সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার ‘রাজভবন চলো’ কর্মসূচিতে সারা দেশে সব রাজ্যের রাজধানীতে লক্ষ লক্ষ কৃষকের মিছিল ও সমাবেশ, কলকাতা মুখরিত হল ১০ হাজার কৃষকের পদচারণায়।

0
1128

কলকাতা, নিজস্ব সংবাদদাতা:- সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার (এসকেএম) ডাকে শ্রমিক, ছাত্র, যুবক, মহিলা এবং সাধারণ মানুষের সমর্থিত কৃষকরা আজ সারা দেশে পদযাত্রা এবং সমাবেশ করলেন। ৫০ লক্ষের বেশি মানুষ এসকেএম-এর ‘রাজভবন চলো’ আহ্বানে যোগ দিতে কৃষক বিরোধী বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তাঁদের প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে আসেন। কেন্দ্রীয় শাসক দলের কৃষক বিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ করার লক্ষ্যে প্রত্যেক রাজ্যের রাজ্যপালদের মাধ্যমে ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি পাঠানো হয়।

পশ্চিমবঙ্গে এদিন সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার নেতৃত্বে প্রায় ১০ হাজার কৃষক দুপুর ১টায় শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশন থেকে মিছিল করে রানি রাসমণি রোডের দিকে রওনা দেন। দুপুর ২টো নাগাদ রানি রাসমণি রোডে শুরু হয় এসকেএম-এর জনসভা। সভায় বক্তব্য রাখেন, অমল হালদার, কার্তিক পাল, সুভাষ নস্কর, অভীক সাহা, সমীর পূততুণ্ড, অনুরাধা দেব, অনুরাধা তলোয়ার, জয়তু দেশমুখ, গোপাল বিশ্বাস, ফরিদ মোল্লা, শৈলেন মিশ্র, নিরাপদ সরকার, রাম বচ্চন প্রমুখ। কৃষকদের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ না করলে মোদি-শাহ সরকারকে চরম পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে বলে এদিন মোর্চার তরফে প্রায় প্রত্যেক বক্তাই তাঁদের বক্তব্যের মধ্যে উল্লেখ করেন। একইভাবে রাজ্য সরকারের প্রতিও হুঁশিয়ারি দেন কৃষক নেতারা। সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার জাতীয় সমন্বয় সমিতির সদস্য অভীক সাহা এদিন বলেন, “রাজ্যের কৃষকেরা, সাধারণ মানুষেরা শান্তিতে নেই অথচ নেতারা শান্তিকুঞ্জ আর শান্তিনিকেতন নামে তাদের বাসভবনে শান্তিসুখ পেতে চাইছেন। এমনটা চলবে না, সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিশ্চিত করার আইন বা এমএসপি আইনের যে খসড়া প্রস্তাব জমা দিয়েছিল রাজ্য সরকারের কাছে, ঐ খসড়ার ভিত্তিতে অবিলম্বে আইন প্রণয়ন করতে হবে রাজ্য সরকারকে। এছাড়াও সারের কালোবাজারি বন্ধ করা-সহ যেসকল দাবিগুলো উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো পূরণ করা না হলে কেন্দ্রের মতো রাজ্যের সরকারের কপালেও দুঃখ নাচছে।”

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের মাধ্যমে এরাজ্যের সরকারের কাছে দাবি তোলা হয়: (১) অবিলম্বে রাজ্যে ন্যুনতম সহায়ক মূল্য (MSP) আইন প্রণয়ন করতে হবে। (২) ১০০ দিনের প্রকল্প কাজ চাই—বকেয়া মজুরি চাই। ২০০ দিনের কাজ, ৬০০ টাকা মজুরি দিতে হবে। (৩) সমস্ত গ্রামে ক্যাম্প করে সরকারি দরে সমস্ত ফসল কিনতে হবে রাজ্য সরকারকে। (৪) ভর্তুকি দিয়ে সার, বীজ, কীটনাশক, ডিজেল সরবরাহ করতে হবে। সার ও বীজে যে ব্যাপক হারে কালোবাজারি ও ট্যাগিং চলছে এ রাজ্যে, তা যাতে অবিলম্বে বন্ধ হয় এবং নির্ধারিত মূল্যে যাতে কৃষিকরা সার ও বীজ সংগ্রহ করতে পারেন, সেই ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ করতে হবে। (৫) বনাধিকার ও গ্রামসভার অধিকার খর্বকারী, আদিবাসী-বিরোধী, প্রকৃতি-পরিবেশ বিরোধী নয়া বনসংরক্ষণ আইন ২০২২ বাতিল করতে হবে। (৬) ভূমি দফতরে ঘুষ-দালালি বন্ধ করতে হবে। (৭) বাস্তুহীনদের পাট্টা দিতে হবে। খাস জমি ভূমিহীনদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। (৮) মাইক্রোফিনান্স কোম্পানির জুলুমবাজি বন্ধ করতে হবে।

চণ্ডীগড়, লখনৌ, পাটনা, কলকাতা, তিরুবনন্তপুরম, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ, ভোপাল, জয়পুর এবং অন্যান্য রাজ্যের রাজধানীতে লক্ষাধিক লোকের বিশাল জমায়েত দেখা গেছে। সারা ভারত থেকে তথ্যের ছবি এবং ভিডিও যেভাবে ‘বর্ষিত’ হয়েছে, এসকেএম অনুমান করে যে ৫০ লক্ষের বেশি কৃষক আজ ভারতের রাস্তায় নেমে এসেছেন। কৃষকদের সমস্ত দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই সম্মিলিত সংগ্রাম চলবে।

কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি তোলা হয় (১) সমস্ত কৃষকদের জন্য সমস্ত পণ্যের জন্য C2 + 50% এর আইনত গ্যারান্টিযুক্ত ন্যূনতম সমর্থন মূল্য (MSP) (৩) একটি ব্যাপক ঋণ মকুব প্রকল্পের মাধ্যমে ঋণমুক্তি (৩) বিদ্যুৎ সংশোধন বিল ২০২২ প্রত্যাহার (৪) লখিমপুর খেরিতে কৃষক ও সাংবাদিক হত্যায় অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনিকে বহিষ্কার এবং তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ, (৫) প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসলের ক্ষতির জন্য কৃষকদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ব্যাপক এবং কার্যকর ফসল বিমা প্রকল্প (৬) সকল প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক এবং কৃষি শ্রমিকদের প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা কৃষক পেনশন (৭) কৃষক আন্দোলনের সময় কৃষকদের বিরুদ্ধে করা সমস্ত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার (৮) কৃষক আন্দোলনের সময় শাহাদত বরণ করা চাষিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ।

স্মরণ করা যেতে পারে যে ২৬ নভেম্বর তারিখটি ভারতে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এদিন আমাদের সংবিধান দিবস। ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বরে এসকেএম ঐতিহাসিক ‘দিল্লি চলো’ আন্দোলন শুরু করেছিল, যা বিশ্বের দীর্ঘতম এবং বৃহত্তম কৃষক আন্দোলনে পরিণত হয় এবং কৃষকদের জমি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য কর্পোরেট-রাজনীতিক আঁতাতের বিরুদ্ধে কৃষকদের গৌরবময় বিজয়ের দিকে নিয়ে যায়। আজ দেশব্যাপী ‘রাজভবন চলো কর্মসূচি’ কৃষক আন্দোলনের পরবর্তী পর্বের সূচনা করল৷

‘রাজভবন চলো’ কর্মসূচির দুর্দান্ত সাফল্যের জন্য সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য তথা সারা দেশের সমস্ত কৃষক, ক্ষেতমজুর, শ্রমিক, ছাত্র, যুবক, মহিলা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট নাগরিকদের অভিনন্দন জানায় এবং দেশব্যাপী সবাইকে নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রামে যোগদান করতে আবেদন জানায়।

মিডিয়া সেল | সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা।
যোগাযোগ: ৮৩৩৬৯৩৯৩৯৩