নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা :- শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের। গ্রেফতার সিভিক ভলেন্টিয়ার। রাজনীতির শিকার অভিযোগ পরিবারের। অভিযুক্তদের তালিকায় তৃণমূল নেতাদের নাম থাকলেও তারা গ্রেপ্তার হয়নি। পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ গ্রামবাসীর। সমগ্র ঘটনা নিয়ে তুঙ্গে রাজনৈতিক বিতর্ক। তৃণমূলের অঙ্গুলিলেহনে পুলিশ চলছে কটাক্ষ বিজেপির। পুলিশ পুলিশের কাজ করছে সাফাই তৃণমূলের। গত রবিবার রাতে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার বাংরুয়া গ্রাম থেকে উরুষ মেলা দেখে ফেরার সময় আক্রান্ত হন দৌলতনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তথা তৃণমূল নেতা মোহাম্মদ নজিবুর রহমান। তাকে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে লোহার রড দিয়ে মেরে রক্তাক্ত করে মারধরের অভিযোগ উঠে হরিশ্চন্দ্রপুর ব্লকের প্রাক্তন তৃনমূল সভাপতি হজরত আলীর দুই ছেলে এবং হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ সমাউন ইসলাম ও তার দলবলের বিরুদ্ধে। নজিবুর রহমান অভিযোগ করেন তার কাছ থেকে পদ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়েছিল হজরত আলী। সেই টাকা ফেরত চাওয়ার জন্যই তাকে মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে লোহার রড দিয়ে মারধর করা হয়েছে। এই মুহূর্তে আক্রান্ত তৃণমূল নেতা হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সমগ্র ঘটনায় প্রকাশ্যে এসে পড়ে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। ৮ জনের নামে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়।কিন্তু পুলিশ গ্রেপ্তার করে শুধুমাত্র এক জনকে।পেশায় সিভিক ভলেন্টিয়ার দক্ষিণ তালসুর গ্রামের মহিদুর রহমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার চাঁচল মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়েছে। সিভিক ভলেন্টিয়ার মহিদুর প্রাক্তন ব্লক সভাপতি হজরত আলীর ভাইয়ের ছেলে। কিন্তু তার স্ত্রী দাবি করেছে সে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। রাজনীতির লড়াইয়ে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে তাকে।বাড়িতে রয়েছে বৃদ্ধা মা স্ত্রী এবং নাবালক দুই সন্তান। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার। নিজের কাজ ছাড়া সাথে পাঁচে থাকে না মহিদুর। তাই তার গ্রেফতারের ঘটনায় হতবাক পরিবারের লোক থেকে এলাকাবাসী। ন্যায় বিচারের জন্য আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ার স্ত্রীর। অভিযুক্তদের তালিকায় হজরত আলীর ছেলে এবং সামাউন ইসলাম ও দলবলের নাম রয়েছে। কিন্তু তারা তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত থাকায় গ্রেফতার হচ্ছে না। বদলে নিরীহ এক জনকে গ্রেফতার হতে হচ্ছে। অভিযোগ এলাকাবাসীর। যদিও হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে বাকি অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। সমগ্র ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে জোড় বিতর্ক। বিজেপির খোঁচা পুলিশ নিরপেক্ষ নয় তৃণমূলের দলদাস। পুলিশ আইন অনুযায়ী পুলিশের কাজ করবে। রাজনীতির সম্পর্ক নেই দাবি তৃণমূলের। পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক বিতর্ক।
স্ত্রী সামিমা খাতুন বলেন, আমার স্বামী এই ঘটনায় যুক্ত না। রাজনীতিও করে না। আমাদের গরীব পরিবার। ওকে ফাঁসিয়ে দিলো। ন্যায়বিচার না পেলে আদালতে যাবো।
এলাকাবাসী আব্দুল রউফ বলেন, ছেলেটা নিরীহ। কোন ঝামেলায় থাকে না। পুলিশ তো তৃণমূলের লোক কে গ্রেপ্তার করবে না। ওকে ফাঁসিয়ে দিলো।
বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য কিষান কেডিয়া বলেন, অভিযোগ তো আট জনের নামে করা হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধক্ষ্য রয়েছে তার মধ্যে। তৃণমূলের একজনকেও গ্রেপ্তার করলো না। পুলিশ এই রাজ্যে নিরপেক্ষ কাজ করে না।
হরিশ্চন্দ্রপুর তৃণমূল চেয়ারম্যান সঞ্জীব গুপ্তা বলেন, বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কিছু বলবো না। এর মধ্যে রাজনীতির কিছু নেই। পুলিশ পুলিশের কাজ করবে।
প্রসঙ্গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে এমনিতেই অস্বস্তিতে শাসকদল। তারপর সেই ঘটনায় গ্রেপ্তার হচ্ছে এক সিভিক ভলেন্টিয়ার। যার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। স্বাভাবিক ভাবেই ভাবমূর্তি নস্ট হচ্ছে তৃণমূলের।