আজো পুরানো রীতি মেনে পুজো হয়ে আসছে বুলবুলচন্ডীতে।

0
321

নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদাঃ-আজো পুরানো রীতি মেনে পুজো হয়ে আসছে বুলবুলচন্ডীতে,উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ কালী পুজো মানেই, মালদহের হবিবপুর ব্লকের বুলবুলচণ্ডীতে কালী পুজো । এখানকার বড় কালী উচ্চতায় প্রায় ৪২ ফুট ৷ স্থানীয় সূত্রে জানা যায় এই মায়ের মূর্তি প্রতিবছর একহাত করে বানানো হতো তবে কিছু সমস্যার জন্য ৪২ ফুট রাখ হয় ।স্থায়ী মন্দিরে বড় কালী পুজো হচ্ছে গত ৭৩ বছর ধরেই হয়ে আসছে এবচর ৭৪ তম। এই পুজো দেখতে হাজির হয় পার্শ্ববর্তী জেলার সহ ভিন রাজ্যের লক্ষাধিক ভক্ত।
১৩ দিন ধরে চলে বৃহৎ কালী মায়ের পুজো ও মেলার।এবার এই পুজো ৭৪ তম বর্ষে পরেতে চলেছে । পুজোর প্রস্তুতি চলছে। কালী মা’র মূর্তি গড়ার কাজ জোর কদমে চলছে। পুজোকে ঘিরে এলাকাবাসীদের মধ্যে আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। সারাবছর ধরে এই দিনটির জন্য তাঁরা অপেক্ষা করে থাকেন। বাইরের একাধিক জেলার ভক্তদের ব্যাপক উৎসাহ এই পুজোকে কেন্দ্র করে। মূর্তির কাঠামোকে নদীর জলে স্নান করিয়ে এনে পুজো দিয়ে শুরু হয় এই বৃহৎ কালী পূজার প্রস্তুতি।
পুজোর সময় মায়ের বিরাট রূপ এক পলক দেখার জন্য প্রতিদিন অগণিত ভক্ত এখানে চলে আসেন। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে মণ্ডপ সংলগ্ন চত্বর জুড়ে লাইন দিয়ে ভক্তরা প্রতিমা দর্শন করেন। দর্শনার্থীদের আনন্দ দিতে নালাগোলা রাজ্য সড়কের ধারে বুলবুলচণ্ডী গ্রাম সদর জুড়ে আলোকসজ্জা দিয়ে গোটা এলাকা মুড়ে ফেলা হয়। উদ্যোক্তাদের দাবি, উত্তরবঙ্গের সব চাইতে বড় মা কালী পূজিতা হন এখানে। এরকম বড় মেলা আর কোনও জেলাতে দেখা যায় না। বাইরে থেকে প্ৰচুর ব্যবসায়ীরা এখানে এসে দোকান করেন। পুজো কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, এবারে পুজোর বাজেট ১২ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, বুলবুলচণ্ডীতে অতীতে বড় আকারে কালী পুজো হতো না। তাই ১৯৪৯ সালে স্থানীয় এলাকার ত্রিবেণী সিংহ, যামেনী দূবে, কানু রায়, অজয় চক্রবর্তী, বীরেন সিংহ এই পাঁচজন যুবক মিলে কালীপুজো শুরু করেন। আগে মায়ের আকৃতি ছোট ছিল। পুজোর নিয়ম ছিল প্রতি বছর মায়ের উচ্চতা ১ ফুট করে বাড়বে। তা বাড়তে বাড়তে আজ এই ৪২ ফুট উচ্চতায় এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু নানা কারণে পরবর্তীতে মায়ের মূর্তির উচ্চতা বাড়ানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে পুজোর সব ঐতিহ্য এখনও একই বজায় রয়েছে। বর্তমানে কমিটির সদস্য সংখ্যা ৩৭ এর বেশি। ।
বুলবুলচণ্ডী পুজো কমিটির সভাপতি প্রশান্ত রায় ও সহ সভাপতি বিনোদ প্রসাদ বলেন,মায়ের উচ্চতা ৪২ ফুট। আগে নিয়ম ছিল প্রতি বছর বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু পরবর্তীতে নানা কারণে সবাই মিলে মায়ের মূর্তির উচ্চতা আর বাড়ানো হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু মায়ের পুজোর নিয়ম সব একই রয়েছে। ১৩ দিন সকাল ও সন্ধ্যায় মায়ের পুজো নিষ্ঠার সঙ্গে করা হয়। ১৪ দিনে মায়ের বিসর্জন হয়। বৃহৎ আকারে মায়ের পুজো ও মেলা উত্তরবঙ্গের কোথাও হয় না।
কমিটির সম্পাদক পীযুষ মণ্ডল বলেন, পুজোর বাজেট ১২ লক্ষ টাকা। আলোকসজ্জাতেও থাকছে বিশেষ আকর্ষণ। পুজোয় বিসর্জনের ঐতিহ্য রয়েছে। বড় মা’কে ভক্তদের প্রচেষ্টায় মন্দির থেকে বের করা হয়। তা দেখতে ব্যাপক ভিড় হয়। এক কথায়, বুলবুলচণ্ডী কালীপুজো মানেই সবার আবেগ।
হবিবপুর ব্লকের অন্তর্গত বুলবুলচণ্ডী বাজার এলাকার বিশালাকৃতির কালী জেলার অন্যতম একটি কালীপুজো হিসাবে পরিচিত৷বর্তমানে নির্মিত স্থায়ী মণ্ডপে প্রায় ৩৫ হাত উঁচু দেবী পূজিতা হন৷পুজো উপলক্ষ্যে এখানে মেলা বসে৷এখানে বলিদান প্রথা নেই৷প্রায় ১০ দিন দেবী এই স্থায়ী মণ্ডপে অবস্থান করেন৷
পাশাপাশি বুলবুল চন্ডিতে আরেকটি পুজোর কথা না বললে এই বড়কালীন পুজোর ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এখান থেকে সামান্য কিছু দূরে বুলবুলচণ্ডী গ্রামীণ হাসপাতালের নিকট আরও একটি কালীপুজো হয়৷স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এই দেবী কালী হলেন বুলবুলচণ্ডী বাজারে অবস্থিত কালীর ছোটো বোন৷এখানে অবশ্য বলিপ্রথা আছে৷ এর আগে পূজার ৭ দিন পরে নিরঞ্জনের দিন শোভাযাত্রা সহকারে ছোটো বোনকে বড়ো বোনের সঙ্গে দেখা করানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হত, কিন্তু বাজারে স্থান সংকুলানের কারণে দুই বোনের দর্শন প্রথা বর্তমানে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।