হুগলী, সব খবর ডেস্ক:- ভারতবর্ষে তক্ষশিলা যুগ থেকে আজকের হালফ্যাশন অনলাইন পিফিএফ-এ লেখকদের সৃষ্টি পরিচয় নিবন্ধন… পুরোটা পথ জুড়েই বইয়ের প্রতি, জ্ঞানের প্রতি মানুষের অদম্য উচ্ছ্বাস… যার পরিমার্জনায় শীতের আরাম-আদুরে উৎসবমুখর বাঙালীর চতুর্দশতম পার্বণ হিসেবে বইমেলার অলিখিত স্বীকৃতি…!
শীতকাল মানেই হাজার উৎসবের মাঝে জায়গা করে নেওয়া বই উৎসব বা বই পার্বণ…. কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা কিংবা বাংলাদেশের একুশে বইমেলার মতন বৃহৎ পরিসরের পাশাপাশি জেলায় জেলায় ছোট শহর কিংবা গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এরকম অজস্র ক্ষুদ্র স্থানীয় বইমেলা ও লিটল ম্যাগাজিন মেলা…..তারই ধারাবাহিকতায় শহর কলকাতা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরবর্তী হুগলি জেলার একটি বর্ধিঞ্চু গ্রাম বৈঁচিগ্রামের আঞ্চলিক গ্রন্থমেলা- ‘বৈঁচিগ্রাম বইমেলা’…!
গত ৫ই জানুয়ারি থেকে ১২ই জানুয়ারি পর্যন্ত বৈঁচিগ্রামবাসিরা এবার তাদের ১৫ তম মেলা আয়োজন করে বৈঁচিগ্রাম অগ্রগামী সংস্থার অসাধারণ পরিচালনায়…!
‘গ্রাম থেকে জেগে ওঠে প্রাণ’ থিমকে সামনে রেখে এই বইমেলায় প্রায় ত্রিশটি বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থার অংশগ্রহণে বৈঁচিগ্রাম বইমেলা হয়ে উঠেছিলো বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতির এক চমৎকার মেলবন্ধন…! শীত উৎসবের ভীড়ে মেলার মাঠ প্রাঙ্গণে স্থানীয় শিশু থেকে প্রবীণ, সকল আপামর মানুষের উৎসবমুখর পদচারণায় মেলা মঞ্চের আলো ছড়িয়ে পড়ে বইমেলার প্রতিটি কোনে….! গুগল মাষ্টার মশাইয়ের এই যুগেও নতুন বইয়ের গন্ধ নিতে মেলা প্রাঙ্গণে বই প্রেমীদের ভীড় ভীষণ আশা জাগানিয়া সুখ এনে দেয়…!
সাত দিন ব্যাপি এই পুস্তক মেলার উদ্ভোদন করেন বিশিষ্ট কবি মৃদুল দাশগুপ্ত মহাশয়..উপস্থিত ছিলেন কবি তনুশ্রী রায় মহাশয়া…! মেলা উপলক্ষে ভিন্ন-ভিন্ন দিন নানান সাংস্কৃতিক আয়োজনের মাঝে বিশেষ সাহিত্যিকগনের উপস্থিতিতে মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ সাহিত্য আলোচনা…! সেখানে উপস্থিত হয়ে গ্রামীণ জনপদে সাহিত্য নিয়ে মুল্যবান আলোকপাত বর্ষীয়ান কবি গীতিকার অরুণ চক্রবর্তী মহাশয়, সাহিত্যিক রজত পুরোকায়স্থ মহাশয় ও কবি সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক সাংবাদিক সৌগত রাণা কবিয়াল মহাশয়…! তাদের পাশাপাশি মেলা মঞ্চে সংবর্ধিত হোন স্থানীয় সাহিত্যিক ঘরের মেয়ে মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়…!
মনোজ্ঞ সঙ্গীত সন্ধ্যায় মেলা মঞ্চে নিজেদের অপূর্ব সুর মূর্ছনায় আগত বই প্রেমিদের মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ করেন জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী লোপামূদ্রা মিত্র, রূপঙ্কর বাগচি এবং সুরজিৎ ও বন্ধুরা…!
মেলায় মঞ্চস্থ হয় নাটক ইচ্ছামৃত্যু… অনুপম বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনায়, রাহুল গোস্বামীর নির্দেশনায় চমৎকার এই নাটকটিতে অভিনয় করেন, জগবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায়, পাপিয়া মুখোপাধ্যায়, প্রজিৎ চ্যাটার্জি, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও
অর্নব ঘোষ প্রমুখ…!
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পৃষ্ঠপোষকতায় বিহারী লাল মুখার্জীর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বি-এল মুখার্জি বিদ্যালয়ের মাঠ প্রাঙ্গণে
বৈঁচিগ্রাম বইমেলার উদ্ভোদনী দিনে উপস্থিত ছিলেন মাননীয়া বিধায়িকা ডক্টর রত্না দে নাগ মহাশয়া, পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চম্পা হাজরা মহাশয়া, পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির কর্মদক্ষরা ও জেলা পরিষদের সদস্য ও সদস্যরা, বাটিকা বৈচি অঞ্চলের প্রধান ও উপপ্রধান ও সমাজসেবী আব্দুল মান্নান মহাশয়, অঞ্চলের সব সদস্য সদস্যরা ও আরো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এবং বইমেলার সম্পাদক সঞ্জিত ব্যানার্জি মহাশয়…!
৯৬০ সালের পরবর্তী সময়ে প্রাচীণ চিনা-দের বইয়ের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে ‘শানবিন’ এর প্রচলন… পৃথিবীতে বই সংগ্রহের প্রাচীণতম এই উদাহরণের পাশাপাশি সক্রেটিস সময়েও জ্ঞান অর্জনে বই কেনা বেচার কথা উল্লেখ পাওয়া যায়…! তবে প্রচলিত ইতিহাস অনুযায়ী খ্রিষ্টীয় পনেরো শতকে জোহানস গুটেনবার্গ মুদ্রণযন্ত্র বা ছাপাখানা আবিষ্কার করার পর থেকে জার্মানিতে লিপজিগ মতান্তরে ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে ছাপা বইমেলার প্রারম্ভিক সূচনা থেকে পরবর্তীতে ১৭ শতকের পর ইউরোপসহ বিশ্বের আরও কিছু দেশে বইমেলা বা গ্রন্থমেলা মানুষের শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের অন্যতম উৎসব হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে…!
গাছের বল্কলে, গুহায়, পাথরের গায়ে নানান আঁকাবুকির মাধ্যমে তাদের নিজস্ব ও অবস্থানগত বিবরণ তুলে ধরার যে চর্চা শুরু হয়েছিলো..আজকের বইমেলা যেন তারই অত্যাধুনিক বিবর্তন…!
প্রায় চার হাজার বছর আগে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় ( বর্তমান ইরাক ও সিরিয়া ) ‘গিলগামেশ’ পৃথিবীর প্রথম উপন্যাস থেকে আজকের বৈঁচিগ্রাম বইমেলার মতন আঞ্চলিক বইমেলাগুলোতে বাবা মায়ের হাত ধরে আসা ছোট শিশু সাহিত্যিকদের ভাবনার চিত্রপটে লেখা শিশুতোষ গল্পের বইয়ের সচিত্র মলাট…..
এ যেন এক পূর্ণ পৃথিবীর সভ্যতার কথা বলে যায়…!
সভ্যতার যাদুর ঝুলি যতই জীবনকে দুর্দান্ত বেগ এনে দিক না কেন, মানুষের মনের কথাগুলোর কল্প চিত্রের আবেগ হয়ে বইমেলা সবসময় থাকবে সময়ের বর্তমান চাকায়…!
বই কিনুন..বই পড়ুন..বই উপহার দিন প্রিয়জনকে…!
ধন্যবাদ…
সৌগত রাণা কবিয়াল—
— কবি সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক