সামনেই বড় দিন। খ্রিস্টমাস ডে। এই দিন গুলোতে প্রতিটি মানুষ প্রাণভরে ছুটি উপভোগ করে। কেউ পিকনিক, কেউ বেরিয়ে পড়ে ভ্রমনের নেষায়। আসুন আমরা জেনে নেবো এমন কিছু ভ্রমনের স্থান।
খুব ছোট ছোট সুন্দর এক একটা ঘটনা যখন স্বপ্নের মতো ভীড় করে আসে চোখের সামনে দেখি কী অপূর্ব হয়ে ফিরে আসে সেই পুরোনো ফেলে আসা দিন।এগুলো কি এই জন্মেই ভাবি বসে বসে!এই জীবনের শেষ বেলায় হীরের কুঁচির মতো সেই সময় গুলো মনে ভেসে আসে তার ছটা লাগে আমার বার্ধক্যের এই যাপিত অন্ধকারে ।
অনেক বছর প্রায় চল্লিশ বছর আগে আমাদের বাড়িতে জিয়োলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া র এক বন্ধু রূপকুন্ডের ছবি দেখিয়ে গিয়েছিলেন ।সে যে কী মায়াময় সৌন্দর্য আর ভয়ংকর।তুষারাবৃত কঙ্কাল চারিপাশে মাঝে নীল জলের কুন্ড। এরকম গা ছমছমে অথচ কী ভীষণ সুন্দর! ইচ্ছে হলো এখনই যেতে হবে।
ব্যাস শুরু হয়ে গেল তোড়জোড় ।প্রস্তুতি সব রকমের শারীরিক মানসিক ।যোগব্যায়াম বেড়ে গেলো।নাইক শ্যু
পড়ে হাঁটা বেড়ে গেল। জুন মাসেই পাড়ি।
এবার রূপকুন্ডের যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে গোয়ালদামে অভিজ্ঞ গাইড বীর সিং এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো।ও একটা নির্দিষ্ট দিনে পৌঁছে যাবার নির্দেশ দিল।শুধু আমরা দুজন মহিলা ছিলাম তাই সে আগেই বলে দিয়েছিল ‘পথ বহোৎ খতরনক’ আমাদের ডোন্ট কেয়ার ।তল্পিতল্পা বেঁধে জয় বাবা ত্রিশূল জয় নন্দা কোট জয় রূপকুন্ড
বলে পা বাড়িয়ে দিলাম গোয়ালদামের পথে।
বীর সিং এর সঙ্গে দেখা হোলো ।ওরা তৈরী ছিল চারজন
পোর্টার ও দুটি খচ্চর সহ আমরা সাতজন।আমরা দুজন জেনানা।
এ পথে এর আগে দু একবার মহিলা অভিযাত্রী গেছে ।আমার লেখা এই অভিযানের নয়।এই যাওয়ার পথে
এতো বিচিত্র অভিজ্ঞতা কষ্টের পথ কিভাবে সুন্দর হয়ে ওঠে চড়াই উতরাই পার হতে হতে সেই টুকরো টুকরো
কিছু সুধা কিছু অনির্বচনীয় আনন্দ তার ভাগ যেনসবাইকে দিতে পারলে আবার সেই জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া চল্লিশ টা বছর হয়তো ফিরে পাবো।
এই আমাদের চলা পথের দিকদর্শন ম্যাপ
শুরু টি বড়ো সুন্দর ।পাহাড়ি বসতি গাঁ ফসল ভর্তি ক্ষেতে ধাপে ধাপে চাষ আবাদ যেন পটে আঁকা ছবি । গ্রামের নাম দেবল। উচ্চতা 4715ft
লোহার জং পাস 7510ft উচ্চতা পার হয়ে সবুজে মোড়া ওয়ান গ্রামে পৌঁছে গেলাম সন্ধ্যে হওয়ার মুখে ।এখানের উচ্চতা 8032ft
রাত কাটানো ফরেস্ট রেস্ট হাউসে।শুরু খুব ভালো হোলো।রাত্রি বাস মনে রাখার মতো খাওয়া দাওয়া দুর্দান্ত
তারপর পাইন গাছের জঙ্গলেরবুক চিরে রাস্তা ।যাচ্ছি যাচ্ছি যাচ্ছি।হঠাৎ করে সবুজ কার্পেটে মোড়া বিশাল পাহাড় তার সমস্ত সৌন্দর্য নিয়ে আমাদের ডাকছে।প্রথম দেখার আনন্দে একদম ভাষাহারা হয়ে গেছি।এতো সুন্দর ও হয়।এই বৈদিনী বুগিয়াল উচ্চতা 11486ft ।প্যাগোডার মতো দুটি কাঠের ঘর।
।রেস্ট হাউস ।এখন থেকে চল্লিশ বছর আগে যা দেখেছি ।স্বপ্নের মতো স্বর্গের মতো।বিকেলে নরম আলো চারিদিক ঘুরে ঘুরে দেখছি সামনে ত্রিশূল তার মহিমা নিয়ে ধ্যানমগ্ন যেন।এক প্রান্তে ছোট্ট দেবালয়।পাথর দিয়ে সাজিয়ে সাজিয়ে ছোট্ট মন্দির।কুলিরা নিজেরাই বানিয়েছে।পাথর সাজিয়ে মূর্তি রূপে পূজো।পুরোহিত সবাই।বুনো ফুলের অর্ঘ্য দিয়ে আমরা সবাই পুজো দিলাম ।এরপর অদূরে জলে ভেজা ঘাস একটা ছলছল মৃদু আওয়াজ এগিয়ে দেখতে যাবো বীর সিং জোরে ধমক দিয়ে মাত যাও বলে চীৎকার করে উঠলো।ভয়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম ।দৌড়ে এসে আমার হাত ধরে উঠিয়ে নিয়ে এলো।ঘাসের ভেতর নিঃশব্দে জন্ম নিচ্ছে রাম গঙ্গা।এই তার উৎস মুখ।কি জানি কোন অতলে তলিয়ে যেতাম ।কোনও গর্জন নেই কোনও অহংকার নেই নীরবে একটি নদী জন্ম নিচ্ছে প্রকৃতির গর্ভ থেকে।এই বিস্ময় এখনও আমার চোখে ভাসে আর ছলছলিয়ে বয়ে যাওয়ার মোহময় সুর এখনও কানে বাজে।
সন্ধ্যা নেমে এলো।আমাদের গাইড একদম সাতটার মধ্যে ডিনার দিয়ে বললে আভি খানা খাও আর শো যাও।তার গলার স্বরে এমন গাম্ভীর্য আমরা বাধ্য ছাত্রীর মতো তাই করলাম ।শুয়ে শুয়ে এবার হাসির পালা।আমরা চারজন দলে কনিষ্ঠ ।আমি স্বপ্না মলয় আর তুতু।
আমি কাকিমা কিন্তু সমবয়সী ।সবথেকে ছোট তুতু।সবে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছে ।গাইডের গলা নকল করে মাত যাও বলে এমন চেঁচালো আমাদের পোর্টার মোহন সিং
কেয়া হুয়া সাব বলে দৌড়ে এসে হাজির ।আমরা কুছ নেহি কুছ নেহি বলে ভাগালাম।এবার বড়োরা ওদের কাকা জামাইবাবু আর আমাদের সবার বড়ো এক পাহাড় প্রেমিক দাদা এসে রীতিমতো ভাষন দিয়ে বললেন আমরা যেখানে যাবো সেটা খুবই দুর্গম পথ।তোমরা সিরিয়াস না হলে আমরা কিন্তু সাকসেসফুল হবো না।এইসব জ্ঞানের কথা শুনে আমরা চুপ করে যে যার স্লিপিং ব্যাগে ঢুকে পড়লাম।ওরা পাশের ঘরে চলে যেতেই
আমাদের হাসির কম্পিটিশন চললো। তারপর কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না ।সকালে আবার গাইডের ডাক জলদি তৈয়ার হো যাও।আধাঘন্টামে হামলোক বাহার হোগা।ওই ভোর বেলায় মোটা মোটা পরোটা আর এক গ্লাস গরম চা গলা দিয়ে নামেই না।তবু খেতে হবে।আমার গলার বিঁদ টা বোধ হয় ছোট সবার খাওয়া হয়ে গেল আমি চা দিয়ে দিয়ে গিলতে লাগলাম ।যাক বাবা ড্রেশ করে জুতো মোজা পড়ে মাথায় টুপি লাগিয়ে বৈদিনীকে টা টা করে দিলাম ।আর এ পথে ফিরবো না ফেরার পথ আলি বুগিয়াল দিয়ে।প্রাণ ভরে দেখে নিলাম শেষবার ।
এরপর পাথর নাচনী। উচ্চতা 12832ft
পুরো পথটা চড়াই উতরাই পার হতে হতে ক্লান্ত ।নাচানোর মতো ই রাস্তা ।কি খারাপ কি খারাপ ।আসল গল্প এখনও বাকি ।এই তো কলির সন্ধ্যে।আজ অনেকটা পথ যেতে হবে।বীর সিং আর তার দলবল দুদ্দাড় করে যাচ্ছে আর মাঝে মাঝে জোর সে চলিয়ে।জেনানা লোক বহোৎ 0 বাড়িয়া চল রহা হ্যায় ।তুতু বলছে কাকিমা তেল মারছে কেমন দ্যাখো ।ওরে ওতে কিছু হবে না রাস্তার হাল দেখেছিস ।কেন এতো উদয় শংকর সরনী ।আবার আমাদের হা হা হাসির রোল ।ওমনি ঠিক সে চল না উপদেশ ভেসে এলো।আরে হাস না মানা হ্যায় কেয়া।আমি বলি ওরে ওরা রামগরুঢ়ের ছানা।আমাদের সাথে সাথে এক পোর্টার যাচ্ছে সে তো বুঝছে ঘোড়ার ডিম
কিন্তু ঠিক তাল দিয়ে হেসে যাচ্ছে ।শেষকালে অবশ্য ও আমাদের ভীষন প্রিয় হয়ে গিয়েছিল ।
পোর্টার মোহন সিং সবসময়ই মুখে হাসি ।আমরা বারবার জিজ্ঞেস করি পুরা পথ এইসা ই হ্যায় ও একমুখ হেসে বলে জী বহিনজি। ওরে আমরা এটা শুনতে চাইছি না সে কি বুঝলে কে জানে জী বহিন জি।হাসব না কাঁদব ভেবে পাচ্ছি না। অনেক চড়াই পার হয়ে পাথর নাচনীর টপ। গনেশ মূর্তি কোলে নিয়ে ছবি তোলা হোলো । ভারি পাথরের গণেশের মূর্তি ঈশ্বরের কী লীলা একটুও ভারি লাগলো না।কৈলু বিনায়ক।উচ্চতা 14188ft
মধ্য দুপুরে হাওয়া খুব জোরে বইছে।একটু জলপানের পর বীর সিং বললো সামালকে চলিয়ে।আগে আউর চড়াই হ্যায়। আর এখন ভেবে লাভ নেই।বগুয়াবাসায় হল্ট।চলো বগুয়াবাসা।খুবই ক্লান্ত শ্রান্ত লাগছে কিন্তু থামা চলবে না।বিশাল ন্যাড়া ন্যাড়া পাহাড় পেরিয়ে চলছি।রুক্ষ শুকনো ভয় ভয় পাহাড় ।এরই একটি গুহায় আমরা রাত্রি বাস করবো।অবশেষে গুহার কাছে এসে গেলাম। কুলিরা আমাদের জন্য একটু চায়ের তোড়জোড় করছে।প্রচন্ড হাওয়া ঠান্ডা যেন সব ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে ।সন্ধ্যে হয়ে গেল।কী ভীষণ স্তব্ধতা ।বীর সিং আমাদের গুহার মধ্যে ঢুকে যেতে বললো এখানের উচ্চতা 14038ft ।হায় ভগবান ছোট্ট গুহা কোনও রকমে হাঁটু মুড়ে বসা যাবে।এখানেই আমরা সাতজনে থাকবো।তাই সই।এখন তো পা টা একটু বিশ্রাম নিক।ওরা বাইরে টেন্ট খাটিয়ে আমাদের রাতের খানা তৈরী করছে আমরা বসে বসে ভাবছি সারারাত এভাবেই কাটাতে হবে।এই কষ্ট তো করতেই হবে এর পরেই তো রূপ কুন্ড । একটু স্যুপ আর স্নাক্স ছাড়া ওরা কিছুই বানাতে পারে নি।তাই খেয়ে টুকটাক কথা বলতে বলতে সবাই চোখ বোজার চেষ্টা করছি।তুতু বললো কাকিমা কি দারুণ থ্রিলিং বলো।আমি অনেক কষ্টে বললাম হ্যাঁ রে দারুণ ।স্লিপিং ব্যাগ এর নীচে এবড়োখেবড়ো পাথরের মালুম সত্যিই থ্রিলিং। তারপর কখন ঐ কষ্ট সয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না ।ভোরের অস্পষ্ট আলো আসছে হঠাৎ ই স্বপ্নের মতো ভেসে এলো উদাত্ত গলায় তুতু র গান মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল মাঝে।আমরা ধড়মড় করে বাইরে বেরিয়ে এলাম ।সে যে কী দেখলাম সামনে স্তরে স্তরে তুষারশুভ্র আকাশ ছোঁয়া পাহাড় শিখর।সূর্য ওঠার আগে লাল রঙ লেগে সোনার মতো ঝকঝক করছে।মনে হলো আর কিছু নাই দেখি এ যা দেখলাম জীবন ধন্য ।তুতু গাইছে আমি মানব একাকী ভ্রমে বিস্ময়ে ভ্রমে বিস্ময়ে ।সব কষ্ট কোথায় চলে গেল ।জীবনের সব পাওয়া এখানে ই পেয়ে গেলাম ।ঈশ্বর আমাদের চোখের সামনে এসে যেন দাঁড়িয়ে বললেন আমাকে উপলব্ধি কর।
বীর সিং তাড়া দিচ্ছে।জলদি তৈয়ার হো বহোৎ আগে চল না হ্যায়।মনে মনে বলি সত্যিই তো আরও দেখা আছে কতো বাকী ।
আবার হাঁটা।এবারে একটু গাছ গাছালি শান্ত সবুজ সুন্দর রাস্তা ।বীর সিং কে জিজ্ঞেস করি রাস্তা য়্যায়সাই হোগা? কিচ্ছু বলে না শুধু একটু হাসে।ওই গুরুগম্ভীর লোকের হাসি দেখে সন্দেহ হোলো ।কিছু গড়বড় আছে।ঠিক তাই একটু পরেই চড়াই শুরু হোল আবার ।সে যাক গে এমন যে হবে আমরা ধরেই নিয়েছিলাম ।অনেক চড়াই পেরিয়ে সামনে যেন সিংহদরজা র মতো একটা ফাঁক দিয়ে দেখতে পেলাম বরফের দেয়াল ঘেরা বিশাল একখানি গোল প্রান্তর । উচ্চতা 15613ft.চারদিকে স্তূপীকৃত বরফ আর মাঝে নীল জলের কুন্ড।সে যে কী অপূর্ব আমি ভাষা দিয়ে বোঝাতে পারবো না।কল্পনা ও করতে পারবো না ।না দেখলে এই সৌন্দর্য বর্ণনা করে বোঝাই সে সাধ্য আমার নেই।এই সৃষ্টি স্বয়ং ঈশ্বর ছাড়া কারোর ক্ষমতা নেই।আনন্দের আতিশয্যে নাচা গানা হৈ হৈ চলো অনেকক্ষণ ।আমরা এসে গেছি একদম কুন্ডর ধারে।কী আনন্দ কী আনন্দ ।
এরপর গাঁইতি দিয়ে বরফ কেটে টলটলে নীল জল গাইড আমাদের মাথায় ছিটিয়ে দিল।আমরা পূর্ণ হলাম ধন্য হলাম ।
এরপর বরফ খুঁড়ে একটি একটি শরীরের বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কঙ্কালের হাড় দেখাতে লাগলো ।দুটি গল্প চলিত আছে এক রাজবাড়ির পুজো উপলক্ষে এখানে আসা আর তুষারের ঝড়ে সমাধিস্থ এই কঙ্কাল গুলি ।আর একটি মতে শ্রাবনী মেলা উপলক্ষে প্রচুর তীর্থযাত্রীদের সমাগম।তুষার ঝড়ে নিহত ।তবে D N A টেস্ট করে একই পরিবারের সবাই সনাক্ত করা হয়েছে ।যাই ই হোক একটা ভীষণ ধ্বংস লীলা এখানে ঘটে গেছে।এই কঙ্কাল গুলি এখনও সেই নির্মমতার সাক্ষী বহন করে চলেছে।
আমার বলা শেষের পথে।একটি নারীর কোমরের অংশ আমার হাতে গাইড ধরিয়ে দিয়ে বললো ফটো খিঁচো বহিন ।আমি তখন নূপুরের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি যেন।হয়তো কোনও নর্তকী অথবা রাজবাড়ির কোনও রাজকন্যার কিম্বা কোনও গ্রামের সুন্দরী পাহাড়ি তরুণীর।স্বপ্ন ভেসে গেল ।আভি যা না হোগা।বহোৎ রাস্তা চলনে পড়েগা ।তুরন্ত করো ফটাফট চলো।
ফেরার পথে একটি মজার ঘটনা যা চিরকাল মনে থাকবে। চারদিন চড়াই পেরিয়ে ফেরার পথটি যেন ফুরোতেই চায় না।এবারে সমতলে যাবার জন্য মনটা
অস্থির হচ্ছে ।তবু হাঁটতে হবে অনেক পাহাড় এখনও বাকি । হঠাৎ হাঁটতে হাঁটতে দেখি একদল মুনিয়াল পাখি
রাস্তার ওপর দিয়ে যাচ্ছে ।পোর্টাররা পাথর ছুঁড়ে চারটে
ঘায়েল করে বললো আজ ক্যাম্প ফায়ার মে বনে গা।
দুদ্দাড় করে এগিয়ে গেল ওরা সবাই ।মোহন সিং রইলো আমাদের দেখভাল করে নিয়ে যাওয়ার জন্য ।একটা
চড়াই সম্ভবত শেষ চড়াই যেন আর ফুরুচ্ছে না।একই
পাহাড় আর অপর পারের এক দৃশ্য সেই পাহাড় যেন
আর সরছে না।মোহন সিং কে যতবারই জিজ্ঞেস করি
আউর কেত্ না বাকি ও বলে আউর থোড়াই হ্যায় বহিন জী। এতবার জিজ্ঞেস করছি ওর সেই এক কথা।কিছুটা
আসার পর স্বপ্না বললো আর এক বার জিজ্ঞেস করি
আমি বললাম আউর থোড়াই হ্যায় বহিন জী।বলে দুজনে
হা হা করে হাসতে থাকি।
ভাবছি কখন সেই বাংলো দেখতে পাবো আর খিচুড়ি খেতে হবে না মাংসের ঝোলআরভাত আহা কতো দিন
পর একটু ভালো খাবো।অতো সুন্দর পাখি গুলো কিন্তু
একটুও দুঃখ হচ্ছে না ।হঠাৎ করে চড়াই শেষ আমাদের
বাংলো দেখতে পাচ্ছি ।কি আনন্দ কি আনন্দ ।রিল্যাক্সড
মুডের চা টা খেয়ে একটু গল্প গুজব করতেই বীর সিং
খাবার রেডি করে ডাকতে এলো।আর আমাদের
দলনেতা অশোকদাকে ফিসফিস করে কি বললো।
আমাদের একটু গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করলেন তোমরা নাকি মোহন সিংকে নিয়ে হাসাহাসি করেছো ওর রাগ হয়ে গেছে ও খাবে না বলছে।আমরা আকাশ থেকে
পড়লাম ।ওকে দেখে হাসবো কেন এবার যা হয়েছে
বললাম ।তবু একটু ধমক দিয়ে বললেন এতো হাস
কেন অকারণে।তারপর মোহন সিংকে সব বুঝিয়ে বললেন বহিন জী লোক য়্যায়সাই হাসতা হ্যায়। যাই হোক তার রাগ কমলো।মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে বললো মাফ কর্ না বহিন জি।আমরা সুন্দর গালগাপ্পা মোহন সিং এর গাল টিপে আদর করে দিলাম ।
এ জীবনের মতো যা দেখার ইচ্ছে ছিল হয়ে গেল শেষ এবার আলি বুগিয়ালে র রাস্তা ।ক্যাম্প ফায়ার হোলো
। বাঁধভাঙা আনন্দের নাচা গানা আর খানা উল্লাসে
সবাই মিলে সারারাত কি আনন্দ যে করেছি।তার আনন্দের জোয়ারে আমাদের তারুণ্যের উচ্ছ্বাস পাহাড়ের নিস্তব্ধতা ভেঙে দিল। সব শেষে আমাদের সব থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ অশোক দা গান ধরলেন ও ভুগলু কা বিটিয়া তু খাইলি কচৌরী আমারে দিলি ডালপুরী— আর কান্না ।আমরা হাসতে হাসতে পাগল হওয়ার উপক্রম ।একটু বেশী পান করে ফেলেছিলেন যে।এই দিনগুলো কি ভোলা যায় ?
ফেরার পথে পা বাড়ালাম যখন তখন সকালের স্নিগ্ধ আলো
আমাদের চোখেমুখে নরম স্পর্শে যেন বললো যাত্রা শুভ হোক।
আমি তথ্য সমৃদ্ধ ভ্রম ন কাহিনী লিখতে চাই নি তাই শুধু ভালোলাগার জায়গাগুলো বলেছি ।এ আমার হৃদয়ের কথা আমার উপলব্ধির কথা পাহাড় কে ভালোবাসার কথা।