নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা,২৮ডিসেম্বর: আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে পদ থেকে ইস্তফা শাসকদলের পঞ্চায়েত সদস্যের। ইস্তফা দিয়েই বিস্ফোরক অভিযোগ দলের বিরুদ্ধে। এমন দুর্নীতি হয়েছে ইস্তফা দেওয়ার লাইন পড়ে যাবে খোঁচা বিজেপির। বিজেপির চক্রান্ত পাল্টা তৃণমূল। পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা। আবাস যোজনার তালিকা প্রকাশ হতেই দুর্নীতির অভিযোগে বারবার ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকায়। দুর্নীতি এবং স্বজন-পোষণের অভিযোগ তুলছে বঞ্চিত এলাকাবাসী এবং বিরোধীরা। কাঠগড়ায় শাসকদল। সেই আবহতেই তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়ে মানুষের বিক্ষোভের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে পদত্যাগ করলেন হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের বড়োই গ্রাম পঞ্চায়েতের চয়নপুর বুথের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য টিংকর মহালদার। গত ২৫ তারিখ আবাস যোজনার তালিকায় দুর্নীতির অভিযোগে টিঙ্কর মহলদারকে ঘিরে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায় এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগ ছিল টাকার বিনিময়ে সমীক্ষা হয়েছে। ১৫-২০ হাজার টাকা কাটমানি নিয়ে ঘর দেওয়া হয়েছে। যাদের প্রকৃত ঘরের প্রয়োজন তাদের কারোর নাম তালিকায় নেই।কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল ওই বুথে সমীক্ষার দায়িত্বে থাকা পঞ্চায়েতের গ্রাম সম্পদ কর্মী মুক্তার আলমের বিরুদ্ধে। যিনি সক্রিয় ভাবে শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত এবং এলাকায় তৃণমূল নেতা হিসেবে পরিচিত। সূত্রের খবর ওই এলাকায় স্থানীয় কয়েকজন তৃণমূল নেতা কোণঠাসা করে রেখেছিল টিংকর মহলদারকে। দুর্নীতি তারাই করেছিল। কিন্তু পদে থাকায় মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় টিংকর মহালদারকে। বুধবার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক অফিসে গিয়ে ইস্তফা দেন তিনি। ইস্তফা দিয়েই সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে দলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন।তৃণমূলের চারিদিকে শুধু দুর্নীতি আর কাটমানি তাই মানুষ বিক্ষোভ দেখাচ্ছে এমনটাই দাবি করেন তিনি। তিনি জন-প্রতিনিধি হওয়াই তাকে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাই চাপে পড়ে তিনি ইস্তফা দিলেন। তিনি জানান সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকায় তাকে গালিগালাজ এবং ধাক্কাধাক্কি করছে। যদিও পদ থেকে ইস্তফা দিলেও এখনই দল ছাড়ছেন না তিনি। এদিকে এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানোতোর। মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রেখেছে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যরা। এরপর পদত্যাগ করার লাইন পড়ে যাবে। দুর্নীতি প্রসঙ্গে তৃণমূলকে খোঁচা বিজেপির। এটা বিজেপির চক্রান্ত। পাল্টা তৃণমূল। পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক তরজা।
পঞ্চায়েত সদস্য টিঙ্কর মহালদার বলেন, দুর্নীতি হয়েছে তাই মানুষের বিক্ষোভের মুখে আমাকে পড়তে হচ্ছে। এলাকায় গেলে মানুষ গালিগালাজ ধাক্কাধাক্কি করছে। কিন্তু আবাস যোজনার তালিকায় আমার কোন ভূমিকা নেই। তাই আমি পদত্যাগ করলাম। তবে দলে থাকবো।
উত্তর মালদা জেলা বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক রূপেশ আগরওয়াল বলেন, মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রেখেছে তৃণমূল নেতারা। এদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের তদন্তের ফলে যাদের পাকা বাড়ি আছে তাদের নাম বাদ যাচ্ছে। দুর্নীতি দেখে দেখে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে গেছে। এখন পদত্যাগ করা ছাড়া তাদের কাছে কোন উপায় নেই। পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল প্রার্থী পাবে না।
হরিশ্চন্দ্রপুর ১(বি)ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মানিক দাস বলেন, সমগ্র ঘটনাটা আমি জানি না খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। তবে এসব বিজেপির চক্রান্ত। কেন্দ্রীয় সরকার আট বছরে মানুষের জন্য কিছু করেনি। বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের দুর্নীতি ভাইরাল হচ্ছে। ওদের মুখে বড় বড় কথা মানায় না। আমাদের ব্লকে বিজেপি শূন্য হবে।
এক দিকে উন্নয়নকে হাতিয়ার করে পঞ্চায়েতে ভোট বৈতরণী পার করতে চাইছে তৃণমূল। অপরদিকে বারবার দেখা যাচ্ছে সরকারি প্রকল্পে লাগাম ছাড়া দুর্নীতি। চারিদিকে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। তার মাঝে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যের পদত্যাগ দুর্নীতিকে সিলমোহর দিয়ে দিল। এর ফলে আরো অস্বস্তি বাড়বে শাসকদলের। এমনটাই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।