উঃ দিনাজপুর, রাধারানী হালদারঃ- হাইটেক যুগেও পৌষ পার্বণের পিঠে-পুলি তৈরিতে আজও অনবদ্য ঢেঁকি
কথায় আছে ’ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভাঙে’। সেই সব এখন গল্পকথা এখন একপ্রকার ইতিহাস। যন্ত্র ও প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে চলায় ঢেঁকির কদর ইদানিং কালে কালে কমে গিয়েছে। তবুও এই রাজ্যের গ্রাম বাংলার কিছু মানুষ এখনও আগলে রেখেছেন সাবেকি ঢেঁকিকে। আর তাই পৌষ সংক্রান্তির আগে পিঠে-পুলির চাল কোটার জন্য রাজ্যের গ্রাম বাংলায় বাড়ে ঢেঁকির কদর। যেমনটা এখন দেখা যাচ্ছে রাজ্যের উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকের তরঙ্গপুরের দাস পাড়াতে।এক দিন বাদেই পৌষ সংক্রান্তি। তাই পৌষ পার্বণের দোরগোড়ায় এই গ্রামের মহিলারা এখন সদাব্যস্ত ঢেঁকিতে চাল কোটার কাজে। সেই কারণে গ্রামের বাড়ি বাড়ি কান পাতলেই শুধু ভেসে আসছে ঢেঁকিতে চাল কোটার শব্দ। এক সময় পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে গ্রাম বাংলার মহিলারা ঘরে ঘরে ঢেঁকিতে চাল কোটা শুরু করে দিতেন। ঢেঁকিতে ভাঙা চাল গুঁড়িয়ে তা দিয়েই তাঁরা তৈরি করতেন হরেক রকমের পিঠে-পুলি। কিন্তু যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধির ধাক্কায় ঢেঁকি এখন যেন মিউজিয়ামে জায়গা করে নিতে চলেছে। ঢেঁকি ছেড়ে গ্রাম বাংলার বহু মানুষ পৌঁছে যাচ্ছেন মিলে। তবে তারই মধ্যে কিছু কিছু গ্রামের মানুষ এখন ’ট্র্যাডিশন’ বজায় রেখে বাড়ির সাবেকি ঢেঁকিকে আগলে রেখেছেন। যেমনটা আগলে রেখেছেন কালিয়াগঞ্জ এর তরঙ্গ পুর গ্রামের মানুষজন। তাঁরা যান না গম ভাঙানোর যন্ত্রে পিঠে-পুলির চালের গুঁড়ো তৈরি করতে।গ্রামের প্রবীণ এক গৃহবধূ জানান, ঢেঁকিতে ছাঁটা চালের গুঁড়ি দিয়ে বানানো পিঠে-পুলির স্বাদটাই আলাদা। আর ঢেঁকিতে ছাঁটা চাল অনেকদিন ধরে রেখেও দেওয়া যায়। গ্রামে কয়েকটি মাত্রই ঢেঁকি রয়েছে। পৌষ পার্বণের আগে সেই ঢেঁকিতে চাল ভাঙাতে আসেন গ্রামের অনেক মহিলা। পৌষে ঢেঁকিতে চাল ভাঙানোর কাজে পুরুষরাও মহিলাদের সঙ্গে হাত লাগান।গ্রামে গিয়ে দেখা যায় গ্রামের এক প্রান্তে মাটির দাওয়ায় বসে ঢেঁকিতে চাল গুঁড়ানোর কাজ করে চলেছেন মহিলা ও পুরুষরা। তা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট, কাঠের তৈরি ঢেঁকি গ্রাম বাংলা থেকে এখনও একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। তাই গ্রামের রাস্তার পাশে একটি খামারে কাঠের ঢেঁকিতে চাল ঢেলে অন্যপ্রান্তে ঢেঁকিতে পা দিয়ে চলছে চাল গুঁড়ো তৈরির কাজ। এই দৃশ্যই আরও একবার মনে করিয়ে দিল গ্রাম বাংলায় ঢেঁকির মাহাত্ম্যকে।