হরিমোহন মিশ্রের জমিদারির মধ্যেই হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার ভালুকা বাজার এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা পুজো আজ সার্বজনীন রূপ নিয়েছে।

0
490

নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা :-হরিমোহন মিশ্রের জমিদারির মধ্যেই হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার ভালুকা বাজার এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা পুজো আজ সার্বজনীন রূপ নিয়েছে। একসময় হরিশ্চন্দ্রপুর থানার মিশ্র জমিদারদের জমিদারি বিস্তৃত ছিল হরিশ্চন্দ্রপুর থানা র ভালুকা সহ বিহারের আজিমগঞ্জ, বারসই, মনিহারি সহ বেশ কয়েকটি এলাকায়।
মিশ্র জমিদারির বর্তমানসদস্য চিরঞ্জীব মিশ্র জানালেন হরিমোহন মিশ্র দাপুটে জমিদারের সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন ধর্মপ্রিয়। সে সময় তাদের জমিদারীর মধ্যে ভালুকা ছিল প্রধান অংশ অন্যদিকে হরিশ্চন্দ্রপুর ছিল সদর।প্রায় একশ সাতাশ বছর আগে তখন এলাকায় ইংরেজ শাসন। সে সময় তাঁর জমিদারির ভালুকার ফুলহর নদীর তীরে প্রায় ২০০ বিঘা জমির উপর তৈরি করেছিলেন দুর্গা মন্দির। সাতদিন ধরে চলত দুর্গা পূজাকে ঘিরে উৎসব অনুষ্ঠান। আমন্ত্রিত হতেন ইংরেজ সাহেব রাও। চলতো গান বাজনা। কলকাতা থেকে আনা হতো যাত্রা পার্টি। হাতির পিঠে করে জমিদার বাড়ির সদস্যরা যেতেন পুজো দিতে। চলতো নরনারায়ন সেবা ও বস্ত্র বিতরণ। আমন্ত্রিত হতো সারা জমিদার এর প্রজারা । হাজার ১৯৬৪ সালের ফুলহরের ভাঙ্গনেতলিয়ে যায় জমিদার হরিমোহন মিশ্রের তৈরি করা দুর্গা মন্দির। তারপরেই ভালুকা বাজারে এই পুজো স্থানান্তরিত হয়ে যায়।১৩০১ বঙ্গাব্দে জমিদার হরিমোহন এই দুর্গাপূজা প্রতিষ্ঠা করেন। আজও এই পুজো সার্বজনীন হয়ে গেল সাবেকি প্রতিমা এখনো বজায় রয়েছে বলে জানালেন চিরঞ্জীব বাবু। এই বাড়ি রই সন্তান রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী সৌরীন্দ্রমোহন মিশ্র।
জমিদার বাড়ি আরেক সদস্য ডাক্তার সঞ্জয় মিশ্র জানালেন বর্তমানে এই পূজাটি এখন ভালুকা বাজারের বাসিন্দারাই আয়োজন করে থাকে। আগে জমিদারি স্টেট থেকে একটা খরচ দেওয়া হতো। কিন্তু এখন সেটা আর দেওয়া হয় না। ১৯৫৩ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পরে এলাকার বাসিন্দারা উদ্যোগে এই পুজো করে আসছে। যদিও এই মিশ্র বংশের আদি পুজো পিপলার বড় চালি।
বর্তমান পুজোর উদ্যোক্তাদের মধ্যে সভাপতি রাজেশ চৌধুরী জানান এলাকার জমিদাররা প্রতিষ্ঠা করলেও কালের নিয়মে এই পুজো এখন এলাকায় সার্বজনীন হয়ে গিয়েছে। এলাকাবাসীরা চাঁদা তুলে এই পুজোর আয়োজন করে থাকে। এবার ১২৯ তম পুজো।পুজোর চারদিনের ধুমধাম করে নিষ্ঠা সহকারে সাবেকি প্রতিমার পুজো করা হয়।সারা ভালুকা বাজার এলাকার লোকজন এই পুজোয় জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে অংশগ্রহণ করেন।অষ্টমীর দিন এলাকার সমস্ত মহিলা এক হয়ে মায়ের পূজা দেন। আগে যাত্রাপালা হলেও এখন আর অর্থের অভাবে যাত্রাপালা করা সম্ভব হয় না। জনসেবা ও বস্ত্র বিতরণ হয়ে থাকে।
পুজো কমিটির সম্পাদক শুভম চৌধুরী জানান সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে আজ এই পুজো হয়ে থাকে।সময় এলাকার দাপুটে জমিদার হরিমোহন মিশ্র এলাকাবাসীদের অনুরোধে এখানে দুর্গা পুজো আরম্ভ করেছিলেন। আজও নবমীর দিন এখানে কুমড়ো বলি হয়। তার সঙ্গে সঙ্গে হয় ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ভালুকার রায় মোহন মোহিনী মোহন হাই স্কুল এই জমিদারদের প্রতিষ্ঠা করা। ভালুকার মিশ্র জমিদাররা দাপুটে হলেও এলাকায় শিক্ষা সংস্কৃতিতে কোনরকম খামতি রাখতেন না।