মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী জমির পাট্টা বিতরণ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।

0
147

নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা:—- মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী জমির পাট্টা বিতরণ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং ভূমি কর্ম্যাধক্ষ্যর অনুগামীদের মধ্যে বচসা এবং হাতাহাতিকে কেন্দ্র করে হুলস্থুল কান্ড।ব্যাপক উত্তেজনা ব্লক চত্বরে। কর্মসূচি চলাকালীন প্রকাশ্যে ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক এবং ভূমি সংস্কার আধিকারিককে ধমক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির। কর্মসূচি বন্ধ করার দাবি। একে অপরের বিরুদ্ধে তুলছে দুর্নীতির অভিযোগ। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির দাবি তাকে না জানিয়ে রাতের অন্ধকারে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে পাট্টা বিতরণ করার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যাদের জমি রয়েছে তাদেরকেই পাট্টা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের তীর পঞ্চায়েত সমিতির ভূমি কর্মাধক্ষ্যের দিকে। পাল্টা বন্যা ত্রাণ দুর্নীতি নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কে খোঁচা দিলেন ভূমি কর্মাধক্ষ্য। যদিও পাট্টা বিতরণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ মানতে নারাজ সরকারি আধিকারিকরা। গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ে ফের ব্যাপক অস্বস্তিতে তৃণমূল। দুর্নীতি ইস্যুতে শাসকদলকে এক হাত নিল বিজেপি। সরগরম এলাকার রাজনীতি। মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক তথ্য মিত্র কেন্দ্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশ অনুযায়ী পাট্টা বিতরণ কর্মসূচি চলছিল বুধবার। যাদের নিজস্ব জমি নেই যারা ভূমিহীন দুয়ারে সরকারে আবেদনের মাধ্যমে তারা সরকারি জমির পাট্টা পাবে এমনটাই জানিয়ে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।সেই অনুযায়ী চলছিল কর্মসূচি।কর্মসূচি চলাকালীন হঠাৎই ব্লক চত্বরে এসে হট্টগোল শুরু করেন হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কোয়েল দাস। তার অভিযোগ এই পাট্টা বিতরণ কর্মসূচির কথা তাকে জানানো হয়নি। রাতের অন্ধকারে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে পাট্টা বিতরণের তালিকা তৈরি করেছেন পঞ্চায়েত সমিতির ভূমি কর্মাধক্ষ্য আদিত্য মিশ্র। যারা ভূমিহীন তারা পাট্টা পাচ্ছে না অথচ যাদের জমি রয়েছে তারা পাচ্ছে। তাই তিনি হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক অনির্বাণ বসু এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক ভিক্টর সাহার কাছে দাবি জানান এই কর্মসূচি বন্ধ করতে হবে।প্রকাশ্য সরকারি আধিকারিকদের রীতিমতো ধমক দেন তিনি। তারপরেই ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক উত্তেজনা। আদিত্য মিশ্র এবং কোয়েল দাসের অনুগামীরা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে আসতে হয় হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশকে।যদিও সরকারি আধিকারিকদের দাবি সম্পূর্ন নিয়ম মেনে কর্মসূচি হয়েছে।কোনো দুর্নীতি হয়নি।অন্যদিকে ভূমি কর্মাধক্ষ্য আদিত্য মিশ্র পাল্টা বন্যা ত্রাণ নিয়ে খোঁচা দিয়েছেন সভাপতি কোয়েল দাসকে।সমগ্র ঘটনা সামনে আসতেই কটাক্ষ বিজেপির।বিজেপির দাবি এক পক্ষ দুর্নীতির ভাগ পায়নি বলে ঝামেলা করছে।এই দলকে মানুষ ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলবে। তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা।

হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কোয়েল দাস বলেন, রাতের অন্ধকারে পাট্টা বিতরণ তৈরি করার তালিকা তৈরি হয়েছে। আমাকে কোন কিছু জানানো হয়নি।লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এই দুর্নীতি হচ্ছে। ভূমি কর্মাধক্ষ্যর সব কিছু হচ্ছে।

হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির ভূমি কর্মাধক্ষ্য আদিত্য মিশ্র বলেন, কোন রকম দুর্নীতি হয়নি। যারা প্রকৃত প্রাপক তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ।আর যিনি অভিযোগ করছেন তিনি নিজে বন্যাত্রাণ দুর্নীতিতে জড়িত।

কোয়েল দাসের অনুগামী যুব তৃণমূল নেতা অভিজিৎ কর্মকার বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সভাপতি কে জানাতে হবে। কিন্তু এরা জানায়নি। আমাদের কাছে খোঁজ আছে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে। তাই আমরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছি।

আদিত্য মিশ্রর অনুগামী ছাত্র নেতা দীপক পাশয়ান বলেন,গরিব ভূমিহীন মানুষরা পাট্টা পাবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এই কর্মসূচি হচ্ছে। সেখানে উনি এসে বাধা দিচ্ছেন। কর্মসূচি বন্ধ করতে বলছেন।

হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক অনির্বাণ বসু বলেন, আমাদেরকে যে ধমক দেওয়া হয়েছে এই ঘটনা খুব দুর্ভাগ্যজনক। নির্দেশ অনুযায়ী সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে এই কর্মসূচি হয়েছে। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।

হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক ভিক্টর সাহা বলেন, ধমক দিলেও কিছু করার নাই আমরা আমাদের কাজ করব। সঠিকভাবে অনুসন্ধান করে পাট্টা প্রাপকদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এখানে দুর্নীতির বিষয় নেই।

উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সম্পাদক রূপেশ আগরওয়াল বলেন, এক পক্ষ দুর্নীতির ভাগ পেয়েছে।অন্য পক্ষ পায়নি। এই নিয়ে ঝামেলা।এটাই তো এদের সংস্কৃতি।

একদিকে নব জোয়ার কর্মসূচি থেকে নতুন তৃণমূলের বার্তা দিচ্ছেন অভিষেক।অন্যদিকে হরিশ্চন্দ্রপুরে একে অপরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সংঘাতে জড়াচ্ছেন শাসকদলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।যা নিয়ে রীতিমত অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল।