দামাল মেয়ে কুহেলি (ধারাবাহিক উপন্যাস, ষষ্ঠ পর্ব) : দিলীপ রায়।

0
581
       কুহেলির বাড়ি থেকে চলে গেলো শীতল । কুহেলি  হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো । সাংঘাতিক নাছোড়বান্দা শীতল । টাকা সে দেবেই । অনেক কষ্টে শীতলকে থামানো গেছে । এটাই তার শান্তি । 
        কুহেলি মনের দিক থেকে স্থির প্রতিজ্ঞ, সে নিজের চেষ্টায় বড় হবে । তাতে তার খাবার জুটুক বা না-জুটুক ! তবু কারো সাহায্য বা দয়া-দাক্ষিণ্য নিয়ে বাঁচতে চায়  না । কুহেলির বাবা তাকে একটা জিনিস শিখিয়েছে, সেটা হচ্ছে নিজের পায়ে দাঁড়ানো । তাই বাবার কথাটার মর্যাদা দিতে  মানসিকভাবে ষোলোআনা প্রস্তুত । যতো ঝড় ঝঞ্ছাট আসুক, তাতে সে কিছুতেই হেলবে না । তার সিদ্ধান্তের একচুল নড়চড় হবে না । নিজের পায়ে দাঁড়াতে কুহেলি বদ্ধপরিকর !  
    রাত্রিতে মুড়ি-খই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো কুহেলি । 
    উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে  আদাজল খেয়ে লাগলো । বাড়ির কাজ নিজের  হাতেই সামলাতে হচ্ছে । গ্রামে বাড়ি । গাছ-গাছলায় ভর্তি । আম, কাঠাল, পেয়ারা, লেবু, ইত্যাদি  । যার জন্য গাছের পাতায় উঠোন ভর্তি থাকে ।  অন্যদিকে মাটির উঠোন । যার জন্য উঠোন ঝাঁট দেওয়া একটা ঝকমারি । বাড়ির টুকিটাকি কাজকর্মে অনেক সময় নষ্ট  । আগে এইসব টুকিটাকি কাজ  নিয়ে ভাবতে হতো না । বাবা সামলাতো । বাবা তাকে কুটোটি নাড়তে দিতো না । তাই প্রতিটা মুহূর্তে কুহেলি বাবাকে মিস করে । কিন্তু সেই বাবা কী করে তাকে ফেলে রেখে অন্যত্র ঘর বাঁধতে ছুটলো, সেটা কুহেলির মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না । এই মুহূর্তে  কুহেলি অতীতের সব কিছু ভুলে গিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ধ্যান দিলো । 
    অঙ্কের ও ইংরেজি বিষয়ের উপর আলাদা  টিউশনি মাস্টার ছিল ।  কুহেলি টিউশনি মাস্টার ছেড়ে দিতে বাধ্য হলো । তবে মাস্টার মশাইয়েরা  কুহেলিকে পইপই করে বলে দিয়েছেন, সমস্যা হলে অবশ্যই পড়তে আসবে । কুহেলির জন্য টিউশনি মাস্টারের দরজা খোলা ।  দুজন মাস্টার মশাই খুব ব্যস্ত মানুষ । একজন কান্দী কলেজে এবং অন্যজন সালার কলেজে পড়ান । দুই জন মাস্টার মশাইয়ের বাড়ি ভরতপুরে । তাঁরা বাড়িতে সকালে পড়ান । যাই হোক কুহেলি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফর্ম পূরণ করলো । ক্লাসের অঙ্কের মাস্টার মশাই বললেন, “পড়াশোনায় ঢিলে দেবে না ।  অঙ্কের বিষয়ে তোমার উপর আমাদের অগাধ ভরসা । আমার বিশ্বাস, এবারের পরীক্ষায় তুমি আমাদের স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করবে ।“ অঙ্কের মাস্টার মশাইয়ের এতটা ভরসা পাওয়ার কারণ, কুহেলি টেস্ট পরীক্ষায় দুর্দান্ত রেজাল্ট করেছে । যার জন্য মাস্টার মশাইদের তাক লেগে গেছে । তাই মাস্টার মশাইরা কুহেলির উপর একটু বেশী আস্থা রেখে ফেলছেন । তবুও কুহেলি সব কিছু ছেড়ে দিয়ে শুধু পড়াশুনা নিয়ে ডুবে রইলো । এমনকি শীতলের সঙ্গে ফোনেও যোগাযোগ রাখলো না পাছে পড়াশুনায় ব্যাঘাত ঘটে । কুহেলির ইংরেজিতে অতোটা  চাপ নেই । সমস্যা দেখা দেয় অঙ্ক কষা নিয়ে । অনেক সময় আটকে যায় । অঙ্ক আটকে গেলে কুহেলি অঙ্কের টিউশনি স্যারের কাছে গিয়ে বুঝে আসে । অঙ্কের স্যার কুহেলিকে  খুব ভালবাসেন । তাঁর বিশ্বাস, কুহেলি অঙ্কে খুব ভাল রেজাল্ট করবে । 
   পরীক্ষা ঘনিয়ে আসছে । অন্যদিকে তার জমানো পয়সা শেষ হওয়ার পথে  । অহেতুক চিন্তা থেকে নিবৃত্তি পেতে অতি সাবধানে খরচ করছে কুহেলি । যাতে পরীক্ষা পর্যন্ত  সংসার চালিয়ে যেতে পারে । বাইরের খরচা তেমন নেই । ইলেক্ট্রিক বিল পেমেন্ট  হয়ে গেছে । গাঁয়ের হরির মুদিখানার দোকান থেকে বাকীতে এক কেজি সঃ তৈল এনেছিল তারও পেমেন্ট হয়ে গেছে । এখন বাইরে ধার-বাকী নেই । কুহেলি মনেপ্রাণে চাইছে, পরীক্ষা পর্যন্ত জমানো পয়সায় চলুক । পরীক্ষার পর উপায়ের একটা চিন্তা করা যাবে । পরীক্ষার আগে উপায়ের চিন্তা করলে তার রেজাল্ট খারাপ হতে বাধ্য । তাই কুহেলি সাতপাঁচ না ভেবে পড়াশুনায় মনোনিবেশ করলো । 
   গ্রামের কিছু ছেলের উৎপাত  সারাক্ষণ । তার মধ্যে ক্যাবলা কিরণের উৎপাত অভিনব । তা ছাড়া কিরণের তাকানোর মধ্যে জটিলতার  আভাস কুহেলির কাছে বিরক্তিকর ।  কুহেলি পাত্তা দিচ্ছে না অবলোকন করে কিরণ সকালে সন্ধ্যায় উপযাচক হয়ে খোঁজ নিচ্ছে, সংসারের জন্য কুহেলির কী কী বাজার লাগবে ।  কিরণের অভব্য আচরণের জন্য কুহেলি বলতে বাধ্য হলো তার কোনো বাজার লাগবে না । ঘরে পয়সা নেই তার খোঁজ কেউ নিচ্ছে না  । অথচ বাজার করে দেওয়ার জন্য উতলা !  কিরণের অতি উৎসাহ দেখে কুহেলি হাসবে না কাদবে, ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছে না । তাই ঠাণ্ডা মাথায় কিরণকে এটা-সেটা বুঝিয়ে কুহেলি তাকে এড়িয়ে যেতে  লাগলো । 
    আবার অঙ্ক আটকালো । স্যারকে মোবাইলে পাওয়া গেলো না । পরেরদিন ভোরবেলায় ফোন করলো কুহেলি । স্যার ফোনে জানালেন, “কয়েকদিন কলেজে জরুরি কাজ থাকার জন্য সকালবেলায় তাঁকে কলেজে ঢুকতে হচ্ছিল । আজ ফাঁকা আছি ।  সুতরাং বিকেলে এসো । এর পরের দুদিন থাকবো না । ব্যক্তিগত কাজে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট যাবো ।“
   কুহেলি সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দিলো, “স্যার, আমি আজ বিকেলেই যাচ্ছি ।“
   “ঠিক আছে কুহেলি । তুমি পাঁচটার সময় চলে এসো । একটু আগে আসাটা তোমার পক্ষে ভাল । কেননা তোমাকে আবার অনেকখানি রাস্তা ডিঙিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে ।“  মাস্টার মশাই বললেন ।
    তারপর ফোনের লাইন কেটে গেলো ।
   কুহেলি দুদিন ধরে ভাবছে, অঙ্কের স্যারের কাছে যাওয়ার কথা  । কেননা  পরীক্ষা আসন্ন । কয়েকটা অঙ্কের সমাধান কিছুতেই হচ্ছে না । কুহেলির ধারণা, পরীক্ষায় ঐ জাতীয় অঙ্ক দিলে মুশকিলে পড়বে । তার জন্য আগেভাগে  মাস্টার মশাইয়ের কাছ থেকে জেনে রাখা ভাল । পরীক্ষায় এলে অন্তত ১০ থেকে ১৫ নম্বরের অঙ্ক থাকবে । সেক্ষেত্রে তাকে ঐ নম্বরের অঙ্কের সমাধান না করেই খাতা জমা দিতে হবে ।  তাই কোনো কিছু চিন্তা না করে বিকেল চারটার সময় ভরতপুরে অঙ্কের স্যারের বাড়ির উদ্দেশে  রওনা দিলো । অনেকটা রাস্তা । তাই  হাতে সময় নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলো । 
  সাইকেলের চাকায় হাওয়া কম । কাঞ্চন নগরে কোনো সাইকেল সারানোর দোকান নেই । তাই তাকে সাইকেলে হাওয়া দিতে হলে অন্তত সিস্‌গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে । চাকায় হাওয়া কম থাকায় রাস্তা দিয়ে দ্রুত সাইকেল চলছে না । ধীরে ধীরে সাইকেল নিয়ে যখন সিস্‌গ্রামে কুহেলি  পৌঁছালো, তখন বিকেল পাঁচটা বেজে গেছে । চাকায় লিক্‌ । লিক্‌ সারাতে সময় নিলো ।  তারপর সিস্‌গ্রামে সাইকেলের লিক্‌ সারিয়ে চাকায় হাওয়া দেওয়ার পর যখন জোরে সাইকেল চালিয়ে  কুহেলি ভরতপুর পৌঁছালো তখন স্যারের অন্যান্য  ছাত্র-ছাত্রী টিউশনিতে  ঢুকে গেছে । স্যার চেয়েছিলেন, পাঁচটার সময় কুহেলি পৌঁছালে তাকে একান্ত আলাদাভাবে অঙ্ক বুঝিয়ে দিয়ে ব্যাচের অন্যান্য ছেলেমেয়েদের পড়াতে বসবেন । কিন্তু দেরী করার জন্য সকল ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মাস্টার মশাইয়ের পক্ষে আলাদাভাবে কুহেলিকে বোঝানো কঠিন হয়ে দাড়ালো । তাই কুহেলি পুরো অঙ্ক স্যারকে বোঝাতে অনেকটা রাত্রি । ঘড়ির কাটায় তখন রাত্রি  ৯টা । 
  স্যারের বাড়ি থেকে বেরিয়ে কুহেলি হাই রোডে এসে দাঁড়ালো । এই হাই রোডটি সালার থেকে ভরতপুর হয়ে কান্দি হয়ে বহরমপুর যাচ্ছে । যদিও রোডটির সাথে অনেকদূর পর্যন্ত যোগাযোগ । বহরমপুর থেকে ফরাক্কা, মালদহ হয়ে সোজা উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই যোগাযোগ । অন্যদিকে কলকাতা থেকে কল্যাণী  এক্সপ্রেস  দিয়ে ঈশ্বরগুপ্ত সেতু পার হয়ে আসাম রোড ধরে কাটোয়া হয়ে সালার, তারপর ভরতপুর ।  সুতরাং রাস্তাটির গুরুত্ব অপরিসীম । সেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাড়ি ফেরার কথা ভাবছে । ভরতপুরে লোডশেডিং । চারিদিকে অন্ধকার । কুহেলি ভাবলো, কাকাকে একবার বাড়ি ফেরার কথা জানিয়ে রাখা দরকার  । তাই কাকাকে (ছোট কাকা, কানাই)  ফোন করে  বলল, “রাত হয়ে গেছে । সম্ভব হলে তুমি ভরতপুরের দিকে সাইকেলে এগিয়ে এসো । আমি ভরতপুর থেকে বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছি ।“   ফোন করে কুহেলি আর সময় নষ্ট করলো না । সাইকেল চালিয়ে সিস্‌গ্রাম পার  হয়ে কাঞ্চন নগরের রাস্তা ধরলো । ভরতপুর ছাড়ার পর গোটা রাস্তা অন্ধকার । মাঝে মাঝে মোটর বাইকের আলোয় অনেকদূর পর্যন্ত রাস্তা দেখতে পাচ্ছিলো  । রাস্তায় লোকজন কম । রাত্রি আটটার পর স্থানীয় মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির  বাইরে বের হন না । ফাঁকা রাস্তা দেখে কুহেলির আতঙ্ক ! সিস্‌গ্রাম পার হওয়ার পর কুহেলির মনের  ভিতর অজানা আশঙ্কা, “এত রাত্রিতে ফাঁকা রাস্তা দিয়ে একা একা সাইকেল চালিয়ে যেতে পারবে কিনা ?”   তার মাথায় অজানা বিপদের কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে । কী জানি কী বিপদ আসন্ন ?  
       বিকেল বেলায় বাড়ি থেকে কুহেলি যখন ভরতপুরে  যাচ্ছিলো, গাঁয়ের ক্যাবলা  কিরণ তাকে দেখতে পায় । কিরণকে ইদানীং কুহেলি ক্যাবলা কিরণ নামেই ডাকে ।  তখন থেকেই কিরণ প্রমাদ গুনছে, কুহেলিকে কীভাবে জব্দ করা যায় !  অনুমানের ভিত্তিতে কিরণের ধারণা, কুহেলির বাড়ি ফিরতে আজ নির্ঘাত রাত হবে । সুতরাং কুহেলিকে কাছে পাওয়ার  একটা মওকা । সে এই সুবর্ণ  সুযোগ  হাত ছাড়া করতে রাজি  না । সঙ্গে কাউকে রাখেনি । একাই কুহেলিকে পাকড়াও করতে চায় ।  সন্ধ্যা থেকে  পাকুড় গাছটার নীচে তার অপেক্ষা  ।  চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার ! তার উপর মশার কামড় । তবুও সে নাছোড়বান্দা । যেভাবে হোক কুহেলিকে তার পাকড়ানো  চাই । কুহেলির তেজ ভাঙ্গতে কিরণ মরিয়া ।   
    স্থানীয় মানুষদের কাছে পাকুড় গাছের পাশ দিয়ে চলাটা ভীষণ ভীতির কারণ । অল্প বয়সের ছেলেমেয়েরা রাত্রিবেলায় ঐ পাকুড় গাছ দেখলেই শঙ্কিত হয়ে পড়ে ।   নীচ দিয়ে যাওয়ায় সময় অতঙ্কে থাকে । দুই একবার ভৌতিক কাণ্ডও ঘটেছে । তা ছাড়া ইতিপূর্বে বিপজ্জনক ঘটনাও ঘটেছে । সেসব ঘটনার কথা কুহেলি জানে । জানলে কীহবে ? আজ উপায় নেই । ঐ রাস্তা ধরে তাকে ফিরতে  হবে । কুহেলির সাইকেল ছুটছে । পাকুড় গাছ পার হওয়ার পর  প্রায় আধা কিলোমিটার সাইকেল চালালে কাঞ্চন নগরে ঢোকার  মোড় পড়বে । কাঞ্চন নগরের মোড় থেকে গ্রামের দিকে ঢুকলে বিপদের সম্ভাবনা কম । সুতরাং কাঞ্চন নগরের মোড় পর্যন্ত বিপদের ঝুঁকি ষোলোআনা । সেটা কুহেলি বিলক্ষণ জানে । রাস্তা সুনসান । লোকজন নেই । ভয়ে আতঙ্কে কুহেলি জেরবার । তার উপর সাইকেল জোরে চালানোর জন্য কায়িক পরিশ্রম যথেষ্ট । যার জন্য  কপালে ঘাম । বারংবার ভাবছে, বাবা থাকলে তাকে এই বিপদের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরতে হতো না । বাবা নিশ্চয় কুহেলিকে নিতে ভরতপুরে হাজির থাকতো ।
  কিছুটা দূর থেকে কালো অন্ধকারের ভিতর কুহেলি টের পেলো পাকুড় গাছ তলায় কেউ দাঁড়িয়ে রয়েছে । তার হাঁটাহাঁটির জন্য পাকুড় গাছের পাতার মচমচ শব্দ । পাকুড় গাছের নীচে পৌঁছানো মাত্র  কিরণ কুহেলির উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো । অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য,  সাইকেল থেকে কুহেলি পড়ে গিয়ে রাস্তার উপরে গড়াগড়ি । সেই অবস্থায় কিরণ কুহেলিকে জাপটে ধরলো । কোনোরকমে কুহেলি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে  কিরণের গালে জোরে এক থাপ্পড় ! চোখ গরম করে কুহেলি বলল, “বাঁচতে চাইলে রাস্তা ছাড় ! নতুবা তোকে আজ নোনাই নদীর জলে চুবিয়ে  মারবো । তুই আমার এখনও রণমূর্তি দেখিস্‌নি । অন্ধকারে ধাওয়া করার মজা টের পাইয়ে ছাড়বো !”  রীতিমতো কুহেলি হাঁপাচ্ছে । 
      কুহেলি কোনোরকমে নিজেকে ছাড়িয়ে পুনরায় সাইকেলে উঠলো । পেছন দিকে তাকিয়ে দেখে ক্যাবলাটা থাপ্পড় খেয়ে ভাবলেশহীনভাবে রাস্তার উপর  দাঁড়িয়ে  ।  কিছুটা যাওয়ার পর পেছনে তাকিয়ে দেখে ক্যাবলাটা দ্রুত গতিতে বাইক নিয়ে ছুটছে । কুহেলির সাইকেলও  খুব জোরে ছুটছে  । কিরণ খুব জোরে বাইক চালিয়ে কুহেলিকে  টপকে গেলো । কুহেলিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল, “নোনাই নদীতে কে কাকে চোবায় আমিও দেখবো ।“
   চিৎকার করে কুহেলি বলল, “যা, এখান থেকে পালা ! তোদের হিম্মত আমার জানা আছে । তোরা হচ্ছিস  লেজকাটা কুকুর । তোদের লজ্জা-স্মরণ বলে কিচ্ছু নেই । সুযোগ পেলেই গাঁয়ের নিরীহ মেয়েদের নিয়ে টানাটানি । আরে, সাহস থাকলে বে-পাড়ার মেয়ের পেছনে লেগে দেখ্‌ । মেরে গায়ের ছাল-চামড়া তুলে দেবে। নেমকহারাম কোথাকার !” 
        কিরণ রেগে গিয়ে বাইক থেকে নেমে কুহেলিকে  পুনরায় রাস্তায় দাঁড় করালো । কুহেলি এবার প্রচণ্ড মারমুখি । সে  সাইকেল দুই হাতে  তুলে  নিয়ে মাথার উপর ঘোরাতে শুরু করলো  । কিরণের দিকে তাকিয়ে কুহেলি বলল, “এগিয়ে আয়, তোকে আমি এখানেই শেষ করবো ।“ তারপর  কিরণের দিকে ধেয়ে গেলো । ইত্যবসরে কানাই কাকা এসে হাজির । কাকার দিকে তাকাতেই কিরণ চোখের পলকে সেখান থেকে বাইকে  উধাও ।  
                                                          ( চলবে )