পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে তৃণমূল কংগ্রেসে বড়সড় ভাঙ্গন মানিকচকে।

0
192

নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা:–পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে শাসকদলের ভোটের সমীকরণে ধাক্কা।পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে তৃণমূল কংগ্রেসে বড়সড় ভাঙ্গন মানিকচকে। তৃণমূল ছেড়ে এক ঝাঁক মানিকচকের বিভিন্ন এলাকার তাবড় তাবড় তৃণমূলের নেতারা যোগ দিলেন কংগ্রেসে। ফলে মানিকচকে ভোটের সমীকরণে বড়সড় রদবদল হতে পারে। মালদা জেলা পরিষদের তৃণমূলের বর্তমান সদস্য, তৃণমূল পরিচালিত মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ, তৃণমূলের প্রাক্তন প্রধান, বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্য সহ প্রায় ৪০০ জন তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসের যোগদান করেন। সোমবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ কংগ্রেসের মানিকচকের দলীয় কার্যালয়ে মানিকচকের প্রাক্তন বিধায়ক তথা মালদা জেলা কংগ্রেসের নেতা মোত্তাকিন আলমের নেতৃত্বে এই যোগদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেন তৃণমূলের প্রথম সারির নেতা তথা এনায়েতপুর এ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন। যোগদান করেন মোয়াজ্জেম হোসেনের সহধর্মিনী বর্তমান মালদা জেলা পরিষদের সদস্যা সাবিনা ইয়াসমিন। মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের কর্মাধ্যক্ষ আশারুজ্জামান, বিকাশ মণ্ডল তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগদান করেন। এই দিন কংগ্রেসে যোগদান করেন তৃণমূল পরিচালিত গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান সীমা বিবি, চৌকি মির্জাদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান মোস্তাক আলম। এছাড়াও মানিকচকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের টিকিটৈ পাশ করা পঞ্চায়েত সদস্যরা। মানিকচকের এই যোগদান কর্মসূচিতে কংগ্রেসে যোগ দেন যুব তৃণমূল কংগ্রেসের মালদা জেলার সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিকী। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকার তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা ও এই কর্মসূচির মাধ্যমে কংগ্রেসে যোগদান করেন। শাসকদলের অপরিসীম দুর্নীতির দিকে আঙুল তুলে তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসের যোগদানের যুক্তির দাবি করলেও শাসক দলের তরফে দাবি, তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিট মিলবে না জেনেই টিকিটের লোভে কংগ্রেসে যোগদান করেছেন। এই বিষয়ে মানিকচকের প্রাক্তন বিধায়ক মোত্তাকীন আলমের কটাক্ষ তৃণমূল কংগ্রেসের ক্যান্সার হয়েছে। তাই তৃণমূল ছেড়ে সবাই পালাচ্ছে।
মানিকচকের এনায়েতপুরের বাসিন্দা মোয়াজ্জেম হোসেন। মালদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি পদে দল পরিচালনা করেছেন। দীর্ঘদিন ব্লক তৃণমূল কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। নির্বাচনে জিতে মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতি সামলেছেন দীর্ঘদিন। গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় করোনায় আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র। সাবিত্রী মিত্রের অবর্তমানে ভোট প্রচারে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে দেখা গেছে মোয়াজ্জেম হোসেনকে। মোয়াজ্জেন হোসেনের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বর্তমানে মালদা জেলা পরিষদের সদস্যা। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বড়সড়ো ব্যবধানে তার নিকটতম কংগ্রেসের প্রার্থীকে পরাজিত করেছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন। সোমবার মানিকচকে কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয়ে সস্ত্রীক মোয়াজ্জেম হোসেন তার অসংখ্য অনুগামী নিয়ে কংগ্রেসে যোগদান করেন। কেন তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগদান এই প্রশ্নের উত্তরে অভিমানের সুর মোয়াজ্জেম হোসেনের গলায়। মোয়াজ্জেম হোসেনের দাবি, আমাকে দল তাড়িয়ে দেয়নি বা লিখিতভাবে সাসপেন্ডও করেনি। তবে আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। আমি কোন দল বিরোধী কাজ করিনি। তৃণমূলের রাজ্য কমিটির ঘোষণা মতে মানিকচক ব্লক তৃণমূল কমিটির সভাপতি হন দেবব্রত ঘোষ। আমি সভাপতি দেবব্রত ঘোষের সঙ্গে দলের কাজ পরিচালনা করতে শুরু করি। এতেই আমার দলের নেতাদের গোসা হয়। পরবর্তীতে ব্লক সভাপতির পরিবর্তন হয়। আমি সেই সভাপতির সঙ্গেও কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে ইচ্ছাকৃতভাবে বসিয়ে রাখা হলো। পরবর্তীতে তৃণমূলের ব্লক কমিটিতে নয় এমনকি অঞ্চল কমিটিতেও আমাকে রাখা হলো না। আমার স্ত্রী জেলা পরিষদের বর্তমান সদস্যা হওয়া সত্বেও তাকে কোন পার্টির মিটিং মিছিলে ডাকা হয়নি। কোনরকম কারণ ছাড়াই ষড়যন্ত্র করে আমাদের একপ্রকার পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাই শেষমেষ তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং দলের নেতৃত্ব আর চাইলে কংগ্রেসের টিকিটে জেলা পরিষদের আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিত করতে চাই। তবে কার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন তিনি এই প্রশ্নের উত্তরে কারো নাম না উল্লেখ করলেও তিনি যে বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র ও তার জামাতা সোমদীপ সরকারের গোসার শিকার তা বুঝিয়ে দিয়েছেন।
তবে এই যোগদানকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্বরা। মানিকচক ব্লক তৃণমূল সভাপতি মহাফিজুর রহমান বলেন, যারা আজ তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসের যোগ দিয়েছেন আসলে তারা লোভী মানুষ। তাদের পদের লোভ প্রচন্ড। তারা বুঝতে পেরেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিট পাওয়া যাবে না। তাই টিকিট পাওয়ার লোভে তারা কংগ্রেসের যোগ দিয়েছেন। তবে এতে দলের কোন ক্ষতি হবে না।
এই বিষয়ে মানিকচকের প্রাক্তন বিধায়ক মোত্তাকিন আলম কটাক্ষ করে বলেন, তৃণমূল দলটা ভালো মানুষের নয়। তাই যারা ভালো মানুষ তারা তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগদান করছেন। তিনি আরো কটাক্ষ করে বলেন, আসলে তৃণমূল কংগ্রেসে ক্যান্সার হয়েছে। তাই সকলে তৃণমূল দল ছেড়ে পালাচ্ছে।