নদীয়া , নিজস্ব সংবাদদাতা:- অজয় বিশ্বাস (৪০), নদীয়া জেলার রানাঘাট-১ ব্লকের বারাসত পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ভাদুড়ী গ্রামের সর্ষে চাষের সাথে যুক্ত রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন এর ডিজিটাল ফার্ম স্কুল এর একজন সক্রিয় সদস্য। পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট পরিবারটির মূল জীবিকা ধান, মরশুমি সবজি এবং সর্ষে চাষ। প্রায় দুই বিঘার (০০.৬৬ একর) কিছু বেশি জমি-তে অজয় দীর্ঘদিন ধরে সর্ষে চাষ করে আসছেন। মেধাবী অজয় কলা বিভাগে স্নাতক হওয়ার পর চাকরির পরিবর্তে কৃষিকেই জীবন জীবিকার মাধ্যম রূপে গণ্য করেন। একমাত্র পুত্র বিদ্যালয় পাঠরত।
অজয় বাবু রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের এর সাথে পরিচিত হন ২০২২ সালের জুলাই মাসে ফাউন্ডেশনের কর্মী সুজয় ব্যানার্জির মাধ্যমে, সেই সময় ডিজিটাল ফার্ম স্কুল এর জন্য কৃষক নির্বাচনের কাজ চলছিল। সুজয় বাবুর কাছ থেকেই অজয় বিভিন্ন জীবিকা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও নিঃশুল্ক হেল্পলাইন নম্বর ১৮০০ ৪১৯ ৮৮০০ এর সাথেও অবগত হন। এরপর অক্টোবর ২০২২ সালে নদীয়া জেলার রানাঘাট-১ ও শান্তিপুর ব্লকের মোট চারটি গ্রামের ১৭২ জন কৃষক কে নিয়ে রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন ধান, সবজি ও সর্ষে চাষের সাথে যুক্ত কৃষক দের নিয়ে একটি “ডিজিটাল ফার্ম স্কুল” শীর্ষক অভিনব প্রকল্প চালু করে। মূলতঃ মাটির চরিত্র অনুসারে আধুনিক কৃষি পদ্ধতির সাথে কৃষককে দক্ষ করে তুলে তাঁর রোজগার বাড়ানোই মূল লক্ষ্য। বিশেষজ্ঞ হিসেবে যুক্ত আছেন রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন, ও হরিণঘাটা কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিজ্ঞানীবৃন্দ। প্রকল্প চালু হওয়ার পর অজয় বাবু ধারাবাহিকভাবে এই ফার্ম স্কুল থেকে ধারাবাহিক ভার্চুয়াল প্রশিক্ষণ- এর মাধ্যমে সর্ষে চাষের উদ্ভাবনী বিষয়গুলি রপ্ত করেন, বিশেষ করে সেচ দেওয়া, মাইক্রোনিউট্রেন্ট (বোরন), সারের ব্যবহার, কীটনাশক ঔষধের ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়গুলি এবং সেইমতো দুই বিঘার কিছু বেশি জমিতে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে সরষে চাষ করেন। ভার্চুয়াল ট্রেনিং এর পাশাপাশি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের মাধ্যমে হাতেকলমে ফিল্ড প্রশিক্ষণ-এরও আয়োজন করে রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন। ফলস্বরূপ, বিগত ২০২২ রবি মরশুমে অজয়ের সর্ষে (কেশরী গোল্ড হাইব্রিড) উৎপাদন হয় প্রায় ৯০০ কেজি অর্থাৎ ৯-কুইন্টাল। মোট বিনিয়োগের পরিমান ছিল প্রায় ১১,০০০/- টাকা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রানাঘাটের এই অঞ্চলটির মাটি অতীব উর্বর এবং সর্ষে চাষের জন্য বিখ্যাত। জেলার মধ্যে সব থেকে বেশি সর্ষে চাষ হয় এই অঞ্চলে।
২০২১ সালে সম পরিমান জমিতে যেখানে সর্ষে উৎপাদনের পরিমান ছিল প্রায় ৫- কুইন্টাল, সেখানে রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন-এর প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর ২০২২ সালে উৎপাদনের পরিমান হয়েছে দ্বিগুনের কাছাকাছি। কিছুটা পরিবারের জন্য রেখে বাকি সরষে স্থানীয় বাজারে ৪৯/- টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি করেছেন অজয়। নীট লাভের পরিমান প্রায় ৩৩,০০০/- টাকা।
অজয় বাবু আজ রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের “ডিজিটাল ফার্ম স্কুল” এর ফলে উপকৃত তো বটেই, আত্মবিশ্বাসীও বটে !! তাঁর কথায় “ ডিজিটাল ফার্ম স্কুল কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এক আধুনিক পন্থা, আগে আমরা প্রথাগত পদ্ধতিতে চাষ করার ফলে উৎপাদন সেই অনুপাতে বাড়তো না, কিন্তু ডিজিটাল ফার্ম স্কুল থেকে বিশেষজ্ঞদের সাথে নিয়মিত তথ্যের আধান প্রদান করার ফলে আধুনিক কৃষির খুঁটিনাটি বিষয়গুলি আজ আমাদের করায়ত্ত হয়েছে “। এভাবেই রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন কৃষির বৈচিত্র বৃদ্ধি করে কৃষক ও কৃষির মানোন্নয়নে সদা সচেষ্ট।