বাঁকুড়া, আবদুল হাই:- আজ দশহরা। হিন্দু দিনপঞ্জি অনুযায়ী প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা দশমী তিথিতে হয় দশহরা। আজ পতিতপাবনী শান্তিদায়িনী গঙ্গার মর্ত্যে আগমনের দিন। স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল- এই তিন লোকে প্রবাহিত হয় গঙ্গা, তাই তার অপর নাম ত্রিলোকপথগামিনী। আবার জীবিত ও মৃত সব জীবেরই যাত্রাপথে অবস্থিত বলে তার আরেক নাম তীর্থ। জন্ম-জন্মান্তর থেকে হিন্দুধর্মের এই বিশ্বাস যে, গঙ্গায় একটা ডুব দিলেই দশজন্মের পাপ থেকে মুক্তি। ‘দশহরা’ অর্থাৎ ‘দশ জন্মের দোষ বা বিষ হরণ’, আর এই দোষ বা বিষ হরণ হয় গঙ্গাস্নান করলে। দশটি ফল, দশটি ফুল, দশটি প্রদীপ হল এর উপচার। কিন্তু রাঢ়ের জেলাগুলোতে বিশেষ করে বাঁকুড়া জেলায় আজ মনসাপূজা হয় ধূমধাম করে। কেন? বহুদিন আগে থেকেই এ প্রথা চলে আসছে। গঙ্গা যেমন সর্বপাপহারী, বিষহারী; মনসাও তেমনি বিষহরি। এছাড়াও মনসা হলেন গঙ্গার কন্যা। এটি বাঁকুড়া জেলায় মূলতঃ কৃষিপর্বের সূচনার উৎসব বলা যেতে পারে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের কালবৈশাখী বৃষ্টিতে শুরু হত আউশ ধানের চাষ, আমন ধানের বীজতলা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে রোহিনী পরবে। চাষীদের মাঠে-ঘাটে থাকতে হবে সারাদিন। কোথায় কে ফণা তুলে দাঁড়াবেন বা নীরব ঘাতক হবেন, জানা নেই। তাই মা মনসাকে সন্তুষ্ট করে তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা যাতে চাষের কাজে ব্যাঘাত না সৃষ্টি করেন, অকারণ প্রাণহানি যাতে না হয় তারই অর্চনা দশহরা। আজ থেকেই শুরু হয় মনসা পূজার কাল। এরপর আসে নাগপঞ্চমী। ভাদ্র মাসের পঞ্চমী পর্যন্ত মনসাপূজার বিধি আছে। আজকের দিনে কেলেকঁড়া নামে ফল অল্প দুধের সঙ্গে মিশিয়ে চিবোলে, সারা বছর সাপের কামড়ে মরার ভয় থাকে না। আজ বৃষ্টি হলে নাকি সাপের বিষ ধুয়ে যায়, এমনই বিশ্বাস। বাঁকুড়া জেলার প্রায় সব জায়গায় মনসাপূজা হলেও ইন্দাস,জয়পুর, কোতুলপুর, পাত্রসায়ের, সিমলাপাল ও বিষ্ণুপুর থানায় মনসার আধিপত্য বেশি। ইন্দাসের দশহারা পুজোল চিত্র উঠে এল আমাদের ক্যামেরায়।
বাঁকুড়া থেকে আবদুল হাই এর বিশেষ প্রতিবেদন