মহা জাগ্ৰত মাইত কালীর ও শিবের মুন্ড মন্দিরে আনা হল।

0
446

আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ একটা প্রবাদ বাক্য প্রচলিত আছে—“কালী পুজোয় সোনামুখী আসেননি? আরে মশাই আপনি তো তাহলে কালী পুজোয় দেখেননি।” খুব ভক্তি, নিষ্ঠা সহকারে সোনামুখীতে কালীপূজা হয়। যা দেখলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। সোনামুখীতে অজস্র কালী হয়। জাঁকজমকে প্রতিটি কালী উনিশ- বিশ। একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার লড়াই চলে। মহা ধুমধামে চার দিন কালীপুজোর পর বিসর্জনের দিন সোনামুখী অবরুদ্ধ হয়ে যায় হাজার হাজার মানুষের সমাগমে। সোনামুখীর সব কালী স্বমহিময় পূজীতা হন। কিন্তু যাকে ঘিরে এত উৎসাহ উদ্দীপনা তিনি হলেন সোনামুখী তথা, পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীন কালী গুলির অন্যতম মা -ই -তো কালী। বিসর্জনের ভিড় সামলাতে প্রশাসন হিমশিম খেয়ে যায়। সকলের নজর থাকে মা -ই -তো কালীর দিকে। তবে অন্যান্য কালী গুলো কম যায় না, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সকলে সেরা হতে চায়। আজ সেই সোনামুখীর মহা জাগ্রত মহাদেবী মাইত কালীর ও শিবের মুন্ড মন্দিরে আনা হলো। আগামীকাল দূই মেটে করা হবে। মন্দির থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সূত্রধর বাড়ি থেকে খালি পায়ে হেঁটে, নতুন বস্ত্র পরিধান করে, উপাস করে, ভক্তি সহকারে দেবীর মুন্ড আনা হয়। সূত্র ধর পরিবারও বেশ কয়েক পুরুষ ধরে মায়ের এবং শিবের মূর্তি তৈরি করেন। উনারাও মহা সৌভাগ্যশালী এবং দেবীর স্বপ্নাদিষ্ট। বর্তমানে তনু সূত্রধর, বিপদতারণ সূত্রধর, ও সাহেব সূত্র ধরের বংশ মায়ের মৃন্ময়ী রূপের সৃষ্টিকর্তা। দেবীর উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। এই কালী দেবী প্রায় ৫৫০বছরের পুরনো। শিবাজীর বর্গী সেনাপতি ভাস্কর পন্ডিতএই দেবীর পূজা করতেন। এখনও মন্দিরে প্রমাণ স্বরূপ বর্গী সেনাপতির খড়গ ও পঞ্চমুখী আসন রয়েছে। কথিত আছে আগে এ দেবীর মন্দিরে নরবলি হত। কালীপুজোর পাঁচ দিন অজস্র পাঁঠা বলি হয়। বছরের প্রায় সব দিনই পাঁঠা বলি হয় এখানে। মাইত কালী নামটি বগী’ সেনাপতির দেওয়া। যেখানে মন্দির সেখানে আগে গভীর জঙ্গল ছিল। এক পুরোহিত কালীপুজো করছিলেন। বগী’ সেনাপতি সেই ব্রাহ্মণ পুরোহিত কে হাড়িকাঠে ঢুকিয়ে দেবীর সামনে বলি দিতে উদ্যত হয়। কিন্তু খড়গ নামলো না। বগী’ সেনাপতির মনে হলো পিছন থেকে খড়গ যেন কোন নারী আটকে রেখেছে। সেনাপতির সমস্ত শরীর অবশ হয়ে গেল , দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেললেন। তখন তার মুখ থেকে একটা ভয় মিশ্রিত শব্দ বেরিয়ে এলো “মা-ই-তো”। অর্থাৎ এই দেবী স্বয়ং মা । ইনি স্বয়ং ব্রহ্মার অংশ । ইনি ব্রহ্মময়ী । তার পর থেকেই এই কালির নাম হল মাইত কালী ব্রহ্মময়ী। মাইত কালীর পুজোয় বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমনকি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ভক্তরা সামিল হন। কলকাতা থেকেও অনেক ভক্ত আসেন। অনেক সেলিব্রিটিরাও আসেন। সোনামুখী কালী পুজো পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত কালী পূজা গুলির একটা। বিসর্জনের দিন সোনামুখী জনসমুদ্রে ভেসে যায়। নিকটবর্তী বাঁকুড়া, দুর্গাপুর, আসানসোল, বিষ্ণুপুর এবং পশ্চিমবঙ্গের দূরদূরান্ত থেকে বিসর্জনের আকর্ষণে ছুটে আসেন। বিসর্জন প্রায় 24 ঘন্টা ব্যাপী ।