দক্ষিণ দিনাজপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা:- চার বছরের এক খুদে শিশুর কীর্তি তাক লাগিয়েছে সীমান্তের বাসিন্দাদের। ৬৪ টা দেশ, ২৮ টা রাজ্য ও ৮ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ও তাদের রাজধানীর নাম অনর্গল বলে চলেছেন। যা শুনে রীতিমতো অবাক শুধুমাত্র সীমান্তের বাসিন্দারাই নয়, অবাক হয়েছেন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানরাও। মাত্র ২ মিনিট ২৫ সেকেন্ডে ঠোটস্থ ওই দেশ ও রাজ্যের নাম বলে ইতিমধ্যে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস এ নাম তুলেছে বালুরঘাটের চিঙ্গিশপুর এলাকার বাসিন্দা ছোট্ট দীপান্বিতা। বুধবার কুরিয়ারের মাধ্যমে যার শংসাপত্র পৌছাতেই রীতিমতো হইচই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সীমান্তের প্রত্যন্ত এলাকাতে।
বালুরঘাটের চিঙিশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম কিসমত রামকৃষ্ণপুর এলাকার বাসিন্দা পেশায় সিভিক ভলেন্টিয়ার সুরজিত বর্মনের মেয়ে দীপান্বিতা বর্মন। যার বয়স মাত্র তিন বছর আট মাস। স্থানীয় একটি অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারে রোজ যাওয়া আসা রয়েছে তার। কিন্তু হঠাৎ-ই তার মধ্যে অদ্ভুত এক প্রতিভা দেখে অবাক হন তার বাবা সুরজিত ও মা মল্লিকা রায় বর্মন। কোন জটিল শব্দ একবার তার কানে পৌছালেই তা কোনভাবেই ভুলছে না সে। ছোট্ট দীপান্বিতার সে অর্থে লেখাপড়া শুরু না হলেও বিভিন্ন সময় তার বাবা মা দেশ বিদেশের বহু নাম ও তাদের রাজধানীর নাম উচ্চারণ করেন। শুধু তাই নয় নানা সাধারণ জ্ঞানের বিষয়ও তার বাবা মা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। আর তা শুনে শুনেই রীতিমতো মুখস্থ হয়ে গিয়েছে ওই ছোট্ট শিশুর। তার কাছে যেকোন দেশের রাজধানীর নাম জানতে চাইলেই তা মুহুর্তের মধ্যেই বলে দিচ্ছে ছোট্ট দীপান্বিতা। মুখস্থ রয়েছে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নাম, একাধিক রাজ্য ও রাজধানীর নাম। শুধু তাই নয়, সাধারণ জ্ঞানের বহু জটিল প্রশ্নের উত্তর তার যেন ঠোঁটের ডগায় রয়েছে। যা শুনে রীতিমতো স্তম্ভিত সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা। ছোট্ট দীপান্বিতার প্রতিভা তাক লাগিয়ে দিয়েছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর জওয়ানদেরও। বিএসএফের নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে একাধিক বিখ্যাত হিন্দি সিনেমার ডায়ালগ দিয়ে সকলকে অবাক করেছে ছোট্ট দীপান্বিতা। তার এই প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিএসএফ জওয়ানরা দীপান্বিতার বাবাকে পরামর্শ দেন ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস এ যোগাযোগ করবার। যারপরেই আসে সফলতা। মাত্র ২ মিনিট ২৫ সেকেন্ডে ৬৪ টা দেশ, ২৮ টি রাজ্য ও ৮ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নাম বলে ফেলেন ছোট্ট দীপান্বিতা। তারপরেই তার চুড়ান্ত সফলতার কথা জানানো হয় ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস এর তরফে। বুধবার কুরিয়ার মারফত যার শংসাপত্র, মেডেল, বই, পেন সহ বেশকিছু জিনিস এসে পৌছায় বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ওই গ্রামে। আর তারপরেই যেন ছোট্ট দীপান্বিতা কে ঘিরে উৎসবের আমেজ তৈরি হয় প্রত্যন্ত এলাকায়।
প্রতিবেশী মমতা বর্মন ও শ্যামল পালরা বলেন, ছোট্ট মেয়ের এমন প্রতিভা তাদের প্রত্যেককেই অবাক করেছে। অনর্গল দেশ রাজ্যের বিভিন্ন নাম বলে চলেছে। যা তারা নিজেরাও বলতে পারবেন না। ছোট্ট দীপান্বিতা তার প্রতিভা তুলে ধরে যেভাবে গ্রামের নাম উজ্জ্বল করেছে তাতে তারা সকলে খুবই আনন্দিত।
দীপান্বিতার মা মল্লিকা রায় বর্মন বলেন, একদম ছোট থেকেই তার মধ্যে এই প্রতিভা লক্ষ্য করছেন তারা। যা দেখে তারা নিজেরাও অবাক হয়েছেন। কিছু বিষয় আলোচনা করলেই সেটা আর সে ভুলছে না। তারপরেই তারা ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস এ যোগাযোগ করেন। যেখানে দেওয়া নির্ধারিত সময়েই তার প্রতিভা তুলে ধরতে সক্ষম হয় দীপান্বিতা। পড়াশুনার জগতে পা না দিতেই তার এমন সফলতা তাদের আনন্দ অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাবা সুরজিত বর্মন বলেন, এখনও পড়াশুনার কিছুই শেখে নি সে। কিন্তু তারপরেও সে এতকিছু কোথা থেকে মনে রাখছে তা বুঝে উঠেই যেন অবাক হয়ে যাচ্ছেন। তার এই প্রতিভা দেখে প্রতিবেশীরা, বিএসএফ সবাই অবাক হয়েছে। ডিউটি সেরে এসে অবসর সময়ে মেয়ের সাথে পারিপার্শ্বিক যা আলোচনা করেন সেটি সে ধরে রাখে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকায় থেকে মেয়ের এই প্রতিভাকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবেন তার দুশ্চিন্তা তাকে চেপে ধরেছে। কেননা এলাকায় কোন প্রাথমিক স্কুল নেই যেখানে তাকে ভর্তি করবেন।