উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বিজেপি প্রার্থীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হলেও, শেষ পর্যন্ত গঠন করা গেল না নদিয়ার দত্তপুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড।

0
136

নদীয়া, নিজস্ব সংবাদদাতা:- উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বিজেপি প্রার্থীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হলেও, শেষ পর্যন্ত গঠন করা গেল না নদিয়ার দত্তপুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড। তৃণমূল ও বিজেপির কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক গন্ডগোল। ইট বৃষ্টির পাশাপাশি চলল গুলি। প্রাণভয়ে পালাতে দেখা গেল তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক তথা বর্তমান জেলা পরিষদ আসনে জয়ী প্রার্থী সমীর কুমার পোদ্দারকে। ইটের ঘায়ে গুরুতর আহত দু’জন তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিজেপির মনোনীত প্রার্থীকেই প্রধান করতে হবে সেই দাবিতে রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ বিজেপির। ৯ আগস্ট উচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল নদিয়ার রানাঘাট ২ নম্বর ব্লকের দত্তপুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত সহ শান্তিপুর ব্লকের বাবলা, বাগআচড়া, ফুলিয়া টাউনশিপ, গয়েশপুর এবং আরবান্দী ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের জয়ী বিজেপির প্রার্থীদের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার। সেই মোতাবেক রানাঘাট ২ নম্বর ব্লকের দত্তফুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে ১০ তারিখ ছিল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচনের দিন।
৩০ টি আসন বেষ্টিত দত্তপুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে এবারের নির্বাচনে ১৪ টি আসনে জয়লাভ করে তৃণমূল কংগ্রেস, ১৪ টি আসনে বিজেপি এবং ২টি আসনে জয়লাভ করে সিপিআইএম। বোর্ড গঠনের সময় ভোটাভুটিতে সিপিআইএমের জয়ী ২ প্রার্থী তৃণমূল ও বিজেপিকে সমর্থন করে। সেই হিসেবে ফলাফল দাঁড়ায় দুই দলে ১৫ টি করে আসন। দুপক্ষেই সমান সমান হয়ে যাওয়ায়, পুনরায় শুরু হয় ভোটাভুটি প্রক্রিয়া।

বিজেপির দাবি, ভোটাভুটিতে তাদের মনোনীত প্রার্থী ধীরেন্দ্রনাথ মিস্ত্রী প্রধান পদে নির্বাচিত হন। সেই সময়ই বাধা দান করে তৃণমূলের জয়ী প্রার্থীরা। গন্ডগোল চরমে উঠলে ভোটাভুটি প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়।
এই খবর জানাজানি হতেই পঞ্চায়েতের বাইরে উপস্থিত দুই পক্ষের কর্মী সমর্থকরা নিজেদের মধ্যে প্রথমে ইটবৃষ্টি এবং পরে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে বলে অভিযোগ।

তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন রানাঘাট উত্তর-পূর্বের বিধায়ক তথা বর্তমানে জেলা পরিষদে জয়ী প্রার্থী সমীর কুমার পোদ্দারকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয় বলে তিনি দাবি করেন।

যদিও বিজেপির রানাঘাট উত্তর-পূর্বের বিধায়ক অসীম বিশ্বাস বলেন, তাদের কর্মী সমর্থকদের লক্ষ্য করে তৃণমূল কংগ্রেসের দুষ্কৃতীরা ছয় রাউন্ড গুলি চালায়।
দুই পক্ষের মধ্যে চলে ব্যাপক ইট বৃষ্টি। ইটের আঘাতে গুরুতর জখম হন তৃণমূল কংগ্রেসের দুজন সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। প্রথমে তাদের দত্তপুলিয়ার প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, এরপর তাদের রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে নামানো হয় ব্যাপক পুলিশবাহিনী। বন্ধ হয়ে যায় পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন।

যদিও রানাঘাট ২ নম্বর ব্লকের বিডিও খোকন বর্মন বলেন, ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রধান, উপপ্রধান নির্বাচনের সময় দুই পক্ষের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তারফলে ব্যাহত হয় বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া। যদিও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আগামী নির্দিষ্ট দিনে পুনরায় গঠন করা হবে পঞ্চায়েতের বোর্ড।

বিজেপির মনোনীত প্রার্থীকে প্রধান হিসেবে মেনে নিতে হবে এই দাবিতে অনড় থেকে দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা রানাঘাট-কৃষ্ণনগরগামী রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির কর্মী সমর্থকরা। তাদের নেতৃত্ব দেন রানাঘাট উত্তর-পূর্বের বিধায়ক অসীম বিশ্বাস। তাঁর দাবি, যদি তাদের মনোনীত প্রার্থীকে প্রধান না করা হয়, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে পুনরায় রাস্তা অবরোধ অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য চালিয়ে যাবে বিজেপির কর্মী সমর্থকরা।