উঃ দিনাজপুর, রাধারানী হালদারঃ- নেই মাথা গোজার ঠাই, তার উপর আবার পেটের ক্ষুধা। অভাবের সংসারে পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য দু’মুঠো ভাতের জন্য লোক লজ্জাকে উপেক্ষা করে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জর রাম গোপাল শর্মা। বর্তমানে তিনি কালিয়াগঞ্জের শান্তি কলোনিতে যাওয়ার পথে মহা শ্মশানের পাশে শ্রীমতি নদীর ধারে জরাজীর্ণ জঙ্গলের মাঝে এক চিলতে পলিথিন এর নিচে বসবাস করছেন তিনি । অসহায় এই সংগ্রামে রামগোপাল শর্মার পরিবারের কেউ নেই। পলিথিন দিয়ে টাঙানো জঙ্গলের মাঝে ছোট্ট একটি কুঠরে ঘর করে সেখানেই বসবাস করছেন তিনি। গত এক বছর ধরে।
ছোট্ট একটা ঘরে মাথা গোজার ঠাই হয়েছে তার তবে সেটিকে ঘর না বললে ভালো। জীবন জীবিকার তাগিদে একাকিত্ব ভাবে শহরের বিভিন্ন আনাতে কানাচে তে নোংরা আবর্জনার মধ্য থেকে প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করে দিনাতি পাত করছেন তিনি। সারাদিন শহরের বিভিন্ন আনাচে-কানা যেতে গিয়ে নোংরা আবর্জনার মধ্য থেকে প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করে সেটি বিক্রি করে যেটা আয় হয় সে দিয়েই দিনযাপন করছেন দুবেলা দুমুঠো খেয়ে এই রামগোপাল শর্মা।নেই পরিবারের কেউ,নেই মাথা গুজার আচ্ছাদন।অসুখ বিসুখ হলে দেখার কেউ নেই। তবুও রয়েছেন তিনি জঙ্গলের পাশে শুধুমাত্র পলিথিন টাঙিয়ে দিনের পর দিন। দেখার কেউ নেই।আর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন জীবন যুদ্ধে আপন মনে ।সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো এই ব্যক্তি শহরের বুকে এক চিলতে পলিথিনের নিচে বসবাস করলেও এখন তাকে দেখার মতন কেউ নেই। অথচ সেই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। সারাদিন রুটি রুজির তাগিদে এই ব্যক্তি শহরের বিভিন্ন জায়গায় নোংরা আবর্জনা থেকে প্লাস্টিক এর বোতল কুড়িয়ে সেটা ভাংড়ির দোকানে গিয়ে বিক্রি করার পর যে পয়সাটা পান তিনি সেই পয়সা দিয়েই সামান্য কিছু খাওয়ার নিয়ে এসে এখানেই তিনি রান্না বান্না করেন। এখানেও একটি বিষয় চোখে পড়ল যা সবাইকে চমকে দিবে তা হল এই ব্যক্তি যে জল দিয়ে রান্না বান্না করেন তা সম্পূর্ণভাবে নদীর জল দিয়ে। তিনি জানান শুধু রান্নাবান্না নয় নদীর জল কখনো কখনো তিনি পানীয় জল হিসাবে ব্যাবহৃত করেন। আজ বিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষরা যখন আধুনিকভাবে জীবন যাত্রা করছে তখন এই ব্যক্তি সবার চক্ষুর আড়ালে থেকে গিয়ে জীবন যুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারাচ্ছন্ন ভাবে। জানা যায় রামগোপাল শর্মা একদিন এলাহাবাদ থেকে শ্রমিক হয়ে এখানে এসেছিলেন কাজ করার জন্য ।তারপর আর শ্রমিকের কাজ তার পক্ষে করা সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি বেছে নিয়েছেন শহরের আনাচে-কানাচে তে গিয়ে প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করার কাজ। তার আক্ষেপ তার পরিবারের কেউ নেই কোনরকমে জঙ্গলের মধ্যে জরাজীর্ণ অবস্থায় তিনি বছরের পর বছর থাকলেও তাকে দেখার মতন কোন সহৃদয় মানুষ এখনো অব্দি এগিয়ে আসেননি। প্রচন্ড রোদ ঝড়-বৃষ্টি প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে উপেক্ষা করে তিনি বছরের পর বছর এক চিলতে পলিথিনের নিচে রাত কাটিয়ে যাচ্ছেন। যা সত্যি এই শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে সকলের কাছে লজ্জার বিষয়।তিনি জানান তার অসুখ-বিসুখ হলেও কিছু করার থাকে না কারণ তার পরিবারে কেউ নেই। তিনি একাই রয়েছেন।তাই প্রচলিত একটি কথা রয়েছে সেই প্রবাদপ্রতিম সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকার কন্ঠে সেই বিখ্যাত গান, মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য ,একটু মানুষ সহানুভূতি কি পেতে পারে না ও বন্ধু মানুষ মানুষের জন্য।