অভাব অনটন যে যোগ্যদের কাছে কোন বাধাই নয় তা আরেকবার প্রমান করে দিয়েছে কুমারগঞ্জ ব্লকের গোপালগঞ্জ আর এন হাইস্কুলের দুই ছাত্রী শ্রাবনী দাসরা।

0
277

বালুরঘাট, নিজস্ব সংবাদদাতা:-  নামে যেমন মিল তেমনি মিল পদবির ও। পারিবারিক হাল ও এক। মিল শুধু এখানেই থেমে থাকে না। দুজনেই এক স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক দিয়ে ভাল নম্বর নিয়ে পাশ করেছে। অভাব তাদের দুজনের পরিবারের নিত্য সংগী। আরো মিল হলো একজন যদিও বা নিজেদের মাটির বাড়িতে কোনরকমে দিন কাটান। অন্য জন পলিথিনের ছাউনি দেওয়া ঘরে ভাড়ায় থাকতে বাধ্য হয় পরিবারের পরিজনদের সাথে। তবে এত সব অভাব অনটন যে যোগ্যদের কাছে কোন বাধা বাধাই নয়। তা আরেকবার প্রমান করে দিয়েছে কুমারগঞ্জ ব্লকের গোপালগঞ্জ আর এন হাইস্কুলের দুই ছাত্রী শ্রাবনী দাসরা। দুই ছাত্রীই সমস্ত প্রতিকুলতা জয় করে উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল নম্বর নিয়ে পাশ করে ভবিষ্যৎ তে অধ্যপনা করার স্বপ্নে বিভোর হলেও বাধা সেই আর্থিক প্রতিবন্ধকতা।

কুমারগঞ্জের বিশ্বনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা বিকাশ দাসের মেয়ে শ্রাবনী দাস এবার উচ্চমাধ্যমিকে ৪৮০ পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে। বাড়ি থেকে স্কুলের দুরত্ব প্রায় পাচ কিমি। শ্রাবনীর রয়েছে দুই ভাই।কিন্তু তারা পরের জমিতে কৃষিকাজ করে বাবাকে সাহায্য করে কোনমতে। প্রতিদিন সেই দুরত্ব অতিক্রম করে স্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে পেশায় রাজমিস্ত্রি বিকাশ দাসের মেয়ে শ্রাবনী দাস উচ্চমাধ্যমিকে বাংলায় পেয়েছে ৯৬, ইংরেজীতে ৯৮, ভুগোলে ৮৭, দর্শনে ৯৮, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৯৫, ওয়ার্ক এডুকেশনে ৯৭ পেয়েছে। শ্রাবনী জানায় সে ইংরেজীতে অনার্স নিয়ে পড়তে চায় সে। কিন্তু তার সেই পড়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় আর্থিক অসংগতি।

অন্যদিকে গোপালগঞ্জের জনতিহার গ্রামের পেশায় বাশের তৈরী সামগ্রী হাটে বাজারে বিক্রি করে কোনরকমে পরিবার চালানো বাসিন্দা বাবলু দাশের মেয়ে শ্রাবনী দাস এবারের উচ্চমাধ্যমিকে ৪৭০ পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে পাড়া প্রতিবেশি থেকে স্কুলের শিক্ষক মহলকে। শ্রাবনী বাংলায় পেয়েছে ৮০ ইংরেজীতে ৯০, ইতিহাসে ৯৪, দর্শনে ৯৮, সংষ্কৃতে ৯৪, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৯৪ পেয়েছে। দুই বোন তারা, ছোট বোন ক্লাস থ্রিতে পড়ে। নিজে তার পড়াশোনার খরচ চালাতে বাবার সাথে হাত লাগিয়ে বাশের সামগ্রী পর্যন্ত তৈরী করে অতি কষ্টে উচ্চমাধ্যমিকে এই সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হলেও তার মাথায় একমাত্র চিন্তা কি করে চাকরি বাকরির ব্যবস্থ্যার মধ্যমে নিজেকে উপার্জনশীল করে তুলে তার পরিবারের পাশে দাড়ানোর। কিন্তু চোখে ভবিষ্যৎ তে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে পড়ে শিক্ষকতা করার একরাশ স্বপ্ন। কিন্তু বাধা সেই আর্থিক প্রতিবন্ধকতা। তাই দুই শ্রাবনীই এখন তাকিয়ে সরকারি কোন সাহায্যের আশায়।এই সময়ে যদি সরকার তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় তবে তারা যেমন নিজেদের পড়াশোনা করে নিজেদের স্বপ্ন পুরন করার পাশাপাশি তাদের পরিবারের পাশে দাড়াতে পারে, এই দিকে তাকিয়ে দুই কৃতি ছাত্রী ও তাদের পরিবার।

যদিও গোপালগঞ্জ আর এন হাই স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক পুলকেশ চৌধুরী জানিয়েছেন তাদের স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করা এই দুই কৃতি ছাত্রীর উচ্চতর পড়াশোনা জন্য তারা নানা ভাবে সাহায্য করবার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন। পাশাপাশি তারা যাতে সরকারি স্কলাশীপ পায় তার জন্য ও উদ্যোগী হয়েছে স্কুল কর্তিপক্ষ বলে তিনি জানান। তারাও চান এই দুই আর্থিক প্রতিবন্ধকতা পরিবার থেকে উঠে আসা ছাত্রী দুটি যাতে তাদের উচ্চ শিক্ষা চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।