জিঙ্গল বেলস : ডঃ অশোকা রায়।

    0
    342

    আমি উজান মজুমদার | ডাক নাম পৌষ|পৌষের এক নরম রোদ্দুরের সকালে আমার জন্ম | দুহাজার তিনের ঊনিশে ডিসেম্বর আমার জন্ম | আমার ইংরেজি জন্মসাল আর তারিখ জানিয়েছে আমার বাবা তমাল মজুমদার ও মা শর্মিষ্ঠা মজুমদার | কিন্তু আজকাল ছেলে – মেয়েরা যে জিনিসটা জানে না, সেটা হচ্ছে, তাদের বাংলা জন্মসাল আর বাংলা জন্ম তারিখ | আমি জানি,..
    আমার দুজন প্রিয় মানুষের বদান্যতায়, চোদ্দশ দশের চৌঠা পৌষ, বড়ো দিনের ছ’ দিন আগে | আমার দাদু মানে আমার বাবার বাবা ঊনিশে ডিসেম্বর উদযাপন করেন, নিরাড়ম্বর ভাবে, আর পঁচিশে ডিসেম্বর পালন করেন মোটামুটি ঘটাপটা করে, যীশু আর আমার জন্মদিন হিসাবে| আমার দাদুর কাছে আমি যীশু| ঠাম্মির কাছেও তাই | ওরা কোনদিনই আমাকে পৌষ বলে ডাকেন না | আমি পৌষ আমার বাবা-মায়ের, আর অন্য আত্মীয়দের| দাদুর প্রায়ই আক্ষেপোক্তি, ” ইশ দাদু ভাই যদি আর ছদিন বাদে জন্মাতো! অথচ আমার দাদু কৃষ্ণকান্ত মজুমদার কিন্তু খ্রীষ্টান নয়, খাঁটি হিন্দু | তবে তাঁর মতে হিন্দু – খ্রীষ্টান, মুসলমান.. এই মেরুকরণ ঠিক নয় | কৃষ্ণ যীশু হজরত একই ঈশ্বরের তিন নাম মাত্র| অতশত তত্ত্বকথা বুঝি না,দাদুর বিশ্বাস আমারো বিশ্বাস | তাই আমিই পৌষ, আমিই যীশু | দাদু বলেন, জন্মভূমি আর জন্মগত কৃষ্টির প্রতি দায়বদ্ধতাও আমাদের রয়েছে | দাদুর প্রভাবটা আমার কিশোর মনে প্রভাব যে ফেলবে, সেটা তো অস্বাভাবিক নয়| তাই আমি জন্মদিনে কেকের থেকে পায়েস কে অগ্রাধিকার দিয়েছি| সত্যি আজ কি এমন অন্যায় করেছে বুঝতে পারেনি সেই ছেলেটা , স্কুলের খাতায় যার নাম উজান মজুমদার |আমি এক ঐতিহ্যবাহী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্র | নাইন শেষ করে আসছে সেশনে টেনে উঠব |এই বছরের আমার জন্মদিন টা আমার কাছে
    নাইট – মেয়ার.. রাতের দুঃস্বপ্ন | আজই ছিল ঊনিশে ডিসেম্বর, আমার জন্মদিন |এখন বারোটা বাজতে পাঁচ | আমি কাঁদছি না |অদ্ভুত এক ঘোরের মধ্যে দিনটাকে ফিরে দেখছি |এই প্রথম আমার প্রিয় ঠাম্মির হাতে তৈরি ডিলিসিয়াস পায়েসটা রূপোর বাটিতে পড়ে রইলো অবহেলায় | রূপোর চামচটা বাটিটার কাঁধে হেলান দিয়ে কাঁদছিল বোধহয় | মায়ের হ্যাঁচকা টানে ঘরবন্দী আমার খাওয়া হয় নি পায়েসটা | তার আগে মা যাচ্ছে- তাইকরেছে দাদু- ঠাম্মিকে,.. তাঁরা নাকি মায়ের ছেলে কে মায়ের থেকে কেড়ে নিয়েছেন | টাইম বোম সেট করেছে মা, টিক, টিক করছে টাইম বোম.. “” “আমার ছেলের নরম মনে বিষবীজ ছড়াতে লজ্জা করছে না আপনাদের? বিষবৃক্ষ তৈরি করে আমাদের জীবন অন্ধকার করে লাভ কোথায়? আমার অফিসে থাকার সুযোগে পৌষকে বিগোড়াবার প্ল্যান সাকসেস ফুল হতে দেব না | আসুক আপনার ছেলে, আজ হেস্তনেস্ত করব |” মা শর্মিষ্ঠা সেদিন ছুতো করে সামান্য এক কারণ কে কেন্দ্র করে এমন এক পারিবারিক কলহের ফলশ্রুতির মুখোমুখি আমাকে আর বাবাকে দাঁড় করিয়েছিল যে, পরদিন সকালে আমরা আমাদের কলেজ স্ট্রীটের বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম কসবায়, আমার মামার বাড়িতে | কারণটা তুচ্ছ, আমি আমার ঠাম্মি কে বলেছিলাম, তার নিজের হাতে বানানো ইয়াম্মি পায়েসটা ভাতের পাতে খাব, আর আমার মায়ের হাতে বানানো মোটামুটি স্বাদের
    কেকটা বিকেলে খাব | লেজুড় জুড়ে ছিলাম, মায়ের বানানো কেকটা ভালো লাগে না খেতে জন্মদিনে| আমরা তো বাঙালি |ইংরেজি স্কুলের ইঙ্গ-বঙ্গ পরিমন্ডলের ব্যাকগ্রাউন্ড আমার থাকলেও বাবার বাবার মানে আমার দাদুর শিক্ষা ও প্রভাবে বাঙালিয়ানা আমার বড়ো পছন্দের জিনিস হয়ে উঠেছে | তাই ঐ মন্তব্য করা অন্যায় বলে মনে হয় নি | উপরন্তু বললাম তো, খোলাখুলি মায়ের বানানো কেক খেয়ে আমি বিশেষ আনন্দ পাই না | আমার ঠাম্মি অনেক ভালো কেক বানায় | এই তো কদিন বাদে ক্রীসমাস | ঠাম্মি কেক বানাবে | নিজের কোটা তো খাবই মজাসে, ঠাম্মির ভাগটাও শেয়ার করে খাব |যেটা সত্যি, সেটা স্বীকার করতে অন্যায় কোথায় বুঝিনি | অন্যায় হয়েছে সেটা, যেটা আমার মনে ছিল না,.. মা আমার জন্মদিন উপলক্ষ্যে অফিসে ক্যাজুয়েল লীভ নিয়েছে | মুহুর্তে রণরঙ্গিনী মা রণাঙ্গনে অবতীর্ণ | আমার জন্মদিনের তোফা পেয়েছি,.. সপাটে এক চড়|
    বলেছে মা, “পৌষ কে নিয়ে চলে যাব মায়ের কাছে |আমাদের জীবন অমানিশা করে খুব মজা পাবেন, বলে প্ল্যান আপনাদের| সেটি হতে দেব না | আপনাদের ছেলে এলে সব বলব তাকে |” এটা মা দ্বিতীয় বার বলল আজকে ঝগড়ার মুডে| আমি মনেমনে বলেছি, মা এটা তো তোমার আর দিয়ার অনেকদিনের প্ল্যান| কালও তুমি ফোনে দিয়াকে বলেছ, ধীরে রজনী, ধীরে| তোমার জামাইকে পটিয়ে ফেলেছি, ক্রিসমাসের আগে আমরা তোমার বাড়িতে উঠছি একদম পাকাপাকি ভাবে পৌষটা বাচ্চা, প্রথম প্রথম কষ্ট হবে, পরে ভুলে যাবে দাদু- ঠাম্মিকে|” মা, তুমি তখন জানতে, আমি তোমাদের বেডরুম সংলগ্ন বারান্দায় | আকাশে কালপুরুষ খুঁজছি, যা আমার নিত্যকালীন রাতের রোজনামচা |জানি না কেন, স্পীকারে দেয়া ছিলো তোমার ফোন |ফোনালাপ স্পষ্ট | তুমি দাদু-ঠাম্মির নামে বদনাম করছ, তোমাকে তারা দেখতে পারেনা, তোমার নাকি কোন স্বাধীনতা নেই | অনুমান করেছি, মা তুমি হয়তো আমাকে, দাদু ঠাম্মির এগেনস্টে কনভিন্সড করতে চেয়েছিলে| দাদু ঠাম্মির প্রতি আমার টানটান অন্তরের টান দিয়ার ক্ষেত্রে কনভার্ট করতে
    চেয়েছিলে |” তুমি এত বোকা কেন মা? তা আবার হয় নাকি গো কখনো ! ” দাদু-ঠাম্মির সাথে আমার যে সম্পর্ক, তোমার মায়ের সাথে সে সম্পর্ক আমার কোনদিন গড়ে উঠতে পারে না | দিয়ার কাছে মেয়ের মায়ের পরিচিতি পর্যন্ত এ্লাউড, পৌষের দিদিমা হিসাবে পরিচয়ে তার গ্ল্যামারাস ইমেজ ধাক্কা খাবে|চিত্র তারকা দিয়ার তার মেয়ের ছেলের ওপর টান হল কবে? একদিন তোমার সংগে দিয়ার বাড়ি গিয়েছিলাম| এক ভদ্রলোককে দিয়া আমার পরিচয় দিয়েছিল, ” প্রতিবেশীর ছেলে | রোজ এসে বলে তোমাকে কি সুন্দর দেখতে!” ভদ্রলোক বলেন, ” ঠিকই তো বলেছে, এই বয়েসেও আপনি কি সুন্দর |” আমার দিয়াকে ভ্যাম্পায়ার মনে হয়েছে | দিয়ার নাম শ্রাবনী চট্টোপাধ্যায় | এককালের পর্দা কাঁপানো নায়িকা আজো ফ্লাডলাইটের তলায় ক্যামেরার সামনে চুটিয়ে বয়স্কার রোলে অভিনয় করে যাচ্ছে | অবসর নেওয়ার কোন সিন নেই | দিয়া তোমাকে বকেছে, ” আর কত দেরি করবি? তমালের সাথে কোর্ট – শিপ চলা কালীন সময় থেকে বলছিস, এখানে থাকবি তোরা|এতদিনেও সেটা করে উঠতে পারলি না? আমার যে তোকে ছেড়ে থাকতে ইচ্ছে করে না |” মা, উত্তর দেয়,” শনৈ শনৈ এগোতে হবে না তো কি? আমি তোমার মতো তাড়াহুড়ো করতে পারিনা | করলেই তো সব ক্যাচাল হবে, তমাল বেঁকে বসবে | তমাল তার বাবা – মাকে প্রচন্ড ভালোবাসে| শ্রদ্ধা করে | টাইম অনেকটা লেগে গেল| কিন্তু আদতে তো আমরা জিতে যাচ্ছি |
    তুমি ক্রীসমাস পার্টির আয়োজন
    কর | জমিয়ে এনজয় করা যাবে| অফিসের পার্টিতে যেদিন ড্রিংক করি, সেদিন এখানে ঢোকা যায় না, নীতিবাগিশ দুই বুড়ো-বুড়ির জ্বালায় | এবার থেকে নো প্রবলেম | ” আমার বাবা তমাল মজুমদার সেদিন বাড়িতে আসার পর দুজনের ক্লোজড – ডোর মিটিং হয়েছে| আমার জন্মদিনের পরদিন বেলা বারোটা নাগাদ আমরা বাড়ি ছেড়েছি | দাদু গুমশুম | ঠাকুমার চোখে আঁচল চাপা| মুখে ফোঁপানি চাপা পড়ছে কি তাতে? না পড়েনি | আঁচল ছাপিয়ে বাইরে শোনা যাচ্ছে| একবার মুখের আঁচল সরিয়ে ঠাকুমা বলেছে দাদুকে, “ছেলে তো বৌমার, আমার বেশি নাক গলানো উচিত হয়নি |” বাবা আর আমি প্রনাম করতে দাদু – ঠাকুমার ঘরে এসেছি| দাদু বাবাকে বলেছে, “পদবী টা এফিডেবিট করে নিও | শ্বশুরবাড়ির পদবীটা তোমার বেশ গালভরা… চট্টোপাধ্যায় |” বাবা পালিয়ে বেঁচেছে| বাবার সম্পর্কে আমার জন্মেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া… করুণা, রাগ, অভিমান | করুণা এই কারণে কেন বাবা মায়ের মুখের ওপর বলতে পারলোনা, “তোমার মায়ের বাড়ি কোন দুঃখে উঠতে যাব নিজের ঠাঁই ছেড়ে? রাগ এই কারণে যে, কেন বাবা মায়ের মুখের ওপর বলতে পারলো না, বৃদ্ধ বয়সে বাবা- মায়ের হাত ছেড়ে দেব? কর্ত্তব্য পালন করব না? নিজের বৃদ্ধ বাবা – মাকে ছেড়ে দেওয়া যে পাপ|” অভিমান এই কারণে, বাবা একবার তার সাধোর পৌষের মনটা বুঝল না? বুঝল না, যীশু কি করে তার দাদু- ঠাম্মিকে ছেড়ে থাকবে? কোথায় গেল তার শিকড়ের টান? শৈশবের,কৈশোরের যৌবনের স্মৃতি মন্দির বাড়ি ছাড়তে বাবার কোন কষ্ট হলো না? আমার মনে হল, বাবা অমানবিকতার চরম পরাকাষ্টা | ‘চরম পরাকাষ্টা ‘ শব্দের অর্থ জানিনা | তবে যিনি এই শব্দটা ব্যবহার করলেন আজ বাবার সম্পর্কে, তিনি স্ল্যাং শব্দ ব্যবহার করেন না | তাই মনে মনে তার সঙ্গে গলা মিলিয়ে আমি আজ আমার বাবাকে বললাম ঐ একই কথা | আমার সহবৎ জানা চরিত্রের ব্যত্যয় হল কি? যদি হয়, ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আপনাদের সকলের কাছে | মা বুকড্ উবেরে আমায় কোলের কাছে টেনে নিয়ে বলল, ” দিয়া ক্রীসমাসের গ্রান্ড সেলিব্রেশনের ব্যবস্থা করেছে | দেখবি, কত সেলিব্রিটি আসবে | বিশাল খাবারের আয়োজন |ডিঙ্কসের ফোয়ারা ছুটবে| আমি থ্রিলড|” বাবা মার দিকে তাকিয়ে হাসছে| মায়ের না হয়, রক্ষণশীল মজুমদার বাড়ির চৌকাঠ পেরিয়ে মুখের আগল খুলে গেছে আনন্দের চোটে | যে মা দাদুর ভয়ে আমাকে কোনদিন মদের ‘ম ‘পর্যন্ত উচ্চারণ করতে পারে নি, সে আজ অবলীলায় মদের কথা বলছে আমাকে! কিন্তু বাবার রক্ত নিজের সংস্কৃতি ভুলে যে অন্য পথে হাঁটছে|আমার গা বমি করছে |মনে মনে বলেছি, ” ঐ জন্যে তো দাদু আমাকে ক্রিসমাসে দিয়ার বাড়ি আসতে দিত না |” দিয়ার বাড়িতে এই প্রথম ক্রিসমাস পার্টিতে জয়েন করব আমি | আমার ভালো লাগছে না | দাদু- ঠাম্মির সাথে ক্রীসমাসের সান্তাক্লজ খেলাটাতে আমি অভ্যস্ত | সান্তাক্লজ সেজে দাদু প্রথম আমার হাতে, তারপর -ঠাম্মির হাতে ক্রিসমাসের উপহার তুলে দিত | তারপর ইনভাইটেড বন্ধুদের হাতে | সুজাতা মাসী, মানদা মাসীও পেতো উপহার | “ওরা ঠিক কাজের লোক নয় দাদু ভাই, আমাদের পরিচর্যা কারী ” অনেক দিন ধরে কলেজস্ট্রীটের আমাদের বাড়িতে থাকা সুজাতা মাসী আর মানদা মাসী সম্পর্কে এই আমার দাদুর ফিলোজফি | উপহার গুলো আমি আর দাদু কিনে আনতাম নিউমার্কেট থেকে | মা- বাবা উপহার পেতো ক্রিসমাসের পরদিন সন্ধ্যা বেলায় | কারণ তারা আমার চিত্র তারকা দিয়ার ক্রিসমাস পার্টি সেরে পরদিন ভোরে ফিরত | দাদুকে এ্যাভয়েড করে তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে যেত, মুখে বাসী মদের গন্ধ নিয়ে | ঘুমোত কিছু না খেয়ে বিকেল অবধি | দামী সুরার হ্যাং-ওভার কাটলে তবে তো উপহার গ্রহণের ব্যবস্থা! মায়ের অবশ্য দাদুর কেনা ক্রীসমাসের উপহার কোনোবার পছন্দ হত না | সুতরাং থ্যাংকস বলার দায়বদ্ধতা তার ছিল না | বাবা বলত তার বাবাকে, “বাবা তুমি সেই আমার ছোটবেলার নেওয়া ক্রীসমাস পালনের ব্যবস্থা চালু রেখেছ, থ্যাঙ্কু বাবা|” দাদু খুশি হতো, মিটিমিটি হাসতো | আমি দাদুর কাছে আরো ঘেঁষে দাঁড়াতাম| দাদুর গায়ে সান্তাক্লজের গন্ধ পেতাম | দাদু গাইত, জিঙ্গল বেলস, জিঙ্গল বেলস.. জিঙ্গলস অল দ্য ওয়ে.. ” আমি গলা মেলাতাম | ছন্দ- ঘন্টার আওয়াজে বড়ো ভালো লাগতো |হোক না, ক্রিসমাসের পরদিন | আমাদের দুর্গাপুজো যে পাঁচদিন চলে | কলেজ স্ট্রিটের বাড়িতে আমাদের ক্রিসমাসও চলতো নিউইয়ার অবধি, ভালো খেয়ে দেয়ে | কেক, পায়েস আর পাটিসাপটা মাস্ট| ঠাম্মির বানানো | তখন কিন্তু কেক আর পায়েসের সহাবস্থানে আমার আপত্তি থাকত না | কারণ দাদু তার যীশু আর পৌষের জন্মদিন যে একসাথে সেলিব্রেট করছে |চুপিচুপি বলি, মায়ের থেকে ঠাম্মির কেক অনেক সুস্বাদু | এই দ্যাখ আমার এই কথা মনে আনা পাপ | এই নিয়েই তো দ্বন্দ্ব পুরাতন বনাম নতুন প্রজন্মের | আমিই হলাম নিমিত্তের ভাগী | কি জানি কেন আমার মনে হচ্ছে, এবারের ক্রিসমাসে আমার সান্তাক্লজ আসবে না | আমি আমার সান্তাক্লজের কাছে থাকতে পারব না |অভিমানের মেঘ দুচোখের তারায় | জোর করে তাড়াই তাদের | নইলে মায়ের তাড়নায় তিষ্টোনো দায় | উবের দিয়ার বাড়ির দরজায় | দরজা খুলে দিয়া সহাস্য মুখে আমাকে বলে” হ্যালো, ইয়ং ম্যান |” কেতাদুরস্ত কথা, মাপা হাসি, পরিমিত আচরণ | দিয়ার বরকে কোনদিন দেখিনি | বড়ো হচ্ছি তো, কানাঘুষোয় শুনি, চিত্রতারকা দিয়ার তথাকথিত বর কেউ নেই | এক চিত্রকরের সাথে কিছুদিন নাকি লীভ টুগেদার করেছিল | বয়েসের অতিরিক্ত পাকা আমি, বাবা প্রায়ই এ’ কথা বলেন, তাই ভেবেছি, বাবা অতদিন আগেও লীভ টুগেদার ছিল? নাহ, দিয়া দেখছি বিস্তর এ্যাডভান্সড মহিলা | নিজেকে চোখ রাঙাই.. “বিহেব প্রপারলি পৌষ |‌” দিয়ার নাম আজো সকলে জানে | দিয়াকে নাকি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নবীনরা “মাদার ইন্ডিয়া” বলে |ধুর, দিয়াকে নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি কেন? যে আমার দাদু- ঠাম্মির কোলছাড়া করেছে, তার সাথে নো লেনা-” দেনা | দিয়া দরজা খুলে সহাস্যবদনে বলেছে
    ” হ্যালো ইয়ং ম্যান ” উফ অসহ্য| মাপা কথা, মাপা ঠোঁট ফাঁক করে হাসি, পরিমিত আচরণ| কোথায় প্রাণের স্পন্দন | দিয়ার কথার জবাব না দিয়ে কি ভাবে দিয়ার ক্রিসমাস পার্টি বানচাল করা যায়, ভাবতে ভাবতে ভেতরে ঢুকি কসবার বাড়ির | ইশ কি রকম সিনেমা সিনেমা গন্ধ! আবার গা বমি করছে আমার | আচ্ছা কলেজ স্ট্রিটের বাড়ির লোকদুটো কি করছে? নিশ্চয়ই রান্নাঘরের রান্নার পাট বন্ধ?