্যের একটি স্বকীয় উজ্জ্বল ধারার সৃষ্টি করেছে এই সময়ের কলকাতার সাহিত্য অঙ্গনে..! চোখ সাহিত্য পরিবারের কর্ণধার শ্রী রজত পুরোকায়স্থ মহাশয়ের ভাবনায়, ” নাচের অনুষ্ঠান কিংবা পূজা প্যান্ডেল হয় একটা থিম বা ভাবনাকে কেন্দ্র করে, একটা সাহিত্যের অনুষ্ঠানও ভাবনা বা থিম নির্ভর হতে পারেএবং হওয়া উচিতও বটে.. এটাই আমরা মনে করেছি এবং সেই ভাবনা থেকেই এবারের থীম বা বিষয় ছিলো সমাজের সাধারণ মানুষ থেকে উঠে আসা অসাধারণ কিছু মানুষদের নিয়ে ” ওরাও কাজ করে ” শীর্ষক ভাবনা..! উল্লেখ্য যে বিগত বছরে আমাদের মঞ্চ ভাবনা ছিল, কবিপাঠকএবংকবিতারবিষয়। এই ভাবনাকে সামনে রেখে আমরা মঞ্চে সম্মান জানিয়েছি, কবি এবং পাঠকদের।
কবিতার বিষয় বলতে, কবি/সাহিত্যিকরা যাদের নিয়ে মেতে ওঠে সষ্টির আনন্দে। যেমন, বাজারের মাছওলা, সবজিওলা, রিক্সাচালক, শ্রমিক এবং ট্রান্সজেন্ডার….. সবাইকে সম্মান জানিয়েছি।
পরের বছরে আমাদের ভাবনা ছিল, #তুমিওনারী। এই ভাবনায় আমরা মঞ্চে সম্মান জানিয়েছি যৌনকর্মীদের। প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির সর্বভারতীয় সভাপতি শ্রীমতী ভারতী ঘোষ মহাশয়া। এবার মহালয়ার দিন আমাদের মঞ্চ ভাবনা ছিল, #ওরাকাজকরে। এই ভাবনাকে সার্থক করতে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, বাঁকুড়া থেকে এক অপরাজেয় নারী। সুপ্রিয়া পাল বৃষ্টি। যিনি ভূগোলে এম,এস সি ; বি, এড। চাকরী না পেয়ে তিনি ট্রেনে হকারি করেন। তিনি কাজ করেন অবিরাম জীবনধারণের তাগিদে। এই সমাজকে যিনি উপহার দিয়েছেন চরম এক লজ্জা। তিনি আগামী প্রজন্মের অনুপ্রেরণা, এই সমাজের বীরাঙ্গনা। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কর্ণেল আবির ঘোষ। তিনি কাজ করেন দেশকে রক্ষা করার জন্য। এই দেশের অতন্দ্র প্রহরী। আবির বাবু বিগত কার্গিল যুদ্ধের অন্যতম নায়ক ছিলেন। তাঁকে সম্মান জানাতে পেরে আমরা ধন্য। সফল ছিল আমাদের মঞ্চ ভাবনা #ওরাকাজ_করে।
সমগ্র অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বনামধন্য সাহিত্যিক #নিলিনীবেরা মহাশয়, প্রধান অতিথি ছিলেন আনন্দ প্রকাশনির কর্ণধার #আনন্দমণ্ডল মহাশয়, ছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক পৃথ্বীরাজসেন মহাশয়, কবি সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক #সৌগতরাণা_কবিয়াল মহাশয়।
সবার উপস্থিতিতে মঞ্চ আলোকিত হয়। “
সময় শ্রদ্ধা জানায় সেই কর্মকেই, যে কর্মের মানুষের কথা লেখা থাকে…! রজত পুরোকায়স্থ মহাশয়ের ভাবনায় অসাধারণ ভাবে উজ্জীবিত এক মঞ্চ হয়ে ওঠে চোখ সাহিত্য মঞ্চ.. যেখানে নবীন প্রবীণ লেখকগন নিজেদের ভাবনা নিয়ে কথা বলেন, তাদের মুখোমুখি সেই চরিত্রগুলো ভেসে ওঠে চোখ সাহিত্য পরিবারের উৎসব বারান্দায়… মঞ্চের আলোয় শিশু সাহিত্যিক হিসেবে জ্বলে উঠে আগামী সময়ের জন্য দশ বছর বয়সের দেবাংশ চ্যাটার্জি.. মঞ্চে দেবী দুর্গার প্রতিরুপ হয়ে ওঠেন বাঁকুড়ার ট্রেনে নিজের জীবিকার তাগিদে একজন কর্ম শিল্পী হয়ে ওঠা আমাদের সমাজের চোখের অনাহুত বিবেক গ্লানি নিয়ে ভূগোলের এম এসসি, বি এড সুপ্রিয়া পাল বৃষ্টি…! মঞ্চে উপবিষ্ট সকল মানুষ অহংকারে তাদের দেশের এক কৃতি মানুষ কর্ণেল আবীর ঘোষকে অভিবাদন করে অবচেতন ভাবেই স্যালুট করে জানিয়ে দেয় যে যথাযোগ্য সন্মানে কখনই বাংলার সাহিত্য কর্মীরা কৃপণ নয়… নব ধারায় আগামী ভারতকে তুলে ধরতে কণ্যা স্নেহে মাতৃ দৃষ্টিতে ভালোবাসা আর আশির্বাদ ফুটে ওঠে ন্যাশানাল গেমসে চারটি স্বর্ণপদক প্রাপ্ত #সায়ন্তনীসাহামণ্ডল’…!
কলকাতার কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট হলের সভাগৃহে চোখ সাহিত্য পত্রিকার এই অনুষ্ঠানে অসাধারণ সঞ্চালনা করেন #দেবাশিসপাল মহাশয় এবং #স্বাগতাপাল মহাশয়া।
“চোখ সাহিত্য পরিবার” এর এডমিল #মৌমিতাচ্যাটার্জী এবং #পঙ্কজদত্ত মহাশয়ের আন্তরিক পরিচালনায়, পত্রিকার সম্পাদক শ্রী রজত পুরোকায়স্থ মহাশয়ের অসাধারণ আথিতেয়তায় মঞ্চে
সম্মান জানানো হয় একঝাঁক কবি / সাহিত্যিকদের। প্রদান করা হয় সম্মাননা স্বারক ও সনদ ।
সম্মান জানানো হয় ন্যাশানাল গেমসে চারটি স্বর্ণপদক প্রাপ্ত #সায়ন্তনীসাহামণ্ডল’কে, নাট্যকার বিশ্বজিৎ পুরকায়স্থ স্মৃতি সাহিত্য সম্মান প্রদান করা হয় কবি #শ্যামলকৃষ্ণমণ্ডল মহাশয়, কবি #মধুছন্দাগাঙ্গুলী মহাশয়া, কবি #সজলপোদ্দারমহাশয়কে। চোখ সাহিত্য সম্মান -2022 প্রদান করা হয় কবি #বৃন্দাবনদাস, কবি #অসীমদাস, কবি #মহাদেবনস্কর মহাশয়কে। সেরা পাঠক- 2022 প্রদান করা হয় #অশোকরায় মহাশয়কে। বীরাঙ্গনা সম্মান – 2022 প্রদান করা হয় #সুপ্রিয়াপাল_বৃষ্টি মহাশয়াকে ।
সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে “প্রাত্যহিক কবিতা পাঠের আসর”এর শিল্পী কবি #সুনীলবণিক মহাশয়, শ্রদ্ধেয়া #মাধুরীশর্মা মাহাশয়া এবং #বর্ণালী_মিস্ত্রী মাহাশয়াকে।
মোড়ক উন্মোচন করা হয় চোখ পত্রিকা, চোখ সংকলন। প্রকাশ করা হয় সাতটি একক গ্রন্থ। কবি কৃষ্ণা গুহ’র “নির্বাচিত কবিতা”, কবি বিকাশ গুঁইয়ের “প্রেম ও প্রকৃতি”, কবি সিদ্ধার্থ সেন এবং ডাক্তার লিপিকা সেনের “রং ও তুলি”, কবি কৃষ্ণগোপাল ঘোষের “প্রথম প্রেম”, কবি ড: শিপ্রা মুখোপাধ্যায় হালদারের “পূর্বরাগের প্রণয়লিপি”, বিষ্ময় বালক দেভাংশ চ্যাটার্জির “A Tide Of Tales” এবং রজত পুরকায়স্থের “রাজার কলম হোক ক্রীতদাস”।
মেধা মননশীলতায় বাংলা সাহিত্য সবসময় দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রধান পঙক্তির সমার্থক..সেই অর্থে আধুনিক সাহিত্যে সত্য এবং সুন্দরকে পাশাপাশি হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যেতে চোখ সাহিত্য পরিবারের মতো এমন ফেরিওয়ালা চাই যাদের হাত ধরে বাংলা সাহিত্য এগিয়ে যাবে তার সঠিক ভবিষ্যতের দিকে…!
জয় হোক শুদ্ধ সাহিত্যের..জয় হোক মানুষের…!
সৌগত রাণা কবিয়াল—
— কবি সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক