মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয়ে তৃণমূলের কিষান মজদুর ক্ষেত ইউনিয়নের জেলা এবং ব্লক কমিটি ঘোষণা ।

0
218

নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা; ০৯এপ্রিল:- মমতা ব্যানার্জি এবং অভিষেক ব্যানার্জি বারবার নির্দেশ দিচ্ছেন দলে দুর্নীতি-গ্রস্তদের কোন জায়গা হবে না। অথচ যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে তারাই তৃণমূলে পদ অলংকৃত করছে।এমন ভাবেই তৃণমূলকে নিশানা করেছে বিজেপি।উল্লেখ্য মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয়ে তৃণমূলের কিষান মজদুর ক্ষেত ইউনিয়নের জেলা এবং ব্লক কমিটি ঘোষণা হয়। ঘোষণা করেন কিষান মজদুর ক্ষেত ইউনিয়নের জেলা সভাপতি তাজমুল হোসেন। যিনি আবার হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক এবং রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন মালদা জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি বিকাশ ব্যানার্জি, জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জম্মু রহমান সহ অন্যান্য নেতৃত্ব।সেখানেই হরিশ্চন্দ্রপুর ১(বি) ব্লক তৃণমূল ক্ষেত মজদুর ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পান তুলসীহাটার প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি মনোজ রাম। আর যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এই মনোজ রাম বেশ কিছু দিন আগে চাঁচল বিধানসভার বিধায়ক নিহার রঞ্জন ঘোষ এবং হরিশ্চন্দ্রপুর ১(বি) ব্লক তৃণমূল সভাপতি মানিক দাসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে দল-ত্যাগ করেছিলেন। এমনকি তার দলীয় কার্যালয় থেকে মমতা ব্যানার্জি এবং অভিষেক ব্যানার্জির ছবি খুলে দিয়েছিলেন। দলীয় কার্যালয় থেকে ছুঁড়ে ফেলতে দেখা গেছিলো দলের পতাকা। যদিও কয়েক দিনের মধ্যেই হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভার বিধায়ক তাজমুল ঘনিষ্ঠ জেলা তৃণমূলের দুই সাধারন সম্পাদক বুলবুল খান এবং জম্মু রহমান তার বাড়িতে যান।দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পরে মানভঞ্জন করেন।তারপর মনোজ রাম জানান তিনি তৃণমূল ছাড়ছেন না দলেই থেকে যাচ্ছেন।আর এই ঘটনার পরে পার্শ্ববর্তী চাঁচল এবং হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভার বিধায়কের অনুগামীদের মধ্যে মত-পার্থক্য সামনে আসে।পরবর্তীতে এই মনোজ রামের বিরুদ্ধে চাকরির নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। খোদ বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ তাকে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দেন। সূত্র মারফত জানা গেছিল এরমধ্যেই তিনি কংগ্রেসে যোগ দিতেন। কিন্তু আইপ্যাকের প্রতিনিধিরা তার বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন। তারপরেই তাকে সোমবার দেওয়া হল নতুন দায়িত্ব।কিন্তু লক্ষ্যণীয় ভাবে এই দিন দলীয় কার্যালয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর ১(বি) ব্লক তৃণমূলের চারটি সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতিরা কেউই উপস্থিত ছিলেন না। হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক কে সাংগঠনিক ভাবে তৃণমূল দুই ভাগে ভাগ করেছে।তার মধ্যে পার্ট বি চাঁচল বিধানসভার অন্তর্গত। প্রশ্ন উঠছে তবে কি মনোজ রামকে দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে সামনের দিনে আরো প্রকট হবে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সংঘাত? যদিও এমনটা মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব।তাদের দাবি মনোজ রাম দীর্ঘদিন ধরে দল করেন।তার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।এদিকে মনোজ রামের হাতে দায়িত্বের কাগজ তুলে দিতেই সবুজ আবির খেলায় মেতে উঠে উপস্থিত তৃণমূল কর্মীরা।যদিও সমগ্র ঘটনা নিয়ে তৃণমূলকে একযোগে আক্রমণ করেছে কংগ্রেস এবং বিজেপি। বিজেপির দাবি এই মুহূর্তে প্রত্যেকেই তৃণমূল ছেড়ে মুক্তি পেতে চাইছে।দলের সুপ্রিমো বলছে দলে দুর্নীতিবাজদের জায়গা নেই বাস্তবে তারাই জায়গা পাচ্ছে।অন্যদিকে কংগ্রেসের খোঁচা তৃণমূল ভয় পেয়েছে।ভাঙন আটকানোর জন্য এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।অনেক তাবড় তাবড় নেতারা তৃণমূল ছাড়বে।দলটা মুছে যাবে।যা নিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।

তৃণমূলের কিষান মজদুর ক্ষেত ইউনিয়নের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্লক সভাপতি মনোজ রাম বলেন, কিছু বিষয় নিয়ে বিধায়ক এবং ব্লক সভাপতির সঙ্গে আমার মতপার্থক্য হয়েছিল। পরে সেটা মিটে গেছে। দল আমি ছাড়িনি। এই সব ভুলভাল কথা।দল আমাকে আজ যেটা নতুন দায়িত্ব দিল সেটা ভালোভাবে পালন করব।

মালদা জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি বিকাশ ব্যানার্জি বলেন, অনেকেই অনেক কথা বলে তাতে কান দেওয়া যাবে না।আমরাও বলতে পারি সমস্ত ইন্দিরা ভবন এসে তৃণমূলে যোগ দিবে।মনোজ রাম দীর্ঘদিন ধরে দল করেন।

মালদা জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জম্মু রহমান বলেন, আইপ্যাক এর কর্মীরা যেতেই পারেন আলাপ-আলোচনার জন্য। মনোজ বাবু কোনদিনও দল ছাড়েননি। একটা সমস্যা হয়েছিল। সেটা আমরা মিটিয়ে ফেলেছিলাম।

উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সম্পাদক রুপেশ আগরওয়াল বলেন, এক সময় উনি আমাদের দলে যোগদান করার জন্য যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু আমাদের কর্মীরা বলেছিল উনি দুর্নীতিবাজ। এখন আবার কংগ্রেসে যোগদান করতে যেতেন সেই সময় উনাকে দায়িত্ব দেওয়া হল। যারা তৃণমূল ছাড়তে চাইছে তাদের দায়িত্ব দিয়ে আটকানো হচ্ছে। দুর্নীতিবাজদের দলে জায়গা হচ্ছে।এইভাবে দল বেশিদিন টিকবে না।

হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, গতকাল বেশ কয়েকজন যোগদান করেছেন। অনেকেই যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল তার মধ্যে হয়তো মনোজ রাম ছিল। অনেক তাবড় তাবড় নেতারা তৃণমূল ছাড়বে। হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে তৃণমূল দলটা মুছে যাবে।

প্রসঙ্গত শোনা যাচ্ছিলো মনোজ রাম,খাদ্য কর্মাধক্ষ্য কেরামুদ্দিন আহাম্মেদ সহ তৃণমূলের অনেকেই আজ কংগ্রেসে যোগ দিত।ভাঙন রোধ করতে মাঠে নামে আইপ্যাক।তাদের বাড়ি গিয়ে কথা বলে।তারপরেই আজ দায়িত্ব পেলেন মনোজ রাম। জানা গেছে ব্লক কমিটিতেও একাধিক পরিবর্তন হতে পারে।কিন্তু রাজনৈতিক ওয়াকিবহল মহলের দাবি এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।ভাঙন রুখতে গিয়ে আরো প্রকট হতে পারে গোষ্ঠীকোন্দল।