পূর্ব মেদিনীপুর-তমলুক, নিজস্ব সংবাদদাতা:- কিছু মানুষ আছেন সমাজে যাদের কাছে বয়সটা জাস্ট সংখ্যা মাত্র! যে বয়সে স্বাভাবিক জীবন যাপন করাটা আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের কাছে মুশকিল হয়ে ওঠে। নিতে হয় অন্যজনের সাহায্য। সেই বয়সেই গ্রামের সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিপদ-আপদে দেখা মিলে ৯২ বছরের এই বৃদ্ধার। যত সামান্য পয়সার বিনিময়ে ৪৫ বছর ধরে তিনি গ্রামের মানুষকে দূরের শহরে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাওয়া হোক। আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হোক সবেতেই তাঁর উপর অগাধ ভরসা করেন সাধারণ মানুষ।
৯১ বছরের বৃদ্ধা গৌরী দেবী। তমলুকের চিকিৎসক মহলের তার নাম হাওড়া জেলার মাসি। সরকারি বেসর কারি হাসপাতালে চিকিৎসকের পাশাপাশি বিভিন্ন ঔষধ দোকান এবং প্যাথলজি সেন্টারে ওই একটাই তার পরিচয়। আর এই পরিচয় শুধুমাত্র তার কাজ দিয়ে। বাড়ি হাওড়া জেলার শ্যামপুর থানার অন্তর্গত রূপনারায়ণ নদের তীরবর্তী গ্রামে। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে এই এলাকার আশেপাশের ১০-১২ টি গ্রামের সাধারণ মানুষ চিকিৎসার জন্য নদ পেরিয়ে তমলুক শহরে আসেন। আর চিকিৎসা করাতে এলেই তারাই খোঁজ করে এই মাসিকে। কারণ চিকিৎসা সংক্রান্ত বিপদে আপদে তাদের ভরসা মাসিক ওপরেই।
গৌরী দেবী নিজে জানান, হাওড়া জেলার রূপনারায়ণ নদের তীরবর্তী মানুষের চিকিৎসা সংক্রান্ত পাশে আছেন দীর্ঘ ৪৫ বছর। প্রতিদিন রূপনারায়ন নদী পেরিয়ে তমলুক শহরে আসেন তিনি। ডাক্তার দেখান হোক বা হাসপাতালে ভর্তি করানো সবেতেই ভরসা করেন গ্রামের মানুষেরা। সামান্য পয়সার বিনিময়ে এই কাজ দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তিনি করে আসছেন। ঝড় জল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে এই প্রতিদিন নৌকোতে করে রূপনারায়ণ নদ পেরিয়ে তমলুক শহরে আসেন। তিনি প্রথম তমলুক শহরে আসেন স্বামীর চিকিৎসার জন্য। তারপর থেকেই ডাক্তারি মহলে পরিচয় গড়ে তোলেন। সেই থেকে শুরু, বর্তমানেও প্রতিদিন রূপনারায়ণ নদ নৌকা করে পার হয়ে রোগী নিয়ে তমলুক শহরে আসেন।
গৌরী দেবী আরো জানান বর্তমানে তার ছেলে বৌমা, নাতি-নাত বউ নিয়ে ভরা সংসার। বয়সের কারণে পরিবারের লোকজন এই কাজ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু তিনি এই সামান্য পয়সা নয় এই কাজকে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়া মনে করেন। তাই প্রায় ১০০ বছরের দোর গোড়ায় এসেও বিশ্রাম নেওয়ার কথা ভাবেন না। তিনি বলেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মানুষের সঙ্গে থাকতে চাই। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে এই মানুষের সঙ্গে থাকাটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।