তাঁত মানেই শান্তিপুর, কিন্তু সেই তাঁত শিল্পের আজ রুগ্ন দশা, তাঁতিদের অবস্থা করুন।

0
172

নদীয়া, নিজস্ব সংবাদদাতা:- তাঁত মানেই শান্তিপুর, শুধু এ রাজ্যেই নয় ওপার বাংলা সহ সারাদেশেই সমানভাবে সমাদৃত শান্তিপুরের তাঁত। কিন্তু সেই তাঁত শিল্পের আজ রুগ্ন দশা, তাঁতিদের অবস্থা করুন। তারা জানাচ্ছে বছরে বাকি দিনগুলিতে সেই সেই অর্থে হস্ত চালিত তাঁতের কথা ভাবেন না বেশিরভাগ মানুষেরাই। সরকার থেকে শিল্পের একাধিক প্রকল্পকে ত্বরান্বিত করা হলেও তা কেবলমাত্র জ্যাকার্ড, পাওয়ারলুমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

তার কারণ, আগেকার দিনে তাঁতের একটি জামদানি শাড়ি তৈরি করতে সময় লেগে যেত প্রায় ছ মাস। যা পারলুমের সাহায্যে এখন দিনে চারটি করে শাড়ি বুনুন করা সম্ভব। তবে পাওয়ার লুমের শাড়ি এবং হস্তচালিত তাঁতের শাড়ির মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। তার প্রধান কারণ বর্তমানে সুরাট থেকে যেই সুতো আসছে তা 100% সুতির নয় থাকে কিছুটা পরিমাণে ভেজাল মেশানো বলেই জানালেন তাঁতিরা। সেই কারণে শাড়ির গুণগত মানেও ধাক্কা খায়।

ঐতিহ্যবাহী শান্তিপুরের ব্যবসাদার এবং চাকুরিজীবীদের কথা বাদ দিলে কমবেশি প্রায় সকলেই এখনো তাঁত শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। তবে সুতোর দাম বাড়লেও বাড়েনি তাঁতিদের মজুরি সেই অর্থে। ফলে লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না শিল্পীরা। আর সেই কারণেই নতুন প্রজন্ম বেশিরভাগই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এই শিল্পকর্ম থেকে। এমনকি অনেক শিল্পী রাই দাঁত ছেড়ে বিকল্প আয়েরও কথা ভাবছেন। কেউ কেউ জীবিকার জন্যে পারি দিয়েছেন ভিন রাজ্যেও।

এই প্রসঙ্গে শান্তিপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সুব্রত ঘোষ জানান, ” কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয় তাঁতীদের জন্য, কিন্তু সেই উদ্যোগটি ফলপ্রসূত বাস্তবায়িত হয় না। সেই বাস্তবায়িত করতে গেলে এখানে যারা এক্সপার্ট রয়েছেন তাদের সঙ্গে আলোচনার মধ্যে দিয়ে কিভাবে প্রকৃত তাঁতিদের মান উন্নয়ন ঘটনা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ বর্তমানে তাঁতিদের যা অবস্থা তার ফলে নতুন প্রজন্ম এই পেশা থেকে বিমুখ হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন”।
পূর্বাশা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দেখেছি যে যিনি শিল্পী তিনি তার শিল্পকলা ছেড়ে দিয়ে যদি তার মাথায় চিন্তা থাকে শাড়িটি তৈরি করার পর কিভাবে বিক্রি করব কিভাবে সেটি প্রমোশন করব তাহলে তার মধ্যে থেকে সেই শিল্পকলাটি সঠিকভাবে প্রকাশ পায় না। শিল্পীকে তার শুধুমাত্র শিল্প কর্ম করতেই দেওয়া উচিত। একটি বিশেষজ্ঞ দল তৈরি করা দরকার যারা শিল্পীর এই শিল্পকলা কে একটি ব্র্যান্ডের আকার দেবেন এবং সেটিকে মার্কেটিং এবং নেটওয়ার্কিং এ সাহায্য করবে। এমন একটি ব্র্যান্ড তৈরি করতে হবে যেখানে মানুষ শুধুমাত্র শান্তিপুরে আসবেন শান্তিপুরের তাঁতের শাড়ি কিনতেই। শান্তিপুরের শাড়ি র এখনো প্রচুর পরিমাণে চাহিদা রয়েছে শুধু মাঝখানে যেই ফাঁক টুকু তৈরি হয়েছে সেই ফাঁক টুকুকে বিশেষজ্ঞ দ্বারা পূরণ করতে হবে।”

দীর্ঘদিনের হস্তচলিত তাঁতের সঙ্গে যুক্ত হরিপদ বসাক নামে এক তাঁত শিল্পী জানান, “এটি হচ্ছে আমাদের পরম্পরা গত পেশা। ছোটবেলা থেকেই আমরা তাঁতের শাড়ির সঙ্গে যুক্ত। তবে বর্তমানে শান্তিপুর তাঁতের শাড়ির ক্ষতি হওয়ার প্রধান কারণ পাওয়ারলুম। তার কারণ পাওয়ার লুমের সঙ্গে কখনোই হ্যান্ডলুমের প্রতিযোগিতা সম্ভব নয়। ভন্ড মেয়ে যেখানে একটি শাড়ি বোনা হচ্ছে পাওয়ারলুমে ওই সময় পাঁচ থেকে সাতটি শাড়ি বোনা হচ্ছে। ফলে খরচ কমে যাচ্ছে শাড়ি উৎপাদনে। যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই শাড়ির দামও কমে যাচ্ছে। পাওয়ার লুমের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হস্ত চালিত দাদীদেরও তাদের হ্যান্ডলুমের শাড়ি বিক্রি করতে হচ্ছে কম দামে যার ফলে ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাঁতিরা।


সুতরাং বলা যেতে পারে পাওয়ার লুমের শক্তির কাছে হস্ত চালিত তা ক্রমশই হেরে যাচ্ছে। যদিও অনেকেরই দাবি এখনো পর্যন্ত হস্তচালিত তাঁতের শাড়ির যেই পরিমাণে চাহিদা রয়েছে তাও সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। সঠিকভাবে হস্তচালিত তাঁতের শাড়ির ব্র্যান্ডিং এবং মার্কেটিং করা হলে এখনও পর্যন্ত এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।