আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ বর্ষার মরসুমে জলের তলায় যায় মুকুটমনিপুর জলাধারের পরিত্যক্ত প্রাচীন রহস্যময় একটি মন্দির। মুকুটমনিপুরের কংসাবতী জলাধারের কুমারী নদীর অংশের একটি দ্বীপ, যার তিন দিকে জল, মাঝে রয়েছে প্রাচীন এই মন্দিরটি । বর্ষাকালে জলাধারের জল বাড়লে ডুবে যায় মন্দির । বাসিন্দা থেকে গবেষকদের মতে এই মন্দিরটি রানিবাঁধের পুড্ডি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৎকালীন ঝরিয়া গ্রামের লক্ষ্মী- জনার্দনের মন্দির। বর্তমানে বিগ্রহহীন এই মন্দিরের সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন স্থানীয়দের একাংশ । তাছাড়াও মন্দির ঘিরে পর্যটনের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে বলেও দাবি স্থানীয়দের । দরকার প্রচারের
ষাটের দশকে কংসাবতী জলাধার নির্মাণের জন্য বাঁকুড়া- পুরুলিয়ার মোট ১৭৩ টি মৌজা এই প্রকল্পের মধ্যে পড়ে । প্রকল্প তৈরিতে জমি অধিগ্রহণের ফলে রানিবাঁধের পুড্ডি পঞ্চায়েতের ঝরিয়ার বাসিন্দাদেরও গ্রাম ছাড়তে হয় । বাসিন্দাদের মতে গ্রামের জমিদার পরিবার সুবুদ্ধি’দের কুলদেবতা লক্ষ্মী- জনার্দন । উচ্ছেদের সময় বিগ্রহ নিয়ে যান তাঁরা । বিগ্রহহীন হয় মন্দির । জলাধার তৈরির সময় বাকি বাড়ি ঘর ভাঙা হলেও ধর্মীয় সংস্কার বা অন্য কোনও অজানা কারণে অক্ষত রয়ে যায় মন্দিরটি। বিগ্রহহীন মন্দিরের ছাদের ক্ষতি হয়েছে । বর্ষার মরসুম থেকে তিন চার মাস জলের তলায় চলে যায় মন্দির । বর্তমানে এটাই বিশেষত্ব এই মন্দিরের ।
বর্তমানে খাতড়ার বাসিন্দা ওই সুবুদ্ধি পরিবারের এক বংশধর বছর ষাটের শ্রীধর সুবুদ্ধি জানান, লক্ষ্মী – জনার্দন তাঁদের কুলদেবতা । বর্তমানে বিগ্রহ রয়েছে হিড়বাঁধের ভগড়া গ্রামে। সেখানে নতুন মন্দির তৈরি করা হয়েছে, চলে নিত্য পূজা।
স্থানীয় বাঁন্দাগাল গ্রামের বাসিন্দা অনিল মাহাতো জানান, অগাস্টে ডুবে গেলে জলাধারের জল কমলে অক্টোবর থেকে নভেম্বরে আবার দেখা যায় মন্দিরটি। ঝরিয়ার ওই মন্দির প্রতি বছর তিন থেকে চার মাস ডুবে থাকে জলাধারে। মন্দির সংস্কার ও সংরক্ষণ করলে ভাল হয়। সরকারি উদ্যোগে এই মন্দিরের প্রচার দরকার । অজানাকে জানতে ও দেখতে মুকুটমণিপুরে আসা পর্যটকদের কাছে দেখার ও জানার আগ্রহ বাড়লে এলাকার বাসিন্দারা বিভিন্ন ভাবে সমৃদ্ধ হবেন ।
মুকুটমণিপুর থেকে জলাধারের পাড় হয়ে ভায়া ধানাড়া ওই মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার, জলপথে প্রায় ৮ কিলোমিটার । পরেশনাথ থেকে জলপথে প্রায় দেড় কিলোমিটার জলাধারের বোট চালক সুভাষ বাগদি জানান, মন্দির ঘিরে পর্যটনের প্রসার ঘটালে তাঁদের যাত্রী বাড়বে, বাড়বে আয়ও ।
গবেষক সৌমেন রক্ষিত জানান, কুমারী চরে ওই মন্দির শতবর্ষের বেশি প্রাচীন । মন্দিরের প্রাচীনত্ব ও মুকুটমণিপুরে আসা পর্যটকদের কথা ভেবে প্রয়োজন মন্দির সংস্কার ও সংরক্ষণের । স্থানীয়রাও উপকৃত হবেন ।
Home রাজ্য দক্ষিণ বাংলা কংসাবতী ও কুমারী নদীর দ্বীপে সুবুদ্ধিদের প্রাচীন বিষ্ণু মন্দির এখনো দাঁড়িয়ে আছে...