নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা;০৬নভেম্বর: রেশনে দেওয়া হচ্ছে অত্যন্ত নিম্নমানের চাল। অভিযোগ এমনকি তার মধ্যে থাকছে প্লাস্টিকের চাল। যা খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেকে। ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে পরিমাণ মতো দেওয়া হচ্ছে না রেশন সামগ্রী। রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রাস্তায় চাল ফেলে বিক্ষোভ এলাকাবাসীর। যদিও অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি রেশন ডিলারের। অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস তৃণমূল নেতৃত্বের। সাথে কেন্দ্র সরকারের নীতির দিকে আঙুল তুলল তৃণমূল। পাল্টা তৃণমূলকে তীব্র কটাক্ষ বিজেপির। তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা। মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত তুলসীহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের পাড়ো গ্রামে রেশন ডিলার ধনঞ্জয় সাহার বিরুদ্ধে রাস্তায় চাল ফেলে বিক্ষোভ দেখালো এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত নিম্নমানের চাল দেওয়া হচ্ছে রেশন থেকে। এমনকি তার মধ্যে থাকছে প্লাস্টিকের চাল। সেই চালের ভাত খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেকে। ভাত রান্নার সময় মনে হচ্ছে কৃত্রিম চাল। বারবার রেশন ডিলার কে বললেও এর সুরাহা হয়নি। এছাড়াও অভিযোগ তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে নিলেও পরিমাণ মতন রেশন দেওয়া হচ্ছে না। তাই এদিন রাস্তায় চাল ফেলে বিক্ষোভ দেখায় গ্রামবাসীরা। তাদের দাবি তাদেরকে পরিমান মত ভাল মানের রেশন সামগ্রী দিতে হবে। প্রশাসনিক তদন্তের দাবিও জানিয়েছে এলাকাবাসী।এদিকে এই বিক্ষোভকে নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। রেশন দুর্নীতি নিয়ে বিজেপি আক্রমণ করেছে তৃণমূলকে। পাল্টা কেন্দ্র সরকারের রেশন নীতি কে দায়ী করেছে তৃণমূল। যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানোতোর।
বিক্ষোভকারী এলাকাবাসী মনজুরা বিবি বলেন, প্লাস্টিকের চাল দিয়ে দিচ্ছে। ওই চালের ভাত খেয়ে হজমের সমস্যা হচ্ছে। বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই পরিমাণ মতো ভালো মানের চাল দিক।
বিক্ষোভকারী এলাকাবাসী মানসার আলম বলেন, এই ধরনের নিম্নমানের চাল দিলে সেই ভাত মানুষকে কি ভাবে বেশি দিন বাঁচবে। রেশন ডিলার একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছে। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করব প্রশাসন যাতে পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
বিক্ষোভকারী এলাকাবাসী আতাউর রহমান বলেন, চাল দেখে মনে হচ্ছে কৃত্রিম চাল। ভাত বসানোর সময় জলের মধ্যে চাল ভেসে উঠছে। খাওয়ার সময় মনে হচ্ছে প্লাস্টিক। খাদ্য দপ্তর স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে তদন্ত করে দেখুক।
রেশন ডিলার ধনঞ্জয় সাহার ছেলে মানস সাহা বলেন, এই ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমাদের কাছে যে ধরনের চাল আসছে আমরা সেটাই দিচ্ছি। যার যতটা পরিমাণে পাওয়ার কথা ততটাই দিচ্ছে। এর মধ্যে দুর্নীতির কিছু নেই।
হরিশ্চন্দ্রপুর ১(বি) ব্লক তৃণমূল সভাপতি মানিক দাস বলেন, অভিযোগটি আমি শুনেছি। প্রশাসনিক কর্তাদের বলব খতিয়ে দেখতে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর ক্ষেত্রে হয়তো বায়োমেট্রিক ব্যবস্থার কোন সমস্যা হয়েছে। এর জন্য কেন্দ্র সরকারের সিদ্ধান্ত দায়ী।
উত্তর মালদা জেলা বিজেপি সাংগঠনিক সম্পাদক রূপেশ আগরওয়াল বলেন, কেন্দ্র সরকার যথেষ্ট ভালো মানের রেশন সামগ্রী দেয়। রেশনের চুরি বন্ধ করার জন্য বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালু করেছে। কিন্তু তারপরেও কিছু অসাধু রেশন ডিলার দুর্নীতি করছে। কেন্দ্রের পাঠানো রেশন সামগ্রী পরিবর্তন করে দিচ্ছে। এতে মদত দিচ্ছে এখানকার শাসক দল।
এই এলাকায় রেশন দুর্নীতি নতুন কোন ঘটনা নয়। এর আগেও সাধারণ মানুষ অভিযোগ তুলেছে সঠিক পরিমাণে রেশন সামগ্রী না পাওয়ার। সরকারের পক্ষ থেকে যেখানে রেশন সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে মানুষের জন্য। সেখানে কিছু অসাধু লোকজনের মুনাফার চাহিদা মেটানোর জন্য দুর্নীতি হচ্ছে। সরকারের দেওয়া রেশন সামগ্রী পাল্টে দেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী। প্রশাসনের উচিত সমগ্র ব্যাপার খতিয়ে দেখে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।