পূর্ব মেদিনীপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা:- বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা শৈশব থেকে মোবাইলে আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। সেই জায়গা থেকে বই পড়ার আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে মহিষাদল বইমেলা সমিতি উদ্যোগে সপ্তম মহিষাদল বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি। ১৬ ই ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীবারে বইমেলার শুভ উদ্বোধন। মহিষাদল রাজবাড়ির ছোলাবাড়ি প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহ কারে মহিষাদল বাজার পরিক্রমা করে বইমেলার শুভ উদ্বোধন ঘটবে। মহিষাদলের শিক্ষা ও সংস্কৃতির ধারাকে বেগবত করতে, অবক্ষয়ী ছাত্রসমাজকে সারস্বতচর্চায় ফিরিয়ে আনতে এখানকার বিদ্বজ্জনেরা যে বই মেলা প্রচলন করেন তা এবার সপ্তম বছরে পদার্পণ করল। গত দুবছর সারা পৃথিবী মারণ গ্রাসের কবলে পড়ায় বইমেলার ধারাবাহিকতা বাধাপ্রাপ্ত হয়। দুবছর গর্বের বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। মহিষাদল বইমেলাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে সঞ্চারিত হচ্ছে বই-এর প্রতি অনুরাগ জ্ঞানের আলোকে আপন চিত্তকে প্রতিভাসিত করার এক অনিশেষ আকুতি ও আবেগ। এই আবেগ ও আকৃতির মধ্যে রয়েছে মানব জীবনে সার্থকতা লাভের প্রকৃত বাসনা। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে যে পূর্ণতা ও ঐশীগুণ আছে তার বিকাশসাধনই তার জীবনের ধর্ম। সেই বিকাশসাধনে বই পড়ার ভূমিকা অসীম। মহিষাদল বইমেলা সমিতি চায় প্রত্যেকটি ছাত্র বা ছাত্রী তার একটি মাত্র জীবনের মহত্বকে উপলব্ধি করে সারস্বতচর্চার মাধ্যমে জীবনের পূর্ণতা লাভ করুক, মানুষ হওয়ার এতে দীক্ষা নিক। বই মেলায় আচার্য ও অভিভাবকদের প্রাণিত করুক তাদের প্রাণপ্রিয় ছাত্রছাত্রী ও সন্তানদের কাছে একটি আলোকবর্তিকা তুলে ধরুক। আসলে বই বিমুখতার বিরুদ্ধে এটি একটি আন্দোলন। এই বিশ্বাস নিয়ে পথচলা। এমন টাই বইমেলা কমিটির সভাপতি তথা প্রাক্তন অধ্যাপক হরিপদ মাইতি বুধবার ১৫ ই ফেব্রুয়ারি এক সাংবাদিক বৈঠক করে এমন টাই জানান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংস্থা সম্পাদক দেবাশীষ মাইতি, কোষাধ্যক্ষ রমেশ সাঁতার সহ অন্যান্যরা। সংস্থার সভাপতি হরিপদ মাইতি আরও জানান, গত দু বছরে শিশুদের বই পড়ায় মনযোগ অনেক টাই কমেছে। তাদের বই পড়ার আগ্রহ বাড়ানোর লক্ষ্যে বইমেলার মূল গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে শিশুদের বই পড়ার বিষয়ে। এজন্য বিস্তৃত ভাবে শিশু মহলের পরিকল্পনা করা হয়েছে। নারায়ণ দেবনাথ প্রয়াত হওয়ায়, তাঁর সাহিত্যের প্রতি শিশুদের বেশি করে মনযোগী করার চেষ্টা হয়েছে। সেই গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে অন্যান্য শিশু সাহিত্যিক যেমন, উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরি, সুকুমার রায়, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকু দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার প্রমুখ সাহিত্যিকদের উপর। রামায়ণ ও মহা ভারতের উপর প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা রয়েছে। এক ঘন্টা টান বসে বই পড়লে পুরস্কারও থাকছে। আমরা চাই শিশুমন কল্পনাবিলাসী হোক, তাদের মনটা এসব সাহিত্য পড়তে পড়ে সুদূরের পিয়াসী হোক। শিশুদের মনে বই পড়ার আকর্ষণ বাড়িয়ে আগামী দিনে বই-এর প্রতি অনুরাগকে প্রশ্নাতীত করতে চাই। এছাড়া আমাদের মেলার শ্রেষ্ঠতম বৈশিষ্ট্য হল, আলোচনাসভা। বিদগ্ধ ব্যক্তিদের দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাসভার ব্যবস্থা থাকছে।
মানুষ জন ও ছাত্র ছাত্রীদের আমরা মননশীল করে তুলতে চাই। তাই এবছর আলোচনাসভায় আসছেন অচিন্ময় গুহ প্রখ্যাত চিন্তক, লেখক ও অধ্যাপক, অধ্যাপক পবিত্র সরকার, প্রাক্তন উপাচার্য, ড. বিষ্ণুপদ নন্দ, অধ্যাপক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, “ভবেশ দাশ, প্রাক্তন সংবাদ – সম্পাদক আকাশবাণী ও দূরদর্শন, ড. তখন মিশু, প্রাক্তন অধ্যাপক। এছাড়াও অনুষ্ঠিত হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কসভা ও মাতৃ ভাষা দিবস উদযাপন। তাছাড়া থাকছে নিয়মিত ফিচার, যেমন ম্যাজিক, কুইজ সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞান মঞ্চের অনুষ্ঠান। মেলার প্রায় ৪৫ টি প্রকাশনা সংস্থার জন্য ৬০ টি স্টল থাকবে। জনগণ ছাত্রছাত্রী ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাতে প্রচুর পরিমাণে বই কেনে তার জন্য ব্যাপক প্রচার করা হয়েছে এবং পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। প্রত্যহ ১২ টা থেকে রাত্রি ৮ টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে।
Home রাজ্য দক্ষিণ বাংলা শৈশব থেকে মোবাইল নয়, বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে মহিষাদলে সপ্তম বইমেলা...